বাংলাদেশ বড় আকারের যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, নৌবাহিনীকে একটি কার্যকর ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জাতির পিতার পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।বুধবার দুপুরে খুলনায় নৌ ঘাঁটি বানৌজা তিতুমীরের নেভাল বার্থে যুদ্ধজাহাজ দুর্গম ও নিশান এবং সাবমেরিন টাগ পশুর ও হালদার আনুষ্ঠানিক কমিশনিং অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।রাষ্ট্রপতি বলেন, ইতোমধ্যে নৌবহরে দুটি আধুনিক সাবমেরিন ও উল্লেখযোগ্য সংখক যুদ্ধজাহাজ, এয়ারক্রাফট এবং আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শক্তি বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একটি নব অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। চীনে আরও দুটি করভেট (যুদ্ধ জাহাজ) নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

এদিন রাষ্ট্রপতি খুলনাস্থ নৌ ঘাঁটি বানৌজা তিতুমীরে এসে পৌঁছালে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ওএসপি, বিসিজিএম, এনডিসি, পিএসসি এবং কমডোর কমান্ডিং খুলনার কমডোর সামসুল আলম (জি), এনইউপি, এনডিইউ, পিএসসি, বিএন তাকে অভ্যর্থনা জানান।কমিশনিং অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নৌ সদস্যদের আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।রাষ্ট্রপতি বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাই ডকে ফ্রিগেট নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ফলে খুলনা শিপইয়ার্ডসহ অন্যান্য শিপইয়ার্ডে দেশীয় প্রযুক্তিতে জাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে এ খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। ভবিষ্যতে জাহাজ রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পটুয়াখালীর রাবনাবাদ এলাকায় ও ঢাকার খিলক্ষেতে পূর্ণাঙ্গ নৌ ঘাঁটি এবং চট্টগ্রামের পেকুয়ায় একটি সাবমেরিন ঘাঁটির নির্মাণ কাযক্রম চলমান রয়েছে, বলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি আরও বলেন, ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে প্রথম ধাপ ছিলো নৌবাহিনীর জন্য আকাশ সীমা উন্মোচন। বর্তমান সরকারের আমলে ২টি হেলিকপ্টার ও ২টি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট নিয়ে গঠিত হয় নেভাল এভিয়েশন। নেভাল এভিয়েশনে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যাধুনিক সমর ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দুটি হেলিকপ্টার এবং মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট শিগগিরিই যুক্ত হবে। যা সমুদ্র সম্পদ এবং সমুদ্রসীমা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা বিধান অপরিহার্য মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ক্রমাগত সম্পদ আহরণের ফলে স্থলভাগের সম্পদ সীমিত হয়ে পড়ায় সারা বিশ্ব আজ সমুদ্র সম্পদের দিকে নজর দিয়েছে। বাংলাদেশের বিশাল সামুদ্রিক এলাকায় আমাদের জন্য রয়েছে মৎস্য, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ পদার্থসহ মূল্যবান সম্পদ। এছাড়া ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় প্রায় তিন কোটি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে। বহির্বিশ্বের সাথে দেশের বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি সমুদ্রপথেই পরিচালিত হয়। এ অবস্থায় আমাদের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা বিধান অপরিহার্য।মালেশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, কারিগরিভাবে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে এই দুই দেশ আমাদের নৌবাহিনীর নাবিকদের দক্ষ করে তুলেছে। যুদ্ধজাহাজ তৈরি করতে সক্ষম হওয়ায় তিনি খুলনা শিপইয়ার্ডকেও ধন্যবাদ জানান। সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখা, চোরাচালান ও জলদস্যু দমন, জাহাজ চলাচলে ব্যবহৃত সমুদ্রপথের নিরাপত্তা বিধানে নৌবাহিনীকে সদা সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন রাষ্ট্রপতি।অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, সেনা ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। শিপইয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি যুদ্ধ জাহাজের দৈর্ঘ্য ৬৪ দশমিক ২ মিটার, প্রস্থ ৯ মিটার ও গভীরতা ৫ দশমিক ২৫ মিটার। জাহাজ দুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। এ দুটি জাহাজ খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি। ২৫ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম জাহাজ দুটিতে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র রয়েছে। শত্রুর সাবমেরিন শনাক্ত ও বিধ্বংসী টর্পেডো নিক্ষেপ করতেও সক্ষম জাহাজ দুটি। স্বাভাবিক সময়ে সমুদ্রসীমার নিরাপত্তায় ব্যবহৃত হবে এই জাহাজ। জাহাজ দুটির লাইফ টাইম ২৫ বছর। প্রতিটি জাহাজে ৭৬ দশমিক ২ মিলিমিটারের একটি গান, ৩০ মিলিমিটারের একটি গান ও ২টি করে টর্পোডো লাঞ্চার রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ২টি নেভিগেশন রাডার, একটি এয়ার অ্যান্ড সারফেস রাডার, একটি ট্র্যাকিং রাডার ও একটি সোনার। খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত হালদা ও পশুর নামের টাগবোটের দৈর্ঘ্য ৩২ মিটার। এই টাগবোট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪২ কোটি টাকা।