রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২৮ শিশুর মৃত্যু ঘটনায় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের ব্যাখ্যা গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যাখ্যা নিয়ে স্বাস্থ্য সচিবকে বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ফের আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের দুই কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। সচিবের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী।গত ২১ আগস্ট স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে তলব করেন হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার আদালতে হাজির হন সচিব।ওই দুই কর্মকর্তা হলেন- ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন।ব্যাখ্যার শুনানিকালে আদালত বলেন, ১৬ মার্চ থেকে বিবাদীরা বসে আছেন। কোনও ব্যবস্থা নেননি। ওই ঘটনায় মোট ৭৬ শিশু মারা গেছে। আপনি (দুই কর্মকর্তা) বহাল তবিয়তে আছেন। আর বলছেন, দেখতেছি। এ সময় ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, আগে সতর্ক, তারপর বরখাস্ত। সতর্ক না করলে জটিলতার সৃষ্টি করতো। তখন আদালত বলেন, ‘আপনি তো (দুই কর্মকর্তা) জামাই আদরে আছেন।আদালতকে মনজিল মোরসেদ জানান, দু’জনকে বদলি বা সাসপেন্ড কিছুই করা হয়নি। পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার এ বিষয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। আদালত বলেন, ‘কোর্টকে আর খাটো করার চেষ্টা করবেন না। মার্চ থেকে বলে আসছি।
এক পর্যায়ে কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ব্যবস্থা নেওয়ার আগে শোকজ, তদন্ত আছে। আমরা ব্যাখা তৈরির জন্য সময় পাইনি। আমাদের সময় দরকার।তখন আদালত বলেন, ২৪ আগস্ট যথাযথভাবে ব্যাখ্যা দেবেন। ৭৬ শিশু মারা গেল। আপনার (সচিব) ছেলে-মেয়ে এখানে থাকে না। যারা মারা গেছে, এরা কি মরার জন্য জন্মেছে? এটা দুর্ভাগ্যজনক।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে সারা দেশে ২৮ শিশু মারা যায়। এ ঘটনায় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম ওই ঘটনায় ঢাকার ড্রাগ আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় পাঁচ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন, রিড ফার্মার স্বত্বাধিকারী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী কোম্পানির পরিচালক শিউলি রহমান, পরিচালক আব্দুল গণি, ফার্মাসিস্ট মাহবুবুল ইসলাম ও এনামুল হক। দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর ঢাকার ড্রাগ আদালতের বিচারক এম আতোয়ার রহমান পাঁচ আসামিকে খালাস দেন। তবে বিচারক তার দেওয়া রায়ে বলেন, ‘মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের তখনকার সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেনের অযোগ্যতা ও অদক্ষতার কারণে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।আদালতের রায়ের পরও ওষুধ প্রশাসনের ওই দুই কর্মকর্তার পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাইকোর্টে একটি আবেদন করলে গত ১৬ মার্চ হাইকোর্ট রুল জারি করেন। শুনানি শেষে ওষুধ প্রশাসনের ওই দুই কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণের ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। এতে স্বাস্থ্যসচিব ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালককে জবাব দিতে বলা হয়।ওই রুলের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১১ জুলাই হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দেয়, সেখানেও ওই দুই কর্মকর্তার অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়। তখন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চেয়ে আরেকটি সম্পূরক আবেদন করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।এরপর ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চেয়ে গত ৩ অগাস্ট আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের পর সোমবার স্বাস্থ্যসচিব আদালতে একটি প্রতিবেদন জমা দেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেনকে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় নতুন একটি আবেদন করেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের মনজিল মোরসেদ। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়ে সোমবার স্বাস্থ্য সচিবকে তলব করেন আদালত।