দেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া সাক্ষাৎকার শুনে দেশের মানুষ বিস্ময়ে বাক্যহারা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি।দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সোমবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন।ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় গৃহকর বা হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে রাজধানীর বাসিন্দাদের বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ক্ষেত্র বিশেষে ট্যাক্স বাড়ানোর হার তিন থেকে দশগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই বৃদ্ধি অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

সম্প্রতি দুই সিটি করপোরেশন হোল্ডি ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়নের কাজ করেছে বলে গণমাধ্যমের খবর। এর ফলে অনেক বাড়ির মালিককে হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ কয়েকগুণ বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে।রিজভী বলেন, একদিকে মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম খাচ্ছেন, অন্যদিকে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ঢাকাবাসীর ওপর হোল্ডি ট্যাক্স বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত তাদের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে বলে আমরা মনে করি। হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির ফলে ঘর ভাড়া বৃদ্ধিসহ মানুষের জীবনযাপনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। সৃষ্টি হবে বিশৃঙ্খলা। রেলের ভাড়া এবং রেশনে চাল ও গমের মূল্য বৃদ্ধির নিন্দাও জানান তিনি।

রিজভীর অভিযোগ, বর্তমান সরকার গণবিরোধী ও ভোটারবিহীন সরকার বলেই জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ওপরই করারোপ করছে। লুটপাটকে আরো তীব্র মাত্রায় অব্যাহত রাখার জন্য জনগণের ওপর মাত্রাতিরিক্ত কর বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমরা মনে করি, সরকার লোক দেখানো ঢাউস বাজেট দিয়ে এখন বিশাল ঘাটতি মেটাতে জনগণের ঘাড় মটকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।সরকার আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।বিএনপির লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, জাতির পিতার হত্যার পর নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। যাঁরা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁরাই নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকে ধ্বংস করেন। দিনের পর দিন আন্দোলন-সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক ধারাটা আবার ফিরিয়ে এনেছি। আজ নির্বাচন যত সুষ্ঠু হচ্ছে, মানুষ ভোট দিতে পারছেÑএটা আমাদের অবদান। মানুষ তার পছন্দমতো লোককেই নির্বাচন করবে। আমরা সেটাই চাই। নির্বাচনপ্রক্রিয়া আমরাই উন্নতি করেছি…ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই বক্তব্যের জবাবে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে দেশবাসী বিস্ময়ে বাক্যহারা। আসলে শেখ হাসিনার সংজ্ঞানুযায়ী গণতন্ত্র বলতে বুঝতে হবে সব দলের কর্মকা- বন্ধ করে দিয়ে একক কর্তৃত্বে একমাত্র দল দেশ চালাবে, ভিন্নমত থাকবে না, গণমাধ্যম সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে থাকবে, নির্বাচনের অর্থ হবে ভোটকেন্দ্র ভোটারবিহীন শ্মশানভূমি, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিহীন নির্বাচন। এই সংজ্ঞার সঙ্গে একমতধারীরা প্রকৃতপক্ষে জনগণ বলে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন। সরকারের বিরুদ্ধে ভিন্নমত পোষণ করাদের তিনি জনগণের অংশ বলে মনে করেন না। মানুষের ভোটাধিকার হরণকারী প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুধু নিজ দেশবাসীর কাছেই নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও হাস্যকর ও ধাপ্পাবাজিমূলক বক্তব্য বলে মানুষ গণ্য করেছে।

বিএনপির দাবি, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে, সবগুলোই ছিল নিখুঁত সরকারি সন্ত্রাসনির্ভর। জোর করে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জালভোট প্রদানসহ ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শণমূলক নির্বাচনে পারদর্শী আওয়ামী লীগ। বারবার বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে করা হয়েছে সরকারের রাবার স্ট্যাম্প। নির্বাচনকে ঘিরে সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য ও বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে নির্বাচনী এলাকাগুলোয় ভোটারদের মধ্যে চরম ভীতির সৃষ্টি করে। সকাল থেকেই তিন জেলার নির্বাচনী এলাকাগুলোর সব ভোটকেন্দ্র পেশিশক্তির জোরে দখলে নিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা। প্রতিপক্ষের এজেন্টদের মারধর করে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিদ্যুৎ অর্থনীতির অন্যতম প্রধান লাইফলাইন। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি হলে এর চেইন রিঅ্যাকশনে শিল্প উৎপাদন, শিল্প বহুমুখীকরণ, অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন, মানুষের গৃহস্থালিসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিতে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়বে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে বহুগুণ। ২০১০ সালের ১ মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে পাঁচবার এবং গ্রাহক পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ২০১৫ সালে সর্বশেষ গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয় ২ দশমিক ৯ শতাংশ।রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাজধানীর বাসিন্দাদের বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ক্ষেত্রবিশেষে ট্যাক্স বাড়ানোর হার তিন থেকে দশ গুণ পর্যন্ত। এতে বিপাকে পড়েছেন নগরীর বাসিন্দারা। উপায় খুঁজতে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসগুলোতে ধরনা দিচ্ছেন তাঁরা। একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে হিমশিম খাচ্ছেন, অন্যদিকে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ঢাকাবাসীর ওপর হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত তাঁদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। রাজধানীবাসীর বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক।