ঘূর্ণিঝড় হার্ভির আঘাতের দিন কয়েক আগেই বন্যা সুরক্ষা সংক্রান্ত সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেওয়া বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বাতিল করে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।এক প্রতিবেদনে ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর আরো দ্রুত অনুমোদনের জন্য বন্যা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি নীতি বিলুপ্ত করেছেন। এগুলোর মধ্যে ফেডারেল ফ্লাড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট স্ট্যান্ডার্ড অন্যতম।২০১৫ সালে ওবামা এমন কয়েকটি মান নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন, যার ফলে বন্যার ঝুঁকি আছে এমন এলাকাগুলোতে সড়ক, সেতু ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ অপেক্ষাকৃত কঠিন হয়ে গিয়েছিল। এ ধরনের প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনা করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল এবং ভবিষ্যতে যে পরিবর্তনগুলো ঘটবে সেগুলো প্রতিরোধে সক্ষম করে অবকাঠামো নির্মাণের কথা বলা হয়েছিল। নতুন এই বাধ্যবাধকতাগুলোর কারণে নতুন অবকাঠামো পরিকল্পনার গতি ধীর হয়ে যেতে পারে সিদ্ধান্ত করে প্রয়োগের আগেই এগুলো বাতিল করে দেন ট্রাম্প।অগাস্টের প্রথমদিকে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ট্রাম্প বলেন, আমরা কম খরচে দ্রুত অবকাঠামো নির্মাণ করতে যাচ্ছি, একই সঙ্গে অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি খুব, খুব তাড়াতাড়ি সম্পন্ন হবে।

“দ্রুত ও খুব সহজ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটি সম্পন্ন হবে, আর এটা যদি পরিবেশগত সুরক্ষার নীতিগুলো পূরণ না করে আমরা এর অনুমোদন দিবো না।যাইহোক, এরইমধ্যে ওই সুরক্ষা নীতিগুলোর কয়েকটি অপসারণ করা হয়েছে। ওই আদেশে বড় ধরনের অবকাঠামো প্রকল্পগুলো অনুমোদনের জন্য দুই বছরের সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এবং এ ধরনের প্রকল্পগুলোতে এক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলো ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে, কিন্তু পরিবেশবিদরা জোরালোভাবে এর বিরুদ্ধতা করেছেন। ওই নির্বাহী আদেশ ইস্যু হওয়ার আগেই ইউনিয়ন অব কনসার্নড সায়েন্টিস্টের র‌্যাচেল ক্লিটাস সতর্ক করে বলেছিলেন, এটি মানুষ নির্ভর করে এমন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোকে বন্যার ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

ইন্ডিপেন্ডেন্টকে তিনি বলেন, এ ধরনের বন্যায় এগুলো আরো ব্যায়বহুল ও ক্ষতিকর ফলাফল বয়ে আনবে। খোলাখুলি বললে, যে ধরনের প্রকল্পগুলো পানিতে ভেসে যেতে পারে সেগুলোতে অর্থ বিনিয়োগ করা আসলে করদাতাদের ডলারের অপচয়।তিনি আরো বলেন, যদিও আমরা দেখতে পাচ্ছি সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভারি বৃষ্টিপাত ও অন্যান্য ফ্যাক্টরের কারণে দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে, এরপরও বন্যা প্রতিরোধে অগ্রগতি থেকে সরে আসা আসলে মানুষের মতের বিরুদ্ধে যাওয়া। ঘূর্ণিঝড় হার্ভির কারণে টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। অন্তত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং বন্যাকবলিত এলাকাগুলো থেকে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই এলাকায় মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই এক বছরের সমপরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে।হার্ভির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ক্লিটাস বলেন, ঘূর্ণিঝড় হার্ভির কারণে টেক্সাস যে ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সে ধরনের ভয়াবহ ট্র্যাজেডিগুলো সত্বেও ভবিষ্যৎ বন্যার ঝুঁকি বিবেচনা না করে পুননির্মাণ করা গুরুতর ভুল হিসেবে দেখা দিতে পারে।