মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মতোই বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে জাকিয়া সুলতানা রূপাসহ দেশব্যাপী নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে এই মানববন্ধন হয়।মানববন্ধন কর্মসূচিতে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাকিয়া সুলতানা রূপাকে বিভৎস নির্যাতনের পর হত্যা বর্তমান সরকারের দুঃশাসনেরই প্রতিফলন। কারণ এরা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন যেন মহামারী আকার ধারণ করেছে। খাদিজা, মীম, তনু, মীতু- কার কথা বলব। সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পতি হত্যা- এটাতো সকলের মুখে মুখে। কোনোটিরই বিচার নেই। সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই।এই সরকারের আচরণের সাথে আজকে মিয়ারমানের সরকারের রোহিঙ্গাদের ওপর আচরণের গরমিল কোথায়? একেবারে পুরোপুরি মিল। এই সরকার ও মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণ একইরকম। আজ দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। জনপদে জনপদে আজকে সমাজ বিরোধীদের দাপট বেড়েছে।
রিজভী বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি যখন সবখানে জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আবারও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষের যে সংলাপ চলছে, সেখানে প্রায় সবাই সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সহায়ক সরকারের পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনি ঘর অগোছালো রেখে তাদের দলীয় উদ্দেশ্য সাধন করছে।’ এসময় ক্ষমতাসীনদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই রাজনৈতিক বোঝাপড়ার জায়গাটা হারিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার বাহিনীর হেলিকপ্টার বার বার বাংলাদেশের সীমা অতিক্রম করলেও সরকার দায়সারা প্রতিবাদ লিপি দিয়ে কর্তব্য শেষ করেছে। কারণ, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তারাও দেশে গুম, হত্যা, বিচার বর্হিভূত হত্যা ও নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষমতা আকঁড়ে ধরে আছে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বর্বরতা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে অনেকাংশেই মিল পাওয়া যায়। তাই তাদের নৈতিক মনোবল বা শক্তি না থাকায় জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারছে না। প্রত্যুত্তর দিতে পারছে না।রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রধান থেকে শুরু করে অন্যান্য নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পরনিন্দায় মুখর থেকেছে।প্রধানমন্ত্রীকে খুশি রাখতেই ইনুর বক্তব্যপ্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্যই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তথ্যমন্ত্রী বিষোদগার করছেন বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার লাইসেন্স বাতিল করে দেবেন। বাহ! বাংলাদেশ আপনার পৈত্রিক সম্পত্তি। মাননীয় তথ্যমন্ত্রী শুধু খুন, গুম, উগ্রবাদ, জঙ্গি এসব কথা ছাড়া আর কোনো কথা নেই। কারণ তিনি রাজনীতি শুরুই করেছেন মানুষ খুন করে, গ্রামের পর গ্রাম তিনি জ্বালিয়েছেন। তিনি গণবাহিনীর নাম করে অসংখ্য নিরহ মানুষকে হত্যা করছেন।আজকে এই কথাগুলো কেন বলছেন? এই কথাগুলো বলতে হবে এজন্য যে এর ওপর উনার চাকরি নির্ভর করছে, মন্ত্রীত্ব নির্ভর করছে। শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য উনাকে বার বার বলতে হবে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতির লাইসেন্স বাতিল করে দিতে হবে ইত্যাদি। যেগুলো অসভ্য, নোংরামী- ওইসব কথাই তথ্যমন্ত্রী বলেন।
ঈদের প্রাক্কালে কয়েকটি গুমের ঘটনা তুলে ধরে রিজভী বলেন, কথা বললে পরেই গুম হয়ে যান, ঈদের সাতদিন আগে ছয়জন গুম, আরো গুম হচ্ছেন। অনেক পরিবারের সদস্যরা বলছেন, আপনারা এই কথা (গুমের কথা) বইলেন, না তাহলে আর পাওয়া যাবে না। আমরা (নিখোঁজ পরিবারের স্বজন) টাকা পয়সা দিয়ে উদ্ধার করার চেষ্টা করছি।তিনি বলেন, এটা সরকার একটা সুযোগ দিয়েছে, ঈদের একটা বোনাস দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে- তোমরা বিরোধীদলের লোকজনকে গুম করো, ব্যবসায়ীকে গুম করো, যত পারো টাকা আদায় করো। আজকে এই অবস্থা সমাজে চলছে বলেই রূপারা হত্যা হচ্ছে।মহিলা দলের সহসভানেত্রী জেবা খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের পরিচালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শামসুন্নাহার ভুঁইয়া, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আমেনা বেগম, কেন্দ্রীয় নেত্রী রোকেয়া সুলতানা তামান্না, রোকেয়া চৌধুরী বেবী, রাবেয়া আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।