বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে দেড় লাখ শিশুকে টিকা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। আজ বৃহষ্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা সহায়তা প্রদানে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ৫৬ হাজার শরণার্থীকে এমআর টিকা, ২০ হাজার জনকে বিওপিভি এবং ১৫ হাজার জনকে ভিটামিন এ খাওয়ানো হয়েছে। তাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ১২টি স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্পে ৩৬টি টিম কাজ করছে। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে কোন উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যে নিরাপদে প্রসব করা যায় সে বিষয়েও তাদের কোন ধারনা নেই।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানের জন্য পৃথক ১০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। যারা ৮/১০ প্রকার ওষুধ এবং কনডম, খাবার বড়ি, তিন মাস মেয়াদী ইনজেকশন বিতরণ করছে। এছাড়াও পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধিতি সম্পর্কে তাদের কাউন্সিলিং করতে ৮৬ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে।এপর্যন্ত প্রশিক্ষিত নার্স, মিডওয়াইফদের হাতে ১৭৩টি নরমাল ডেলিভেরির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ১৬ থেকে ১৮ হাজার গর্ভবতী নারী রয়েছে। তাদের সর্বোচচ সেবা নিশ্চিত করা হচেছ।

সংবাদ সম্মেলন থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক, সিভিলসার্জন এবং কক্সবাজারের সিভিল সার্জনদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন। এসময় তিনি সকল চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত কর্মকর্তা, কর্মচারীদের একদিনের বেতন রোহিঙ্গাদের সহায়তায় প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন।

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে মায়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এই সমস্যার সমাধানে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোকে মায়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। তারা রোহিঙ্গাদের যেন তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। কিন্তু তাদের তো দেশে ফিরে যেতে হবে। তিনি বলেন, অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বিশ^বাসীকে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, মাত্র ১ লাখ শরণার্থী আশ্রয় দিতে ইউরোপ সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া দিয়েছিল। অথচ মানবিক কারণে বাংলাদেশ সরকার লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়, সেবা ও খাদ্য সরবরাহ করছে। ’৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, সে সময়ে ভারত সরকার এদেশের মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। স্বাধীনতার পরবর্তি সময়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারীরা বাংলাদেশে ফিরে এসেছে। তাই রোহিঙ্গাদেরও তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে।সংবাদ সম্মেলনে বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, বিএসএমএমইউ’র ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার, মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।