বাংলাদেশে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম-পেইপলের জুম সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এর উদ্বোধন করেন তিনি। পে পাল অ্যাকাউন্ট নির্ভর একটি অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা। ২০১৫ সালে তারা জুম কিনে নেয়। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কাসহ ২০৩টি দেশে এই সেবা চালু রয়েছে।তবে বাংলাদেশে আপাতত আংশিক সুবিধা নিয়েই চালু হচ্ছে পেপালের জুম সেবা। বাংলাদেশে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম পেইপ্যালের জুম সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বিদেশ থেকে টাকা আনতে হুন্ডি, দুর্নীতির দিন শেষ হতে চলেছে।বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো-২০১৭’ এর দ্বিতীয় দিনে পেইপ্যালের জুম সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জয়।

তিনি বলেন, বিদেশে থাকা এক কোটি ১৮ লাখ প্রবাসী গত অর্থবছরে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এর বাইরে হুন্ডির মাধ্যমে কত টাকা এসেছে তার কোনো হিসাব নেই।এখন পেইপ্যাল চালু হওয়ায় দ্রুত টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে প্রবাসীরা আর হুন্ডি করবেন না এবং তাতে রেমিটেন্স বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। তিনি বলেন, রেমিটেন্স এবং ফ্রিল্যান্সারদের আয় যে হুন্ডির মধ্য দিয়ে আসত, সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। লিগ্যাল চ্যানেল দিয়ে চলে আসবে, দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। যারা হুন্ডি করে তারা চিট করে। টাকা চুরি হওয়ার সম্ভাবনা আর থাকছে না। পেইপ্যাল ইন্টারনেট ভিত্তিক বিশ্বের বৃহত্তম পেমেন্ট ব্যবস্থা। জুম তাদের ক্রস বর্ডার পেমেন্ট সার্ভিস। এক সময় জুম আলাদা কোম্পানি থাকলেও ২০১৫ সালে পেইপ্যাল তা কিনে নেয়।ওই বছর শেষ দিকেই কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে জুমের সেবা চালু হয়। বেশ কিছুদিন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বৃহস্পতিবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল।

আপাতত এই সেবা হবে ‘ইনবাউন্ড’। অর্থাৎ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো হলে তা তোলা যাবে। তবে বাংলাদেশ থেকে কেউ বিদেশে টাকা পাঠাতে পারবেন না। প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দেশের বাইরে বিল পরিশোধ, ইন্টারনেটে কেনাকাটা বা হোটেল বুকিংয়ের সুবিধাও আপাতত পাওয়া যাবে না।প্রবাসীরা জুম ব্যবহার করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন। যারা দেশে বসে বিদেশে কাজ করেন, ফ্রিল্যান্সার বা আউটসোর্সিংয়ে জড়িত, তারাও এর সুবিধা পাবেন।আংশিক সুবিধা নিয়ে এই সেবা চালু করায় যারা সমালোচনা করছেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাদের বক্তব্যেরও জবাব দেন জয়। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন উন্নত দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিতে পারবে তখন টাকা পাঠানোরও সুযোগ তৈরি হবে।কিছু কিছু সমালোচনার চেষ্টা করা হচ্ছে যে সম্পূর্ণ পেইপ্যাল দিতে পারছে না, পেইপ্যাল দিয়ে টাকা পাঠানো যাচ্ছে না। এটা পেইপ্যালের ব্যর্থতা নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনে বাইরে টাকা পাঠানো নিষেধ।এর পেছনে সরকারের নীতি ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হলে তার প্রভাব সরাসরি যাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে না পড়ে, সেই চেষ্টায় আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতিকে ‘কিছুটা আইসোলেটেড’ রেখেছে।বাংলাদেশ থেকে টাকা যেন ফ্রিলি না যেতে পারে,সেটা আমাদের পলিসি। তবে আমাদের সরকারের আমলেই বিদেশে যাওয়ার সময় একজন ব্যক্তিকে ১০ হাজার ডলার নিয়ে যাওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন উন্নত হবে, যখন আমরা বিদেশের যে কোনো দেশের সঙ্গে অর্থনীতিতে পাল্লা দিতে পারব, সেই পর্যায়ে আর কারেন্সির এই প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।তখন আমরা আমাদের কারেন্সি মুক্ত করে দেব। কোনো সীমা থাকবে না। তবে এখনো আমরা সেই পর্যায়ে পৌঁছাইনি। সে কারণে আউট বাউন্ডৃ বিদেশে টাকা পাঠানোৃ এটা আমাদের দেশে আইনে নাই, আমরা পারছি না। যে পরিমাণ টাকা আনতে চান, আনা যাবে যাবে। এই সিস্টেম এখন চালু।জয় জানান, জুম সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে বেশ কিছু দিন ধরেই পরীক্ষামূলক যে সেবা চলছিল, তাতে প্রায় আট কোটি টাকা দেশে এসেছে।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের (ধীরে ধীরে অন্যান্য দেশ যুক্ত হবে) পেইপ্যাল একাউন্টধারী যে কোনো ব্যক্তি তার পেইপ্যাল ওয়ালেট ব্যবহার করে মোটামুটি ৪০ মিনিটের মধ্যে নিরাপদে বাংলাদেশে নির্দিষ্ট ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবেন।প্রতিবার সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার পাঠানা যাবে। প্রতি লেনদেনে এক হাজার ডলার পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯৯ ডলার ফি লাগবে। এক হাজারের বেশি লেনদেনের ক্ষেত্রে বাড়তি আর কোনো ফি দিতে হবে না।প্রাথমিকভাবে সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে পেইপ্যালে আসা টাকা তোলা যাবে।প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, যারা দেশে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করে বিদেশ থেকে অর্থ আয় করেন, সেই টাকা আনতে তাদের বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হত। টাকা আনতে ৩ থেকে ৭ দিন সময় লেগে যেতে এবং ৩০ শতাংশ খরচ হয়ে যেত ফি দিতে গিয়েই। এ কারণে ফ্রিল্যান্সাররা বাংলাদেশে পেইপ্যাল চালুর দাবি করে আসছিলেন।আজকে সেই সার্ভিস বাংলাদেশে চালু হল। পেইপ্যাল অ্যাকাউন্ট থেকে, অ্যাপ থেকে লগইন করে সরাসরি টাকা পাঠানো যাবে। ৪০ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে টাকা চলে আসবে। এখানে বছরে কোনো ফি দিতে হবে না।ৃ সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা যে কোনো সময় টাকা পাঠানো যাবে।জয় বলেন, আমারও পেইপ্যাল অ্যাকাউন্ট আছে, আমিও চেক করে দেখেছি যে কোনো সময় বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে পারি। এখন প্রবাসীদের টাকা হুন্ডিতে নয়, পেইপ্যালের মাধ্যমে আসলে রেমিন্টেস আরও বাড়বে।সরকারি বিভিন্ন ফি, বেতন, লাইসেন্স ফি, বিদ্যুৎ-গ্যাসের বিল অনলাইনে পরিশোধের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা জানিয়ে জয় বলেন, “এসব লেনদেন মোবাইলের মাধ্যমে হবে। ক্ষমতায় আসার পরে ২০০৯ সালে চেষ্টা করেছিলাম, পলিসি গ্রহণ করেছিলাম। বেসরকারি সেক্টরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা তা করতে পারেনি।

