স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, প্রায় তিন মাস আগে মিয়ানমারের সিকিউরিটি এডভাইজার বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি আমাকে একটি ইনভাইটেশনের কথা বলছিলেন। তিনি বলছিলেন যে আপনি আসুন, আমরা ওখানে কিছু এমইউ সাইন করবো। সেই এমইউ গুলো কিন্তু ওখানে এজেন্ডায় ছিল, কি কি এমইউ হবে- যেমন নাফ নদী ডিমার্গেশন এবং বর্ডার লিয়াজো, এই ধরণের চারটি এজেন্ডা ছিল। এই এমইউ গুলোই স্বাক্ষরের জন্য আমাকে সেখানে ইনভাইট করেছেন। সেটাতো ছিল একটা প্রেক্ষাপট, কিন্তু এখনকার প্রেক্ষাপট একদম সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। এখন আসন্ন মিয়ানমার সফরকালে অবশ্যই আমাদের মূল বক্তব্য হবে- মিয়ানমারের যেসব লাখ লাখ রোহিঙ্গা দু’দেশের সীমানা অতিক্রম করে আমাদের দেশের মূল ভ’খন্ডে অনুপ্রবেশ করেছে, সেসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। তাদের অধিবাসীদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আমরা সেদেশের সরকারকে বারবার অনুরোধ জানাবো।

তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গারা কেউ এদেশের নাগরিক নয়। এটা কেউ যদি অস্বীকার করেন, তাহলে এটা সত্যের অপলাপ করা হবে। ইতিহাস এটার স্বাক্ষী। মিয়ানমারের যে ইউনিয়ণ মন্ত্রী সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাকে আমরা তখন বলেছিলাম বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য আপনারা কার্যকর ব্যবস্থা নেন। তিনি তখন বলেছিলেন তারা (রোহিঙ্গারা) যদি প্রমান করতে পারেন তারা মিয়ানমারের লোক তাহলে অবশ্যই আমরা নিয়ে যাবো। এরকম একটি কথা তিনি বলেছিলেন। সেই সমস্ত সূত্র ধরেই আমরা তাদেরকে বার বার রিকোয়েষ্ট করবো- যদি মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যান এবং তারা যদি ওই অঞ্চলে একটি শান্তির প্রচেষ্টা তৈরীর উদ্যোগ নেন ও শান্তির একটি ফয়সালা করেন- তাহলে আমরা মনে করবো যে সেখানকার নাগরিকরা আর বাংলাদেশে চলে আসবে না।

আসন্ন মায়ানমার সফরে আলোচনার এজেন্ডা কি থাকবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রবিবার দুপুরে গাজীপুরের সফিপুরে এক অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এর আগে মন্ত্রী গাজীপুরে কালিয়াকৈরের সফিপুরস্থিত আনসার-ভিডিপি একাডেমীতে নবনিযুক্ত ৩৪তম বিসিএস (আনসার) ক্যাডার কর্মকর্তাদের মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং মাস্টার্স ইন হিউম্যান সিকউরিটি কোর্সের সমাপণী অনুষ্ঠান প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন এবং কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহন ও প্যারেড পরিদর্শন করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে দেশ আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়ণে বদ্ধ পরিকর। বর্তমান সরকারের কর্মতৎপরতায় অর্থনীতি, রাজনীতি, শন্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ণ সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে শান্তির রোল মডেল হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নতুনরুপে আবির্ভূত হয়েছে। এসবই সম্ভব হয়েছে ‘ মাদার অব হিউম্যানিটি’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের গুণে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাম্প্রতিক সাফল্য দেশের অগ্রযাত্রায় এক অন্যন্য মাত্রা যুক্ত করেছে।

১৫ মাসব্যাপী মৌলিক প্রশিক্ষণে ১৯ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। মন্ত্রী একাডেমীর শহীদ ইলাহি বক্স অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত প্যারেড পরিদর্শন ও প্যারেড মার্চ পাস্ট এর অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে অনুষ্ঠানে তিনি প্রশিক্ষণার্থী মোঃ আবু সোলাইমানকে সেরা চৌকস, মোঃ ফয়সাল হোসাইনকে সেরা ড্রিল এবং মজিবুল হককে সেরা ফায়ারার পুরষ্কার প্রদান করেন। মন্ত্রী কৃতি প্রশিক্ষনার্থীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন। অনুষ্ঠাণ শেষে মন্ত্রী আনসার ভিডিপি সদস্যদের পরিবেশিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন ।

এসময় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন, বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহম্মদ নূরুল আলম, উপ-মহাপরিচালক (প্রশাসন) কর্ণেল মহিউদ্দিন মোঃ জাবেদ, উপ-মহাপরিচালক (প্রশিক্ষন) একেএম মিজানুর রহমান, উপ-পরিচালক (অপারেশন) দিলীপ কুমার বিশ্বাস ও ভারপ্রাপ্ত কমান্ড্যান্ট (একাডেমী) সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ খালেদসহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন ।