প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার হত্যার পর নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছেন, তারাই নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকে ধ্বংস করেন।আমরা দিনের পর দিন আন্দোলন-সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক ধারাটা আবার ফিরিয়ে এনেছি। আজ নির্বাচন যত সুষ্ঠু হচ্ছে, মানুষ ভোট দিতে পারছে- এটা আমাদের অবদান।মানুষ তার পছন্দমতো লোককেই নির্বাচন করবে। আমরা সেটাই চাই। নির্বাচন প্রক্রিয়া আমরাই উন্নতি করেছি। রোববার ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।আগামী নির্বাচন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে কাজ করেছি, তাতে যদি জনগণ খুশি হয় ভোট দেবে, না হলে দেবে না। যা দেবে তাই আমরা মেনে নেব। নির্বাচন কমিশন এখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
নির্বাচন অবশ্যই অবাধ নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবে নির্বাচন কমিশন। তারাই সব করবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকারের আমলে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, প্রত্যেকটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেতো বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন যদি আমাদের আমলে নাই হতো, তাহলে কি বিএনপি জিততে পারত? বিএনপির আমলে কি কেউ জিতেছে? সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যেন মিয়ানমার সরকার ফিরিয়ে নিয়ে যথাযথ নিরাপত্তা দিয়ে রাখে সেই বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের পরামর্শ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি বলেন, আমার কথাটা স্পষ্ট, যারা মিয়ানমার থেকে এসেছে তাদেরকে সসম্মানে ফিরিয়ে নিতে হবে। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তারা যেন ভালোভাবে ফিরে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার সরকারের ওপর যেন সেই চাপটা দেয়া হয়, যেন তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এটাই হচ্ছে মূলত আমার কথা। আর দ্বিতীয়তটা হচ্ছে, যেহেতু সেখানে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তারপর তারা আশ্রয় চেয়ে আমাদের এখানে চলে এসেছে। মানবিক কারণে আমরা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি।এখানে ছোট ছোট শিশু, মহিলা, বয়োবৃদ্ধ চলে এসেছে। এদের গ্রামেরপর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘরবাড়ি পোড়ানো হয়েছে, মানুষ হত্যা করা হয়েছে।তিনি বলেন, আমি ও আমার ছোট বোন রেহানাসহ (শেখ রেহানা) অনেকেই সেখানে গিয়েছি।। মা-বাবা-বোনকে মেরে ফেলা হয়েছে, এরকমও আছে। ফলে কেউ হয়তো একেবারেই চলে এসেছে এতিমের মতো।কেউ হয়তো দাদা-দাদির সঙ্গে চলে এসেছে। একেবারেই অমানবিক অবস্থা। এ অবস্থায় আমরা তাদের আশ্রয় দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর আরও বেশি চাপ দিক, যেন তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তাদের পুনর্বাসন করে এবং নিরাপত্তা দেয়।
মিয়ানমার সংক্রান্ত এসব বিষয়সহ আরও অনেক বিষয় জাতিসংঘের ভাষণে বলেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কফি আনানের সুপারিশগুলো মিয়ানমারকে মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছি।এবং যে ধরনের ঘটনা ঘটছে, তার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সে প্রত্যাশা রাখেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার সরকারকে আমরা সব সময় একটা কথা বলেছি, তাদের দেশে কেউ যদি কখনও সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাতে চায়, বাংলাদেশ কখনও তাদের স্থান দেবে না।এ ক্ষেত্রে দুই দেশের সমঝোতা থাকা এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। আর এ ধরনের কোনো তথ্য থাকলে আমরা একে অপরকে দিয়ে সহযোগিতা করব। কিন্তু তাদের নিরীহ নাগরিকদের ওপর অত্যাচার- এটা যেন না হয়। এটা সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী। এটা বন্ধ করতে হবে।জাতিসংঘে গিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন, দেখা হয়েছে- কাদের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বেশি সমর্থন পাচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি প্রত্যেকের কাছ থেকেই ভালো সমর্থন পেয়েছি।প্রত্যেকেই এ বিষয়টি জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং সবাই সহযোগিতা করতে চান। ইতিমধ্যে অনেক দেশ রোহিঙ্গাদের জন্য আমাদের দেশে ত্রাণ পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারটিতে প্রত্যেকেই সহানুভূতিশীল।যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারাও এ ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত। তারাও বলেছে, এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে। ইতিমধ্যে তারা বেশকিছু পদক্ষেপও নিয়েছে।ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় শরণার্থী সমস্যার বিষয়টি উল্লেখ করেন বলেও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আঞ্চলিকভাবে বড় শক্তি ভারত এবং চীন। এ ইস্যুতে তারা কেমন সহযোগিতা করছে। এর উত্তরে ভয়েস অব আমেরিকাকে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত এ ব্যাপারে খুবই সহানুভূতিশীল। তারা সহযোগিতা করছে।চীনের কাছ থেকেও আমরা সে ধরনেরই সাড়া পাচ্ছি। জাতিসংঘ মহাসচিবও বলেছেন, এ ব্যাপারে তাদের যা যা করা প্রয়োজন, তারা তা করবেন। শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য একটি দ্বীপ এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র করে দেয়া হবে। তাদের জন্য সাইক্লোন সেন্টার, স্কুল করে দেয়া হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।যতদিন পর্যন্ত তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া না হয়, ততদিন পর্যন্ত তাদের অস্থায়ীভাবে রাখার একটা ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে সব রোহিঙ্গাকে পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে।
তাদের আমরা তালিকাবদ্ধ করে রাখছি। আর ওই দ্বীপে ৫-১০ লাখ লোক রাখা যাবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।জাতিসংঘে ভাষণে জঙ্গীবাদ দমনে সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। সে বিষয়ে তিনি ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, কোনোভাবেই আমরা জঙ্গীবাদকে মেনে নিতে পারি না।এ ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স। অর্থাৎ কোনোভাবেই আমরা জঙ্গীবাদকে সহ্য করব না। এটি আমরা বন্ধ করব। এ ব্যাপারে আমাদের মাটিও ব্যবহার হতে দেব না। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই।জঙ্গীবাদে কারা অস্ত্র ও অর্থ জোগান দিচ্ছে, ট্রেনিং দিচ্ছে তাদের বের করতে হবে। এটি বন্ধ করতে হবে। কোনো দেশে কোনো সমস্যা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করতে হবে।বিষয়টি নিয়ে আমি ওআইসিকেও বলেছি। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা মানবকল্যাণ চাই। মানবতাবিরোধী কাজ আমরা চাই না। তবে অভিবাসী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো উচিত বলে তিনি মনে করেন।