গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের কর্মচারীদের মাঝে মঙ্গলবার সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করেছে। সংঘর্ষে ৫ ছাত্র-ছাত্রীসহ উভয় পক্ষের অন্ততঃ ৯জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্ট কালের জন্য মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়াও মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগের দিনের তুচ্ছ ঘটনায় ভাংচুর ও মারধরের জেরে এঘটনা ঘটেছে। এঘটনার জন্য শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা একে অপরকে দায়ী করেছে।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ ও স্থানীয়রা, গাজীপুর শহরস্থিত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ৫ম বর্ষের ছাত্র জাহাঙ্গীর আলম তার মাকে এক্স-রে করাতে সোমবার হাসপাতালের এক্স-রে কক্ষে নিয়ে যায়। কিন্তু সাদা কাগজের স্লিপে কোন চিকিৎসকের স্বাক্ষর না থাকায় টেকনিশিয়ান মোফাজ্জল হোসেন খান চিকিৎসকের স্বাক্ষর নিয়ে পরদিন আসতে বলে। পরে ওই ছাত্র ফিরে গিয়ে সহপাঠীদের বিষয়টি জানায়। এতে অন্য শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়। পরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জোট বেধে মিছিলসহ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে হাসপাতালের এক্সরে ও প্যাথলজী বিভাগের কক্ষসহ টিকিট কাউন্টারে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করে। এসময় সেখানে উপস্থিত আউটসোর্সিং কর্মচারীরা বাধা দিলে দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের বেধরক মারধরে কর্মচারী শাহীন গুরুতর আহত হয়। এঘটনার জেরে কয়েক শিক্ষার্থীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আউট সোসিংয়ের ঠিকাদার আমজাদ হোসেন পলাশসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল আলম সরকার মঙ্গলবার জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন।

এদিকে সোমবারের ওই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল হতে আউট সোর্সিংয়েরসহ হাসপাতালের কর্মচারীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। অপরদিকে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও একদিন সকালে ক্লাস বর্জন করে। এসময় তারা কলেজের অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে রাখে এবং একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করতে থাকে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এসময় কলেজ ও হাসপাতালের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়ে আউট সোর্সিংয়ের ঠিকাদার ও দায়ী কর্মচারীদের শাস্তির দাবী জানায়। দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও কর্মসূচির কারণে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এসময় কয়েক কর্মকর্তা ও শিক্ষক উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোঃ আসাদ হোসেন সকাল ৯টার দিকে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর বেলা ১২টার তিনি বৈঠকে বসার জন্য কর্মচারীর কয়েকজন প্রতিনিধিকে আহবান জানান। কিন্তু বেলা পৌণে একটার দিকে বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য কর্মচারীরা দলবেধে মিছিলসহ কলেজ একাডেমিক ভবনে প্রবেশ করে। তারা ভবনের সিড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠার সময় দু’পক্ষের মুখোমুখি হয়। এসময় কর্মচারীদের সঙ্গে থাকা আউট সোর্সিংয়ের ঠিকাদারকে মারধর শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এতে দু’পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় অধ্যক্ষের কক্ষসহ একাডেমিক ভবনের আসবাবপত্র ও দরজা জানালাসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করে তারা। এতে হাসপাতালের রোগী ও অন্যন্যদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়লে তারা দিকবিদিক ছুটোছুটি শুরু করে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্ততঃ ৯জন আহত হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোলায়মান মিয়া ও গোলাম সবুর, জয়দেবপুর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম সহ পুলিশ বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন এবং উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।

আহতদের মধ্যে মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজ নিয়াজ ও মোম্মদ উল্লাহ কাজল, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহরীন সেলী অর্পা, সীমান্ত সালেহীন ও কামাল আহমেদ এবং কর্মচারী রাজীব হোসেন, সজীব হোসেন, সজীব হোসেন ও ঠিকাদার আমজাদ হোসেন পলাশকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, হাসপাতালের আউটসোসিংয়ের কতিপয় কর্মচারীদের দূর্ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তাদের কারনে কলেজের ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। লেখাপড়ার ও চিকিৎসার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোঃ আসাদ হোসেন জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে কলেজ একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্ট কালের জন্য মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ফরম ফিলাপ ও ভর্তি কার্যক্রম অব্যহত থাকবে।