কোরবানির ঈদের আগের দিন জমে উঠেছে রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলোর বিকিকিনি।বিক্রেতারা বলছেন, আগের কয়েক দিন বেচাকেনা তেমন না হলেও বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে ক্রেতা বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে বিক্রি। কয়েকটি হাটের অধিকাংশ গরু বিক্রিও হয়ে গেছে।অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, দাম গতবারের চেয়ে বেশি চাইছেন বিক্রেতারা। হাটে গরুও দেখা যাচ্ছে কম। শেষ সময়ে এসে বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে তাদের। ঢাকার পশুর হাটে শেষ দিনে বিক্রেতারা আশানুরুপ দাম না পেয়ে হতাশ। তারা বলছেন, ভারত ও মিয়ানমারের গরু হাটে আসায় দাম কমে গেছে। তবে ক্রেতারা বলছেন দাম ছাড়ছেন না বিক্রেতারা। হাট ইজারাদাররা বলছেন, দাম বাড়বে। কারণ এখনও অনেকেই পশু কেনেননি। সব মিলিয়ে স্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা।রাজধানীর আফতাব নগর হাটে রাজশাহীর ইলিয়াস সরকার ১৩ টি গরু নিয়ে এসেছেন। তার মধ্যে ৬টি গরু বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, আশানুরুপ দাম পাচ্ছি না। প্রতি বছর এসময় ভারত ও মিয়ানমার থেকে ঢাকার বাজারে গরু আসে। সেজন্য দাম কম। আমরা দেশীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তবে শেষ মুহুর্তে দাম বাড়তে পারে।রাজধানীর মেরাদিয়া হাটে ২০টি গরু নিয়ে এসেছেন রাজবাড়ী থেকে মো. আবদুল্যাহ খান। এর মধ্যে ১৫টি তার নিজের খামারের। ৫টি অন্য খামারি থেকে কিনে এনেছেন। শুক্রবার সকাল ১১টা পর্যন্ত ৮টি বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘লাভজনক দামে বিক্রি করতে পারিনি।তিনি একটি গরু ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় কিনে বিক্রি করেন ১ লাখ ১২ হাজার টাকায়।এই ব্যবসায়ী বলেন, আমার নিজের খামারে পালিত গরুগুলোতে লাভ হলেও কিনে আনা ৫টিতে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা লস হয়েছে।তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ক্রেতারা দরদাম করলেও কিনছেন না।

