রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থ বলে আবারো অভিযোগ করেছেন বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দশম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন তিনি।এ সময় অভিযোগ করে বলেন, মিয়ানমারের বিমান বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করলেও সরকার তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে সরকার জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অপপ্রচার চালিয়ে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে চাইছে বলেও দাবি করেন বিএনপির এ নেতা।তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক, তার নিকট জনেরাই বিদেশে ৮৬ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট আড়াল করতেই প্রধানমন্ত্রী জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে বিদেশে সম্পদ পাচারের অভিযোগ এনেছেন দাবি করে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনদৃষ্টি সরাতে প্রধানমন্ত্রী ‘ছু মন্থর’ কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন।রিজভী বলেন, রোহিঙ্গারা প্রতিদিন মরছে ক্ষুধায়, চিকিৎসার অভাবে, আশ্রয়ের অভাবে; কোনো ছায়া নেই। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি যাতে আন্তর্জাতিকভাবে কেউ জানতে না পারে, দেশের মানুষ জানতে না পারে, সেটাকে আড়াল করার জন্য হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী বলে বসলেন যে, ১২শ কোটি টাকা নিয়ে গেছে।জনদৃষ্টিকে ভিন্নদিকে সরানো জন্য মাঝে-মধ্যে ছু‘-মন্থর দেন শেখ হাসিনা; যাতে এটা নিয়ে মানুষ ব্যস্ত থাকে।জাতীয় সংসদের বুধবারের অধিবেশনে জাতীয় পার্টির ফখনুল ইমামের এক প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বিদেশে জিয়া পরিবারের সম্পদের বিষয়ে তদন্তের এ ঘোষণা দেন।
গ্লোবাল ইনটেলিজেন্স নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতাদের বিদেশে সম্পত্তির ফিরিস্তি তুলে ধরে সে বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চান ফখরুল ইমাম।মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইসহ অন্তত ১২টি দেশে জিয়া পরিবারের প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তুলে ধরেন ইমাম।জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্যগুলো যখন বের হয়েছে, তখন নিশ্চয়ই আমাদের কাছে তা আছে। এটা নিয়ে তদন্ত চলছে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে মানি লন্ডারিংয়ের জন্য একটি তদন্তের ব্যবস্থা আছে। সেই সূত্রেও তদন্ত করা হচ্ছে।এই তদন্তেরর মধ্য দিয়ে সত্যতা যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক বলে আখ্যায়িত করে রিজভী বলেন, পদ্মাসেতুতে সুনির্দিষ্টভাবে একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি বিদেশি আর্থিক সংস্থা অভিযোগ তুলল এবং সেই সংস্থা এখন পর্যন্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করেননি। আর আপনি (প্রধানমন্ত্রী) তাকে বললেন দেশপ্রেমিক।আপনি দুর্নীতির চাষ-বাস থেকে শুরু করে, দুর্নীতির উৎপাদন থেকে শুরু কওে দুর্নীতির এত বড় পৃষ্ঠপোষক পৃথিবীতে আর কেউ নেই।পদ্মা সেতু নির্মাণের পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ২০১১ সালে অর্থায়ন থেকে সরে যায় বিশ্বব্যাংক। তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে নেমে কোনো প্রমাণ পায়নি বলে জানায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।একই ঘটনায় কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের বিরুদ্ধেও সেদেশে একটি মামলা করে বিশ্বব্যাংক। কিছুদিন আগে দুর্নীতির প্রমাণ না পাওয়ায় সে মামলাও খারিজ করে দেয় কানাডার আদালত।বাংলাদেশ নাগরিক সংসদ আয়োজিত এ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনরা দেশ থেকে ৮৬ হাজার কোটি টাকার পাচার করেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা রিজভী।তিনি বলেন, আপনি আজকে জোর করে ক্ষমতায় আছেন, এই জোর করে ক্ষমতায় থাকার কারণই তো হচ্ছে ১ টাকার কাজকে আপনি ১০০ টাকা করেছেন বিভিন্ন প্রজেক্টে, মেগা প্রজেক্টের নামে। সেই সব প্রকল্পের টাকা কোথায়? সেটা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনৃ তারা হিসাব-নিকাশ করে প্রায় বলেছে যে, ৮৬ হাজার কোটি টাকা শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্টজনরা এখান (বাংলাদেশ) থেকে পাচার করেছে।এবিষয়ে বাংলাদেশে কেউ কথা বলতে পারছেন না অভিযোগ এনে রিজভী বলেন, যারা এসবের গবেষণা করেন, তারা ভয়ে সেটা তুলতে পারছেন না। কিন্তু বাইরের গণমাধ্যম বা বাইরের গবেষকরা তো চুপ করে বসে নেই, তারা সেটা অবলোকন করছে, তারা দেখছেন।ক্ষমতাসীন দলের অন্যদের বাদ দিলাম, শুধু আপনার ঘনিষ্টজনরা যত টাকা নিয়ে গেছে সেই টাকার একদিন জনগনের কাছে হিসাব দিতে হবে।হঠাৎ করে ফের গুম ও ক্রসফায়ার বেড়েছে দাবি করে এর পেছনে সরকারের অশুভ পরিকল্পনা রয়েছে বলছেন এই বিএনপি নেতা।বরিশালের সাবেক সাংসদ জহিরউদ্দির স্বপনের গ্রামের বাড়িতে হামলা-ভাংচুরের ঘটনাসহ নওগাঁও, মুন্সিগঞ্জ, ফেনী, পটুয়াখালী, রংপুর, রাজশাহী, যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে দলের নেতাকর্মীকে গুম-হত্যাকান্ড ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানান রিজভী। রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ দিতে বিএনপি প্রতিনিধি দলকে উখিয়াতে যেতে না দেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, দেখুন কত নির্দয়, কত নির্মম এই সরকার। ত্রাণ দিতে দিচ্ছে না ওখানে, রোহিঙ্গা শিশুরা না খেয়ে আছে। অর্থাৎ মিয়ানমারের সূ চির কর্মকান্ডের সাথে শেখ হাসিনার কর্মকান্ডের কোনো গরমিল নাই, একই কর্মকান্ড।বাংলাদেশ নাগরিক ফোরামের সভানেত্রী খালেদা ইয়াসমীনের সভাপতিত্বে ও এনডিপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসার পরিচালনায় আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম, বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক নেওয়াজ হালিমা আরলি, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, নিপুন রায় চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।