যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমরফারুক চৌধুরী প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে বলেন, মাননীয় প্রধান বিচারপতি, আপনি বাংলাদেশের বিচার বিভাগের দন্ডমুন্ডের কর্তা। আপনি দেশের ন্যায় বিচারের অভিভাবক। আপনি আমাদের পবিত্র সংবিধানের রক্ষক। এদেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের পাহারাদার আপনি। আপনাকে আমাদের অনেক শ্রদ্ধা। আমরা আপনাকে সম্মানের চুড়ায় রাখতে চাই। আপনাকে আমরা এমন উচ্চতায় রাখতে চাই যেখানে কোন বিতর্কই আপনাকে যেন স্পর্শ না করে। কিন্তু শ্রদ্ধেয় বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, আপনার সম্মান আমাদের পবিত্র স্বাধীনতার চেয়ে মূল্যবান নয়। আপনি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এই পবিত্র জাতীয় পতাকা, আমাদের মহান মুক্তিসংগ্রামের চেয়ে আপনি গুরুত্বপূর্ণ নন। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে, তিন লাখ মা- বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। আমাদের এই পবিত্র স্বদেশ। আপনি তার কাছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক কনা মাত্র।
যুবলীগ চেয়ারম্যান খোলা চিঠিতে বলেন-
মাননীয় প্রধান বিচারপতি, বিচারপতিরা নাকি কিছুই দেখেন না, কিছুই শোনেন না। তারা চান তথ্য-প্রমান। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিকে অবশ্যই কিছু দেখতে হয়, কিছু জানতে হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে যদি এই দেশটি স্বাধীন না হতো, তাহলে নিশ্চয়ই আপনি অন্তত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হতে পারতেন না।
সম্মানিত প্রধান বিচারপতি, আপনার নিশ্চয়ই বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস অজানা নয়। পাকিস্তানী শোষকদের নিস্পেষন আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাঙালী জাতি সংগ্রাম করেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নয় মাস যে নির্মমতা ও গণহত্যা চালিয়েছে তা নাৎসীদের বিভৎসতাকে হার মানায়। সেই পাকিস্তানকে পরাজিত করেই আমরা উড়িয়েছি আমাদের বিজয় পতাকা।
আজ স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর, বাংলাদেশ বিশে^র সম্ভাবনাময় একটি রাষ্ট্র, সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান এক জনপদ। অন্যদিকে পাকিস্তান এক ব্যর্থ, জংলী অসভ্য একটি রাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে সব সামাজিক সূচকে পাকিস্তান এখন ঢের পিছনে। পাকিস্তান একটি দুবৃত্ত রাষ্ট্র। পাকিস্তান এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে সেনাবাহিনী আর বিচারপতিরা এক সাথে বসে পাকিস্তানের ভাগ্য নির্ধারণ করে। জনগন সেখানে মূল্যহীন। পাকিস্তান এমন এক রাষ্ট্র যেখানে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পান সেনাবাহিনীর সার্টিফিকেটে। সুপ্রীম কোর্ট রায় দেয় সেনা প্রেসক্রিপশনে। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, আপনি শুধু বয়সেই আমার চেয়ে অনেক বড় নন, আপনি জ্ঞানেও আমার চেয়ে অনেক গভীর। আপনি সবই জানেন এবং বোঝেন। তাই পাকিস্তানে প্রতিটি রায়ের পিছনে থাকে অন্য উদ্দেশ্য সেটা আমার চেয়ে আপনিই ভালো জানেন। আপনি নিশ্চয়ই রায়ের পর প্রগতি চিন্তার পাকিস্তানী বুদ্ধিজীবীদের মতামত গুলো দেখেছেন। এমনকি এই রায় কোথায় থেকে উৎসারিত তাও তারা লিখেছেন।