আমরা আইসিটি বিভাগ থেকে উদ্যোগ নেব। মোবাইল ফিনানশিয়াল সিস্টেম বানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে দেব। ভাতার টাকা, সেবার টাকা মেরে দেওয়ার সুযোগ, ঘুষ নেওয়ার সুযোগ কারও হাতে থাকবে না।ভবিষ্যতে ইন্টারনেটের দাম আরও কমানোর আশ্বাস দেন জয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসে, তখন এক এমবিপিএস এর দাম ৭৮ হাজার টাকা ছিল। সরকারের গত মেয়াদের শেষে তা ৭০০ টাকায় এবং এখন ৬০০ টাকায় নেমে এসেছে।“আমার ওয়াদা, আমরা কয়েক বছর পর পর দাম কমাতে থাকব। প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেব। ইনফো সরকার-৩ এর মাধ্যমে ২৬শ ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক নিয়ে যাচ্ছি, আগামী দেড় বছরের মধ্যে তা হয়ে যাবে।উপদেষ্টা জানান, এ বছরের মধ্যে মোবাইল ফোনের ফোরজি নিলাম করতে বুধবার প্রতিমন্ত্রী, বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও অপারেটরদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আড়াই ঘন্টা বৈঠক করেছেন তিনি।

“ফোরজি গাইডলাইন নিয়ে ২৪টির সমস্যা ছিল, ২২টির সমস্যা সমাধান করেছি। বাকি দুটি দাম নিয়ে, দামাদামি চলছে। আমি দাবি করেছি, এই বছরের মধ্যে শহর এলাকায় ফোরজি ডিপ্লয় করতে হবে। টেক নিউট্রালিটি দিয়ে দিচ্ছি, যাতে যে কোনো সময় ফোর জি কেন, ফাইভ জিও চালু করতে পারে।আমি ব্যক্তিগতভাবে যেসব ওয়াদা করেছিলাম, তা পালন করেছি।”

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, পেইপ্যালের মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা আনার সুযোগ ছিল এ দেশের ফ্রিল্যান্সারদের দীর্ঘদিনের দাবি।আজকের এই সেবা উদ্বোধনের ফলে তাদের সেই দাবি পূরণ হল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও আপাতত পেইপ্যালের জুম সার্ভিসের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে পারবেন প্রবাসীরা। ফ্রিল্যান্সাররাও তাদের টাকা তুলতে পারবেন।ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরীও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।