রোহিঙ্গা ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন,আমরা চাই নিরাপদে রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যাক। এ সঙ্কট নিরসনে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন দেখতে চায় ভারত।রোববার বিকেলে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দুই দেশের যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। রোহিঙ্গাদের সবাইকে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়াসহ রাখাইন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য মিয়ানমারকে অব্যাহত চাপ দিতে ভারতের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এ বিষয়ে তাঁর বিবৃতিতে বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত লোকজনের মাতৃভূমিতে ফেরার মধ্যেই সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। আমাদের দৃষ্টিতে রাখাইন রাজ্যের একমাত্র স্থায়ী সমাধান হচ্ছে দ্রুত সেখানে আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, যা সেখানকার সব জনগোষ্ঠীর জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে আমাদেরও সমর্থন রয়েছে।

এর আগে বেলা পৌনে দুইটার দিকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় পৌঁছান। জেসিসি বৈঠকে যোগ দিতে তাঁর ঢাকায় আসা।সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন সুষমা স্বরাজ। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তাঁর সৌজন্যে সোনারগাঁও হোটেলে নৈশভোজের আয়োজন করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।এ ছাড়া রাত আটটায় সুষমা স্বরাজের বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।

২০১৪ সালের মে মাসে বিজেপি ক্ষমতায় আসার এক মাস পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। কংগ্রেস-আওয়ামী লীগ সম্পর্কের বিশেষ মাত্রা আর ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের কারণে তাঁর সেই সফরটি নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে। বিশেষ করে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে পরের পাঁচ বছর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ‘বিশেষ মাত্রা’য় কোনো খাদ সৃষ্টি হবে কি না, তা নিয়ে সরকারি মহলে কিছুটা হলেও সংশয় ছিল। আর বিজেপি ক্ষমতায় আসায় উৎসাহিত হয়েছিল বিএনপি। তবে ঢাকা সফরের সময় সুষমা স্বরাজ বলে গেছেন, কংগ্রেস শাসনামলে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কে যে অগ্রগতি হয়েছে, সেটি ধরেই সম্পর্কটা এগিয়ে নেবে বিজেপি।সোমবার বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সুষমা স্বরাজ। সেখানে ভারতের আর্থিক সহযোগিতায় ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

সুষমা বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের চ্যালেঞ্জগুলো একই। সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থী ও মৌলবাদিতা দুই দেশের চ্যালেঞ্জ। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নেওয়া জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গে আমরাও একমত হয়েছি। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে ভারত যেনো মিয়ানমারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করে সেজন্য আমারা অনুরোধ জানিয়েছি। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ-ভারত প্রতিবেশী দেশ, দুই দেশই পরস্পরের বিশ্বস্ত বন্ধু।বৈঠকে সুষমা স্বরাজকে এএইচ মাহমুদ আলী স্মরণ করিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, তার আমলেই তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন হবে। আর ভারতের পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নেতৃত্ব দেন। এতে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।