আপনি ষোড়শ সংশোধনী রায় নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনার জবাবে বলেছেন। পাকিস্তানের সুপ্রীমকোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে…… করলো। সেখানে কিছুই হয়নি।’ আপনার এই বক্তব্যে আমি দু:খিত, লজ্জিত। দেশের বিচার বিভাগের প্রধান আমাদের পাকিস্তান শেখাবে? পাকিস্তানের উদাহরণ দেবে? যে পাকিস্তানের গণতন্ত্র হলো এক ‘কৌতুক’। যে পাকিস্তানে ‘জনগন হলো জীবন্ত লাশ, মূল্যহীন জড় পদার্থ অথবা কীট পতঙ্গ।’ আপনার প্রতি সম্মান রেখে বলছি, বাংলাদেশ বাংলাদেশের মতোই। বাংলাদেশকে বাংলাদেশের মতোই বাড়তে দিন, বিকশিত হতে দিন। আমাদের রাগ, ক্ষোভ, আবেগ, আনন্দ, দ্রোহ, কান্নাই আমাদের গর্ব, আমাদের সম্পদ। এগুলো নিয়েই আমরা থাকতে চাই। এগুলো নিয়েই আমরা বিশ^কে তাক লাগিয়ে দিতে চাই, আমরা পাকিস্তানের মতো হতে যাবো কোন দু:খে? আমরা পাকিস্তানের মতো অসভ্য, বর্বর জাতি হবো কোন লজ্জায়? আমাদের প্লীজ পাকিস্তানের কাছ থেকে কিছু শেখার নসিহত দেবেন না। এরকম নসিহত অনেক শুনেছি, ৭৫ এর খুনী মোশতাকের কাছ থেকে শুনেছি, জিয়াউর রহমানের মুখেও পাকিস্তানের বন্দনা শুনেছি, তিনিও বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর খায়েশ করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম এবং তার বশংবদ কুলাঙ্গাারাও বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল। এদেশের মানুষ জীবন দিয়ে তার ‘স্বপ্ন’ রুখে দিয়েছে। ভবিষ্যতে আবার কেউ এরকম ধৃষ্টতা দেখালে, এদেশের জনগন পাকিস্তানীদের মতো অবাক হয়ে দেখবে না, তার সমুচিত জবাব দেবে।
মাননীয় প্রধান বিচারপতি, অত্যন্ত বিনয়ের সংগে বলছি, পাকিস্তানের উদাহরণ দিয়ে আপনি ভুল করেছেন। আপনি ত্রিশ লাখ শহীদকে অপমান করেছেন। আপনি তিন লাখ বীরাঙ্গনাকে পূণ:বার লাঞ্চিত করেছেন। আপনি আমাদের পবিত্র সংবিধানকে ভুলুন্ঠিত করেছেন। আমি জানি না, ৭১ এ আপনি কোথায় ছিলেন, কি করেছেন (অনেকে এব্যাপারে আপনার সম্পর্কে অনেক কথা বলেন) কিন্তু এই মন্তব্যে আপনি প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধাকে আপনি অসম্মান করেছেন।
আমি জানি, আপনার অসীম ক্ষমতা। এই লেখার জন্য আপনি আমাকে আদালত অবমাননার জন্য তলব করতে পারেন। আামাকে তিরস্কার করতে পারেন, শাস্তি দিতে পারেন। তাতে আমার কোন দু:খ থাকবে না, কোন গ্লানি থাকবে না। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিশ^শান্তির দর্শন ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ এর আলোয় উদ্ভাসিত আমরা, বাংলাদেশকে পাকিস্তান হতে দেবো না। এজন্য প্রয়োজনে জীবন দেবো। কিন্তু আমরা পবিত্র মাতৃভূমির অসম্মান সহ্য করবো না। নব্য পাকিস্তানীদের যে রুখতেই হবে মাননীয় প্রধানবিচারপতি। এই দেশই যদি না থাকে, তাহলে আপনি থাকবেন কোথায়?