এবারের কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরমুখে ও ফিরতি যাত্রায় সারা দেশে দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে যাত্রীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।এর মধ্যে সড়কপথের ২১৪টি দুর্ঘটনায় ২৫৪ জন, নৌপথে ২৫ জন ও ট্রেনে কাটা পড়ে ৪৩ জন নিহত হয় বলে বুধবার দুর্ঘটনার এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানায় তারা।

বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের ঈদুল আজহায় দুর্ঘটনা নিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির তৈরি প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।তিনি বলেন, সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে ঈদের আগে-পরে ১৩ দিনের দুর্ঘটনার তথ্য নিয়ে এ পরিসংখ্যান তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে ২৮ অগাস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুর্ঘটনার তথ্য রয়েছে।সমিতির পরিসংখ্যান বলছে, ঈদ ও ফিরতি যাত্রায় ২১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫৪ জন নিহত ও আরও ৬৯৬ জন আহত হয়।

একই সময়ে নৌপথের ১৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ৬৩ জন আহত হয়। আর ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয় ৪৩ জন।সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সম্মিলিতভাবে ২৭২টি দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত ও ৭৫৯ জন আহত হয়েছে বলে জানান যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল।তিনি বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় দুর্ভোগের শঙ্কা দেশের গণমাধ্যমগুলো প্রকাশ করেছে। অনেক আগেভাগে ঈদযাত্রা শুরু হওয়ায় ঘরমুখো যাত্রা ফেরতযাত্রার চেয়ে খানিকটা স্বস্তিদায়ক ছিল। তবে ফিরতি যাত্রায় ভোগান্তি ও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে।এ পরিসংখ্যান তৈরিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা ২২টি জাতীয় দৈনিক, ছয়টি আঞ্চলিক দৈনিক ও ১০টি অনলাইন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য নিয়ে করেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ পথচারীকে চাপা দেওয়া, ১২ দশমিক ৬ শতাংশ গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষে, ১ দশমিক ৪ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে, ৩ দশমিক ২ শতাংশ গাড়ির ছাদ থেকে পড়ে এবং ১১ দশমিক ২ শতাংশ অন্যান্য কারণে ঘটেছে।যানবাহনের ৩৭ ভাগ বাস, ৩৫ ভাগ ট্রাক ও পিকআপ, ২৩ ভাগ নছিমন-করিমন, ভটভটি-ইজিবাইক, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল, ৫ ভাগ অন্যান্য যানবাহন এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।প্রতিবেদনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ, ভাঙা ও খানাখন্দপূর্ণ রাস্তাঘাট, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, বিপদজনক ওভারটেকিং, অতিরিক্তি মুনাফার আশায় যানজটে আটকে থাকা বাণিজ্যিক পরিবহনগুলোকে দ্রুত ফেরত আসতে মালিকপক্ষের বারবার তাগাদা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।এছাড়া ধীরগতির পশুবাহী ট্রাক, নছিমন-করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক, অটোরিকশা, ব্যটারিচালিত রিকশা, প্যাডেলচালিত রিকশার সঙ্গে দ্রুতগতির বাস ও মাইক্রোবাস-কার একইসাথে চলাচল, কিশোর-তরুণদের দ্রুতগতির মোটর সাইকেল, ফুটপাত দখলে থাকায় অথবা ফুটপাত না থাকায় রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াতও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

সংবাদ সম্মেলনে কিছু সুপারিশমালাও তুলে ধরে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।এর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সেল গঠন, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া, মহাসড়কে দ্রুতগতি ও ধীর গতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা, মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামতের পাশাপাশি রোড সেফটি অডিট করা, সড়ক-মহাসড়কে রোড ডিভাইডার স্থাপন করা এবং মানসম্মত ও নিরাপদ যানবাহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা রয়েছে।এছাড়া নিরাপদ ও প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তোলা, দেশের সড়ক-মহাসড়কে পথচারী বান্ধব ফুটপাত, জেব্রা ক্রসিং, ওভারপাস, আন্ডারপাস গড়ে তোলা; ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা; মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ব্যাটারি চালিত রিকশা ও অটোরিকশা বন্ধে সরকারের গৃহিত সিদ্ধান্ত শত ভাগ বাস্তবায়ন করা।যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিশৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনা ও আইনের শিথিলতার কারণে বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়ক দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে। এতে সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেমন দীর্ঘায়িত হচ্ছে তেমনি যানজট ও জনজটের ভোগান্তি ও বাড়াচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. মাহবুব আলম তালুকদার এবং সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের যুগ্ম-সম্পাদক হানিফ খোকন উপস্থিত ছিলেন।