রাজধানীর পল্লবী থেকে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। র‌্যাবের দাবি তারা মাদক পাচারের আর্ন্তজাতিক চক্রের সঙ্গে জড়িত। মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।

র‌্যাব জানায়, এই চক্রটি বাজার থেকে জে-কেটামিন নামে একটি ইঞ্জেকশন সংগ্রহ করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তাপ দিয়ে তা তরল করে। পরে সেই তরল ঠাণ্ডা করে তোয়ালেতে স্প্রে করে সেই তোয়ালে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিদেশে পাঠায়। তাদের কাছ থেকে মাদক মেশানো বেশ কিছু তোয়ালে উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব তার নিজস্ব গোয়েন্দা তৎপরতায় জানতে পারে যে, একটি আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্র অভিনব কৌশলে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে মাদকদ্রব্য চোরাচালান করে আসছে। প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব তার গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল ডিএমপি, ঢাকার অন্তর্গত রুপনগর থানাধীন পল্লবী দ্বিতীয় পর্বের ইস্টার্ন হাউজিং এর ব্লক-সি,বাড়ী নং-১৮৭ এর সাত তলার একটি ফ্লাটে অবস্থান নিয়ে ২৩ অক্টোবর ২০১৭ তারিখ ১৭০৫ ঘটিকার সময় উক্ত বাড়ীর সাততলার পশ্চিম পাশের ফ্লাটে অভিযান পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের ০৩ জন সক্রিয় সদস্য (১) মীর মঞ্জুর মোর্শেদ (সানী), জেলাঃ জয়পুরহাট (২) মোঃ মাহমুদুল হাসান (চয়ন), জেলাঃ লালমনিরহাট (৩) মোঃ হাবিবুল্লাহ খান, জেলাঃ সিরাজগঞ্জ’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাদের নিকট হতে ১৪৫টি জি কেটামিন লেভেলযুক্ত বোতলে রক্ষিত প্রতি বোতলে ১০ মিঃ লিটার জি কেটামিন সর্বমোট ১.৪৫০ লিটার জি কেটামিন, ৩৪টি সাদা তোয়ালে প্রতিটি তোয়ালেতে ১০০ গ্রাম জি কেটামিন সর্বমোট ৩.৪০০ কেজি জি কেটামিন, ১৮০টি জি কেটামিনের খালি বোতল, ০৫টি তোয়ালে ও অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ৩৪টি কিটোমিন যুক্ত তোয়ালের মধ্যে ১৮টি কিটোমিন যুক্ত তোয়ালে একটি কুরিয়ার সার্ভিস হতে উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত মীর মঞ্জুর মোর্শেদ (সানী) পেশায় একজন খামার ব্যবসায়ী। সে দীর্ঘ প্রায় ৬/৭ বৎসর লন্ডনে থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে। অন্যদিকে গ্রেফতারকৃত মোঃ মাহমুদুল হাসান (চয়ন) এলএলবি অনার্স এবং গ্রেফতারকৃত মোঃ হাবিবুল্লাহ খান এমবিএ সম্পন্ন করে উভয়ে একটি ব্যাংকের মার্কেটিং শাখায় কর্মরত রয়েছে। তারা স্ব স্ব ব্যবসা ও চাকুরীর অন্তরালে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।

ধৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, তারা গত ৪/৫ মাস যাবত বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্পেনে কেটোমিন মাদক পাচারের লক্ষে সংঘবদ্ধ হয়েছে। গ্রেফতারকৃত মীর মঞ্জুর মোর্শেদ (সানী) এর ভাই মাহাদী মঞ্জুর মান্না দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর যাবত স্পেনে অবস্থান করছে। সে স্পেনে ইন্টারনেট কলিং ব্যবসার সাথে যুক্ত। ব্যবসায়িক সূত্রে তার সাথে স্পেনের এক নাগরিক আরামডো গঞ্জালিও এর সাথে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে দুজন একত্রে বাংলাদেশ হতে কিটোমিন স্পেনে পাচার করার পরিকল্পনা করে। এলক্ষে মাহাদী মঞ্জুর মান্না ০৪ মাস পূর্বে প্রাথমিক বাজার যাচাই করতে বাংলাদেশ আসে এবং ফেরত যেয়ে উক্ত স্পেনের নাগরিককে বিস্তারিত জ্ঞাত করে। পরবর্তীতে ২ মাস পূর্বে মীর মঞ্জুর মোর্শেদ (সানী) এর ভাই মাহাদী মঞ্জুর মান্নাসহ উক্ত স্পেনের নাগরিক বাংলাদেশে এসে গ্রেফতারকৃতদের হাতে কলমে কিটোমিন মাদক পাচারে প্রস্তুত প্রণালী শিখিয়ে দেয়। কিটোমিন মাদক চোরাচালান এর জন্য প্রস্তুত করতে বর্ণিত ঠিকানা চিলেকোঠার ২টি কক্ষ ব্যবহার করত। উক্ত বাড়িটির ৪র্থ তলায় মীর মঞ্জুর মোর্শেদ (সানী) স্বপরিবারে অবস্থান করত।

গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, জি-কেটামিন নামক নিষিদ্ধ এই মাদকটি দেশের বিভিন্ন ফার্মেসী হতে সংগ্রহ করতঃ প্রস্তুতের জন্য প্রথমে তারা ১০ মি:লি: এর ১০০ টি বোতলের ছিপি খুলে রেখে দিত যাতে বিষাক্ত গ্যাসটি বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা স্টিলের বোলে/হাড়ীতে ৩০ মিনিট যাবত জি কেটামিন ইঞ্জেকশনটি উত্তপ্ত করে; যাতে দ্রব্যটি ঘনরুপ ধারণ করে। এই অবস্থাতেই উত্তপ্ত মাদকটি পরিস্কার সাদা তোয়ালের এক পাশে স্প্রে করতে থাকে এবং শুকানোর জন্য রেখে দেয়। পরে তোয়ালেগুলো ভাজ করে সুরক্ষিতভাবে প্যাকেটের ভিতরে সীল করে কুরিয়ার সার্ভিস এর মাধ্যমে স্পেনে অৎধসফড় মড়হুধষব, খধ-ঈধৎঁহধ, ঝঢ়ধরহ এ ঠিকানায় প্রেরণ করেছে বলে স্বীকারোক্তি দেয়। মাদকদ্রব্যটি বিদেশে পৌছানোর পরে গ্রেফতারকৃত মীর মঞ্জুর মোর্শেদ (সানী) এর ভাই মাহাদী মঞ্জুর মান্নাসহ স্পেনের নাগরিক আরামডো গঞ্জালিওর তত্ত্বাবধানে উক্ত তোয়ালে হতে মাদকদ্রব্যটি সংগ্রহের কাজটি করা হয়। এই চক্রটি বিগত ২ মাসে ০৪টি চালান স্পেনে প্রেরণ করেছে বলে স্বীকারোক্তি দেয়। জানা যায় সম্প্রতি বর্ণিত জি-কিটোমিন মাদকদ্রব্যটির চাহিদা ইউরোপিয়ান দেশে হেরোইন অথবা কোকেন এর চেয়ে অনেক বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে।

Image : Somoynews