স্বজনদের সঙ্গে কোরবানির ঈদ করতে আগাম টিকেট নেওয়া ট্রেনে কিংবা বাসে যাত্রীরা ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। রাত থেকে টানা বৃষ্টি ও বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ি চলছে ধীরগতিতে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা-গোমতী সেতু টোল প্লাজা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে যানজট রয়েছে।
রোববার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতু থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কেও রয়েছে যানজট। যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানী থেকে উত্তর ও দক্ষিণের দুই মহাসড়কের যাত্রীরা।গাজীপুরের সালনা হাইওয়ে থানার ওসি হোসেন সরকার বলেন, শনিবার রাত থেকে বৃষ্টির ফলে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দুই পাশের রাস্তায় খানাখন্দের তৈরি হয়েছে। ফলে চালকরা সিঙ্গেল লাইনে চলায় গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। ধীর গতিতে চালাতে হচ্ছে গাড়ি।সকাল ৯টার দিকে কালিয়াকৈর উপজেলায় ওভারব্রিজের কাছে একটি গাড়ি বিকল হয়ে যাওয়ায় এবং স্থানীয় পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় উল্টোপথে গাড়ি চলার কারণে যানবাহন চলাচল সাময়িক বিঘিœত হচ্ছে বলেও জানান তিনি। গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি খলিলুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক মেরামত করলেও বৃষ্টির কারণে তা আবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফলে গাড়ির স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হচ্ছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে পাকুল্যা পর্যন্ত ২৫কি.মি. রাস্তায় যানজট দেখা দিয়েছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। রাতে বৃষ্টি ও সকাল থেকে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।ট্রাফিক পুলিশের মির্জাপুরের জোনের পরিদর্শক (টিআই) মো. শাহাদৎ হোসেন সেলিম জানান, রাতে বৃষ্টি ও সকাল থেকে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়া মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে পাকুল্যা পর্যন্ত ২৫ কি.মি. রাস্তায় যানজট রয়েছে। যানজট নিরসনের পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যান চলাচল স্বাভাবিক হবে বলেও তিনি জানান।এদিকে, কুমিল্লা পূর্বাঞ্চল হাই ওয়ে পুলিশের সুপার পরিতোষ রায় বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মেঘনা-গোমতী সেতু টোল প্লাজা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে যানজট রয়েছে।
তিনি জানান, সকাল পৌনে ৭টার দিকে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার এলাকায় একটি ট্রাক বিকল হলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দিকের রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে যা এখনো রয়েছে।বিকল ট্রাকটি সরিয়ে নেয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকা থেকে দাউদকান্দি বিশ্বরোড পর্যন্ত এলাকায় যানজট চলছে।পরিতোষ রায় বলেন, টোল প্লাজায় যাতে দ্রুত গাড়ি ছেড়ে দেয়া যায়, সেজন্য আমরা তাদের অনুরোধ করেছে, সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে, রেললাইনে সমস্যার কারণে কয়েকটি ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হওয়ায় সাময়িক ভোগান্তি হলেও রোববার ঈদযাত্রার প্রথমদিনটি মোটামুটি স্বস্তিদায়ক ছিল।সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিল স্বাভাবিক। সকালের ট্রেনে তেমন ভিড় না থাকলেও দুপুরের পর ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোয় মোটামুটি ভিড় দেখা গেছে। ভোরে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে রেললাইনে সমস্যা হওয়ায় ঢাকাগামী কয়েকটি ট্রেন দেরি করে কমলাপুর এসেছে। এ কারণে নীলফামারীর নীলসাগর, দিনাজপুরের একতা, জামালপুরের অগ্নিবীণা এবং একটি মেইল ট্রেন দেরি করে ঢাকা ছেড়ে গেছে।ঈদযাত্রার প্রথম দিন ঢাকা থেকে ৬৩টি ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৮টি ট্রেন ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী। ট্রেন দেরি করায় দুঃখ প্রকাশও করেছেন তিনি।সিতাংশু বলেন, “ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর স্টাফ রোড গেটে রেললাইন ভেঙে গিয়েছিল। এ কারণে ডাউন ট্রেনগুলো আসতে বিলম্ব হওয়ায় আপ ট্রেনগুলো বিলম্বে ছেড়ে গেছে। দুই লাইনের ট্রেন এক লাইনে চলায় ট্রেনগুলো দেরিতে ছাড়তে হয়েছে। বেলা পৌনে ১১টার দিকে সেটা মেরামত হয়ে গেছে। এখন দুই লাইনেই ট্রেন চলছে। আশা করছি আগামীকাল থেকে কোনো ট্রেন বিলম্ব হবে না।বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামত হওয়ায় পার্বতীপুর হয়ে দিনাজপুর এবং জামালপুর হয়ে দেওয়ানগঞ্জ এবং জামালপুর থেকে তারাকান্দি পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।ট্রেন দেরি করায় কিছুটা ভোগান্তিতে পড়লেও বাড়ি যাওয়ার আনন্দে তা ঢাকা পড়ে গেছে বলে জানালেন কয়েকজন যাত্রী।দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ার কথা সকাল ১০টায়। দুইঘণ্টা দেরি করে তা দুপুর ১২টায় ছেড়ে যায়।
এ ট্রেনের যাত্রী নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, আমরা আগেই চলে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি লেট। টানা দুই ঘণ্টা বসে থাকা খুব বিরক্তিকর। তবে এখন বিরক্ত লাগলেও বাড়ি যাওয়ার পর এটা আর থাকবে না।ঈদের আনন্দের কাছে এ ভোগান্তি তেমন কিছু নয় বলে জানান এই ট্রেনের আরেক যাত্রী আমিনুল হক। ভোগান্তি যতই হোক, শেষে সবাই যখন একসঙ্গে হই, তখন এসব আর মনে থাকে না। বাড়ির সবার সঙ্গে একত্র হওয়া, বাবা-মার সঙ্গে ঈদ করার আকাক্সক্ষা সবার থাকে। আমরা জানি যাওয়ার পথে কিছুটা কষ্ট হবে।জামালপুরের অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসের যাত্রী তারিকুল ইসলাম জানান, ঈদে বাড়ি যাওয়ার আনন্দের সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা হয় না।ঈদের সময় বাড়ি যাওয়াটা অন্যরকম আনন্দ। এটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তবে আজ ট্রেন দেরি না করলে আরও বেশি আনন্দ হতো।দুপুর সোয়া ২টায় নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনে স্ত্রী-সন্তানদের তুলে দিতে এসেছিলেন পুলিশ সদস্য ইকবাল হোসেন। তিনি জানান, ঈদের আগে এবার ছুটি কম। ভিড় এড়াতে তাদের আগে পাঠিয়ে দিয়েছেন।ঈদের বেশি দেরি নেই। বাচ্চাদেরও পরীক্ষা শেষ। তাদের আগেভাগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। বাড়ি গিয়ে মজা করুক। আমি ঈদের আগের দিন যাব।এবার ঈদের সময় প্রতিদিন সারাদেশে প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে রেলওয়ে। এছাড়া ২৯ অগাস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ঈদের পরে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।