জরবায়ু তহবিল ব্যবহার করে পানি উন্নয়ন বোর্ড -পাউবোর ৬ টি প্রকল্পে অনিয়ম ও দূর্নীতি প্রমাণ পেয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি। জলবায়ু পরিবর্তনের টওভাব মোকাবেলায় নেওয়া পাউবোর চারটি প্রকল্প অনুমোদনে বিভিন্ন পর্যায় থেকে সুপারিশ ও টওভাব খাটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে টিআইবি।বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি বলেছে, এই প্রকল্পগুলোর একটিতে একজন সচিব, একটিতে ক্ষমতাসীন দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক এক মন্ত্রীর আত্মীয় ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং বাকি দুটিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রভাব খাটিয়েছেন।
এসব ব্যক্তির নাম সাংবাদিকরা জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা কারও নাম প্রকাশ করি না। শুধু অনিয়মের বিষয়টা তুলে ধরি, যাতে তারা শুদ্ধাচার চর্চার সুযোগ পান।একই কারণ দেখিয়ে প্রকল্পগুলোর নামও বলতে রাজি হননি তিনি।দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসাথে’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে পরিচালিত ছয়টি প্রকল্প নিয়ে নিজেদের গবেষণায় পাওয়া তথ্য তুলে ধরো হয়।টআইবির কর্মসূচি ব্যবস্থাপক গোলাম মহিউদ্দিন মূল প্রবন্ধে বলেন, আমরা ছয়টি প্রকল্প গবেষণার জন্য ঠিক করি,তার চারটি প্রকল্পেই প্রভাব খাটিয়ে অনুমোদন দেওয়ার মতো অনিয়ম পাওয়া গেছে।জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গৃহীত প্রকল্পগুলোর মধ্যে বড় প্রকল্পগুলো পাউবো বাস্তবায়ন করে থাকে বলে এগুলোকে বাছাই করার পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছে টিআইবি। গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, সংস্থাটি এ খাতে চলমান প্রকল্পের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৪১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যা মোট অর্থায়নের ৪০ শতাংশ।

গবেষণার কারণ ব্যাখ্যা করে গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, জলবায়ু তহবিল ব্যবহারে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করার পাশাপাশি চিহ্নিত চ্যালেঞ্জগুলো উত্তরণের সুপারিশ করা, বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ এবং জলবায়ু অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট আইন-নীতিমালা পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে ফান্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা স্বচ্ছতার বিষয়টি তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে আমরা স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা করলে তারা অন্তত এইটা আর বলতে পারবে না।কীভাবে গবেষণা চালানো হয়, সে বিষয়ে তিনি বলেন, এ গবেষণায় নিয়মানুক্রমিক নমুনায়নের মাধ্যমে জরিপে অংশগ্রহণের জন্য ৬০০ জন উত্তরদাতা বাছাই করা হয়। সেই জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে ফলাফল বের করে আনা হয়।তিনি বলেন, প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়ায় শুদ্ধাচার চর্চার ক্ষেত্রে দেখা গেছে গবেষণাধীন ছয়টি প্রকল্পের মধ্যে চারটি প্রকল্পই অনুমোদনের সময় বিভিন্ন পর্যায় থেকে সুপারিশ এবং প্রভাব খাটানো হয়েছে বলে তথ্যদাতারা জানিয়েছেন।এর মধ্যে একটি প্রকল্পে জনৈক সচিব, একটি প্রকল্পে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রীর আত্মীয় ও স্থানীয় সংসদ এবং দুটি প্রকল্পে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রভাব খাটিয়েছেন বলে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন।এই ছয়টি প্রকল্পের মধ্যে দুটির কাজের নিম্নমানের অভিযোগ পাওয়া গেছে জানিয়ে গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, এমনকি এর জের ধরে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে ঠিকাদারের লোকজনের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

আরেকটি প্রকল্পে বাঁধের নির্মাণকাজে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার আগেই বাঁধের কিছু কিছু জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।ঠিকাদারদের অনিয়মের কথা তুলে ধরে গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, একটি প্রকল্পের ঠিকাদার খাল খননের মাটি বাঁধের পাড় টেকসই করার জন্যে না দিয়ে নিজের ইটভাটায় ব্যবহার করেছেন। আবার আরেকটি প্রকল্পের ১০-১৫টি গাছ কেটে (প্রতিটি গাছের দাম গড়ে ২৮ হাজার টাকা) আত্মসাৎ করেছেন।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনগণকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে বলে টিআইবির দাবি।ছয়টি প্রকল্পের কোনোটিরই প্রকল্প কার্য়ক্রমের শিডিউল জনগণের সামনে প্রকাশ করা হয়নি। প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জনগণকে জানানোর কথা থাকলেও ৮৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানেন না কোথায় তথ্য পাওয়া যাবে। আবার ৮ জন অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে তথ্য চেয়েও পাননি।জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৯২ শতাংশ উত্তরদাতা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট তথ্য সম্পর্কে না জানার কথা জানিয়েছেন বলে গোলাম মহিউদ্দিন জানান।প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কার্যালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো তথ্য কর্মকর্তাও নেই। তিনটি প্রকল্পে তথ্য বোর্ড প্রদান করা হয়নি। দুটি প্রকল্পে তথ্য বোর্ড দেওয়া হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগে তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। একটি প্রকল্পের ভিন্ন কর্ম এলাকা থাকলেও তথ্য বোর্ড দেওয়া হয়েছে মাত্র একটিতে। তথ্যবোর্ডে অপর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে চলমান ও সম্পন্ন সাত শতাধিক প্রকল্পের একটি তালিকা দেওয়া থাকলেও জলবায়ু প্রকল্পের আলাদা কোনো তালিকা না থাকার কথাও জানিয়েছে টিআইবি।