মিয়ানমারের মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরোচিত কঠোর দমনপীড়ন ও নির্যাতন বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বৃহস্পতিবারের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠককে সামনে রেখে সংস্থাটির মন্তব্য: পরিষদের সদস্যদেরকে আজ ঠিক করতে হবে, তারা ইতিহাসের কোন পক্ষকে বেছে নেবে। মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ধারাবাহিকতায় রাখাইনের সহিংসতা নিরসনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১টার দিকে নিরাপত্তা পরিষদের ওই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

ক’দিন আগে বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রসহ সাত দেশ জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুয়াতেরেজকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চলমান ‘জাতিগত নিধন’ নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি সে সময় জানায়, আলোচনার দিনক্ষণ ঠিক করতে শলা-পরামর্শ চলছে। সেই শলা-পরামর্শ শেষে বৃহস্পতিবারকে আলোচনার দিন নির্ধারণ করা হয়। সেই বৈঠককে সামনে রেখেই গতকাল (বুধবার) লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি জাতিসংঘের প্রতি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।অ্যামনেস্টির পরিচালক তিরানা হাসান বলেছেন, “মিয়ানমারের সামরিক জান্তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের জোরপূর্বক বের করে দিচ্ছে এবং তাদেরকে হত্যা করছে; যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সুষ্পষ্টভাবে জাতিগত নিধনের শামিল।” তিনি বলেন, “আজ যখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো বৈঠকে মিলিত হবে তখন তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ইতিহাসের কোন পক্ষে অবস্থান নেবে এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যেসব দুর্ভোগ ও অসহনীয় কষ্ট নেমে এসেছে তা বন্ধে তারা কি পদক্ষেপ নেবেন।
তিরান্ াসুপারিশ করেন, মিয়ানমারের কাছে সব ধরনের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধ করার লক্ষ্যে দেশটির ওপর এখনই একটি ‘ব্যাপকভিত্তিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করতে হবে। এছাড়া, মিয়ানমারে কাছে পরোক্ষভাবে যাতে কোনো অস্ত্রের সরবরাহ না ঘটে এবং দেশটির সেনাবাহিনী যেন কোনো ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ না পায় সেদিকেও জাতিসংঘকে নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে অ্যামনেস্টি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা গেছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-ও চাইছে রোহিঙ্গা নিধনের অপরাধে নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব আনবে। জাতিসংঘ পরিচালক লউ চারবন্নিয়েউ বলেছেন, ‘বার্মিজ (মিয়ানমার) সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করা দরকার। অবরোধ আরোপ করা উচিত তাদের প্রতি যারা রোহিঙ্গাবিরোধী সহিংস প্রচারণায় জড়িত’। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘ মহাসচিব শিগগির এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘ মহাসচিবের বৃহস্পতিবারের আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং এর ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত একজন কূটনীতিক বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার নিজেদের মধ্যে আলোচনায় রাখাইনের সহিংসতা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের মাঝে অবিলম্বে মানবিক সাহায্য কার্যক্রম শুরু ও কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের বাস্তবায়নে জোর দেওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ। সমন্বিত ও শক্তিশালী পদক্ষেপ চাইছে ফ্রান্স। আর মিয়ানমারকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছে ব্রিটেন। এদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা চাইলেও ভয়েস অব আমেরিকা বলছে, সেই নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব আসতে পারে পরিষদের বৈঠকে। তবে এতে ভেটো দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে রাশিয়া আর চীনের।