ঢাকার রাস্তায় আগামী ২৭ অগাস্টের পর কোনো যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হলে গাড়িসহ তা জব্দের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।শব্দদূষণ রোধে ঢাকায় যানবাহনে হাইড্রলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কাজী রেজা উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার রুলসহ কয়েকটি নির্দেশনা দেন। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।শব্দদূষণ রোধে হাইড্রলিক হর্নের ব্যবহার বন্ধে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে গতকাল মঙ্গলবার রিটটি করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

আদেশের বিষয়টি জানিয়ে মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, হাইড্রলিক হর্ন আমদানি বন্ধে ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাজারে যেসব হাইড্রলিক হর্ন রয়েছে, তা সাত দিনের মধ্যে জব্দ করতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ২৭ আগস্টের পর কোনো যানে হাইড্রলিক হর্ন ব্যবহার করা হলে তা জব্দে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।আদেশে বলা হয়, ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এ বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হবে। পুলিশ প্রধান, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি (হাইওয়ে), যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) এবং বিআরটিএ’র চেয়রম্যানকে হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে। সেইসঙ্গে বাজারে থাকা সব হাইড্রোলিক হর্ন আগামী সাত দিনের মধ্যে জব্দ করে চার সপ্তাহের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হবে। আগামী ২৭ অগাস্টের পর যদি ঢাকার রাস্তায় কোনো গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হয়, তাহলে ওই গাড়িও জব্দ করতে পুলিশ কমিশনার, যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) ও ডিএমপি, মহানগরীর চার বিভাগের ট্রাফিকের ডেপুটি কমিশনারসহ ঢাকার ২০ থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।আবেদনে বলা হয়, মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী যানবাহনে শব্দ দূষণকারী হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও তা মানা হচ্ছে না।এ কারণ ব্যবহারকারী যানবাহনও জব্দের নির্দেশনা চাওয়া হয় ওই আবেদনে।

মনজিল মোরসেদ বলেন, রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি রুলও জারি করেছে।হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে বিবাদীদের নিস্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং হাইড্রোলিক হর্ন এবং গাড়িতে প্রচ- শব্দযুক্ত হর্ন বন্ধে কেন ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না- রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।পুলিশ প্রধান, স্বরাষ্ট্র সচিব, ঢাকার পুলিশ কমিশনারসহ ২০ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।সাধারণ হর্নের তুলনায় হাইড্রোলিক হর্নে শব্দ হয় কয়েক গুণ বেশি। নগরীতে চলাচলকারী যানবাহনে এ ধরনের হর্ন ব্যবহারে মারাত্মক শব্দ দূষণ তৈরি হয়।

ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া গত ১৬ অগাস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাজধানীতে হাইড্রোলিক হর্নের অননুমোদিত ব্যবহার কমে এলেও পরিস্থিতি পুরো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ট্রাফিক পুলিশ গত এক বছরে ১০ হাজার হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করেছে।চালকদের অজ্ঞতা, অসচেতনতা, অবাধে হর্ন কেনাবেচা, কম শাস্তি এবং প্রশিক্ষণের ঘাটতিকে হাইড্রোলিক হর্নের বহুল ব্যবহারের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন আছাদুজ্জামান মিয়া।