চালের দরের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির পেছনে মিলমালিকদের দায়ী করে সরকারকে চালের বাজারের তদারকি জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবিদরা।বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা অনুষদের সেমিনার কক্ষে কৃষিবিদদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান এগ্রেরিয়ান রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এআরএফ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ পরামর্শ দেওয়া হয়।
মূল প্রবন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পোভার্টি স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুল হক কাজল বলেন, “উৎপাদন ঘাটতি বা বন্যা নয়, বরং কিছু অসাধু মিল মালিকের কারণেই চালের দাম বেড়ে চলছে।২০১৫-১৬ সালে নীট খাদ্য শস্যের প্রয়োজনীয়তা থেকে প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন বেশি উৎপাদন হয়েছিল। তাহলে এই কৃত্রিম সংকট কিভাবে সৃষ্টি হল?”লাগামহীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে খাদ্য মজুদ আইন প্রয়োগ ও শাস্তি বিধান নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।এআরএফের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল হামিদ বলেন, মিলমালিকেরা চাল বিক্রি করে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত লাভ করে। অন্য দিকে কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচ তুলে আনতেই হিমশিম খাচ্ছে।মিল মালিকেরা চালের দাম বাড়ার পেছনে বন্যাকে দায়ী করেন, যা ভিত্তিহীন। কারণ বন্যায় যদি ফসল নষ্ট হয়, তার জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে দাম বাড়বে না, তার ফল মিলবে আগামী বছর। এখানে তারা বন্যাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হামিদ বলেন, চালের মজুদ পাঁচ লাখ মেট্রিক টনের নিচে নেমে গেলেই তা শংকাজনক। অথচ এ বছরের জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী, সরকারি গুদাম ও কৃষক পর্যায়ে চালের মজুদ ছিল চার লাখ মেট্রিক টনের নিচে।সরকারের চালের মজুদ কমে যাওয়ায় মিল মালিকেরা সুযোগ নিতে পেরেছেন বলে জানান এই কৃষিবিদ।
দ্রুত চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে বাজার ব্যবস্থার তদারকি জোরদার, খোলা বাজারে চাল বিক্রয়কেন্দ্র বৃদ্ধি, মিল মালিকদের মজুদসীমা নির্ধারণ ও কৃষকদের কাছ থেকে সরকারের সরাসরি চাল কেনাসহ সম্মেলনে বেশ কিছু পরামর্শ উঠে আসে।ভবিষ্যতে চালের বাজারে যেন এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেজন্য কিছু দীর্ঘমেয়াদী পরামর্শ দেন কৃষিবিদরা, যার মধ্যে বিশেষ নীতিমালা গ্রহণ, উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং সেল স্থাপন ও কৃষি বিপণন ক্যাডার তৈরি উল্লেখযোগ্য।