কুষ্টিয়া থেকে আসা হাবিবুর রহমান চারটি ট্রাকে করে ৫৩টি গরু এনেছেন। তিনি ৫২টি গরু বিক্রি করেছেন। তবে তার তিন লাখ টাকা মূল্যের একটি গরু এখনও বিক্রি করতে পারেননি। বৃহস্পতিবার রাতে ওই গরুটি যে ক্রেতা ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা বলেছিলেন, সেই ক্রেতাই শুক্রবার সকালে এসে ২ লাখ ১৫ হাজার বলছেন। মেরাদিয়া হাটে বিক্রেতা এই গরুটির দাম হাঁকছেন তিন লাখ টাকাহাবিবুর রহমান জানান, তিনি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পেলে গরুট বিক্রি করবেন।তিনি জানান, দুই দিন আগে গরুর দাম বেশি থাকলেও শুক্রবার সকালে কমে গেছে।বিক্রেতা রবিউল ইসলাম জানান, বাজারে গরুর দাম হতাশাজনক। বৃহস্পতিবার সকালের বৃষ্টির পর দাম পড়ে যায়। বিকালের পর বেশ-কিছু গরু বিক্রি হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালেও ক্রেতারা আশানুরুরপ দাম বলছে না। পাইকারি বিক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত। রেমরাদিয়া হাটের ইজারাদার শরিফুল ইসলাম জানান, দাম ওঠা-নামা করছে। তবে কম দামে গরু খঁজছেন ক্রেতারা।ক্রেতা মোবাশর হোসেন বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় কোরবানি দিচ্ছি। ৮/১০টি গরু দেখে ৬০ হাজার টাকায় মাঝারি সাইজের একটি দেশীয় গরু কিনেছি।’সারা বছর দেশে যত পশু জবাই হয়, তার অর্ধেক জবাই হয় এই কোরবানির ঈদের সময়। সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা এক কোটি ১৫ লাখের মত। এবার কোরবানির বাজারে ভারতীয় গরু কম আসায় হাসি ফুটেছে দেশি খামারিদের মুখে।শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কমলাপুর অস্থায়ী হাট, গোলাপবাগ অস্থায়ী হাটে গিয়ে বেশ ভিড় দেখা যায়। পছন্দের গরুটি কিনতে ক্রেতারা দরদাম করছেন। সব কিছু মিলে গেলে টাকা দিয়ে গরুর দড়ি হাতে নিয়ে বাড়ির পথ ধরছেন।দক্ষিণ বাসাবোর বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম ৮৩ হাজার টাকায় একটি লাল গরু কিনেছেন । তার মনে হয়েছে, শেষ দিনে বিক্রেতারা দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।গতকাল আমি আফতাবনগর হাটে গিয়েছিলাম। দাম বেশি বলে সেখান থেকে কিনিনি। কিন্তু আজ এখানে দাম দেখলাম আরও বেশি। সময় নাই, এজন্য কিনে ফেললাম।একটি বড় গরু নিয়ে বৃহস্পতিবারই হাটে এসেছেন কুষ্টিয়ার আমির আলী। তিনি জানান, গরুটি তিনি নিজের বাড়িতে বড় করেছেন। দাম চাইছেন ৩ লাখ টাকা। তবে দুপুর পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেননি।কাস্টমাররা দুই লাখ, ২ লাখ ২০ হাজার টাকা কচ্ছে। আড়াই লাখ টাকা হলি ছাড়ি দিবার চাই।কোরবানির ঈদ করতে দেশে এসেছেন যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সিয়াম। ধলপুর থেকে এসে কয়েকটি হাটে ঘুরলেও মনের মতো গরু পাননি তিনি।হাটে বড় গরু কম, ছোটই বেশি। বড় গরু যেগুলো আছে সেগুলোর দাম আবার বেশি। এজন্য এখনও কিনতে পারিনি। বিকেলের মধ্যে হয়ত কিনে ফেলব।কুষ্টিয়ার মিরপুর থানা এলাকা থেকে ৩২টি গরু নিয়ে এসেছেন নাসির উদ্দিন ব্যাপারী। সবশেষ দুটি গরু তিনি বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা দাম। একজন ক্রেতাই গরু দুটি কিনেছেন।নাসির বলেন, এইবার বাজার ভালই গ্যাছে মনে হচ্ছে। ভারতীয় গরু কম, আমার মোটামুটি লাভ হইছে। আবার কাস্টমারও যে বেশি দিছে তা না। এইরকম বাজার থাকলে কাস্টমারের লাভ, গিরস্থেরও লাভ।কোরবানির পশু কিনতে কমলাপুরের হাটে এসেছিলেন পুলিশ পরিদর্শক মিনহাজ উদ্দিন। তিনি জানালেন, তিনটি হাট ঘুরে গরুর দাম একটু বেশিই মনে হয়েছে তার।বিকালের দিকে গাবতলীর পশুর হাটে ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা গেলেও পশুর সংখ্যা ছিল কম। বিক্রেতারা বললেন, অধিকাংশ গরুই বিক্রি হয়ে গেছে।রাজবাড়ী থেকে মঙ্গলবার ছয়টি বড় আকারের গরু নিয়ে গাবতলীতে এসেছিলেন সরদার আহসান হাবীব। চারটি গরু বিক্রি করেছেন, দুটি তখনও বাকি। বড় গরুর চাহিদা কম জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত থেকে গরু আসলে সারা বছর ধরেই আসুক। তাহলে আমরাও কম দামে কিনতে পারতাম। কিন্তু ঈদের আগে বর্ডার খুলে দিলে কৃষক বাঁচবে না। কেউ আর গরু পালবে না।”শুক্রবার দুপুরে গাবতলী হাট থেকে গরু কিনেছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এসএম সালেহ উদ্দিন। তার কাছেও গরুর দাম বৃহস্পতিবারের চেয়ে বেশি বলে মনে হয়েছে।গতকাল সকালে দাম একটু কম ছিল। বিকেলে কিছু বেড়েছে, আজ দাম আরও বেশি মনে হচ্ছে।গাবতলী হাটের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদাই বেশি। কিন্তু শেষ বেলার বাজারে এ ধরনের সংখ্যা দেখা গেল কম। কিছু বড় গরু নিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। মিরপুর থেকে গাবতলীর হাটে এসেছিলেন ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের কর্মী মোহাম্মদ শরীফ। গরুর বাজার বেশ চড়া মনে হয়েছে তার কাছে।বাউনিয়া বাধ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের হাট থেকে ঘুরে এসেছি। এই হাটে গতকাল রাতেও প্রায় আড়াইটা তিনটা পর্যন্ত ছিলাম। ছোট গরুর দাম বেশি। হাত দেয়া যায় না। ভাগ্য ভাল, অনেক চেষ্টা করে দাম একটু কমেই কিনতে পেরেছি।

ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দা আলীমুজ্জামান একটি গরু দরদাম করছিলেন। বিক্রেতা দাম চাইছিলেন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আলীমুজ্জামান এক লাখ ৩০ পর্যন্ত দিতে রাজি। শেষে এক লাখ ৪০ হাজার টাকায় গরুটি কিনেছেন তিনি।আলীমুজ্জামান বলেন, “ঢাকার বাইরের চেয়ে ঢাকায় গরুর দাম বেশি। আমি গতকাল গাজীপুরের মাওনা হাটে গিয়ে দেখে এসেছি। সেখানে গরুর দাম এখানকার চেয়ে কম। এখানে দাম চাওয়ার কোনো ঠিক ঠিকানা নাই। একেকজন একেক রকম দাম বলে।ওই গরু ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করলেও সন্তুষ্ট নন বিক্রেতা মাঈনুল ইসলাম।চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা এ ব্যবসায়ী জানান, তার আনা ১২টি গরুর মধ্যে ১১টিই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। একটি বাকি থাকায় বাড়ি যেতে পারছিলেন না। এ কারণে ‘কিছুটা কমেই’ ছেড়ে দিয়েছেন।মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে নিজের বাড়ির তিনটি গরু নিয়ে আসা ইউনুস আলী অবশ্য বেচাবিক্রি শেষে মোটামুটি খুশি।শুরুতে গরুর দাম কম আছিল। কিন্তু কাইলকা রাইত থেইকা বাজারে দাম একটু বাড়ছে। তয় সব মিলাইয়া বাজার মিডিয়াম গ্যাছে। কেউ ঠকে নাই।

মেহেরপুরের গাংনী থেকে বড় আকারের ছয়টি গরু নিয়ে এসেছিলেন মো. আবদুল সাত্তার। এর মধ্যে তিনটি নিজের পালন করা, বাকিগুলো কেনা।ছয়টা গরুর মধ্যি তিনটা ভালই বেচিছি। বাকি তিনটা বেচতি পারলিই হয়।বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কাছে ৩০০ ফুট সড়কের পাশের হাট এবং আফতাবনগর হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুপুরের আগেই এসব হাটের বেশিরভাগ গরু বিক্রি হয়ে গেছে।