সকালের আকাশে থমথমে মেঘ, নায়ক রাজের চিরবিদায়ে মুষলধারে বৃষ্টি যেনো প্রকৃতির কান্না। সকাল গড়িয়ে দুপুর, আকাশ মেঘমুক্ত। নীল আকাশের নীচে নিজের প্রিয় আঙ্গিনা এফডিসি থেকে চিরবিদায়ের পথ চলা শুরু করেছেন বাংলার রূপালিপর্দার রাজা। লাশবাহী গাড়িতে রাজ্জাকের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছানোর আগে সকাল থেকেই এই এলাকায় জনতার ঢল নামে। প্রিয় নায়ককে শেষবার বিদায় জানাতে আসেন সরকারের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ।
মিনার প্রাঙ্গনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের করা অস্থায়ী মঞ্চে রাজ্জাকের মরদেহ নিয়ে আসা হয় বেলা ১২টার কিছুক্ষণ পর। তার মরদেহের সঙ্গে ছিলেন দুই ছেলে বাপ্পারাজ ও সম্রাট, চিত্রনায়ক শাকিব খান, সৈয়দ হাসান ইমাম, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, গোলাম কুদ্দস প্রমুখ। নায়ক রাজের প্রয়াণে দেশের চলচ্চিত্র জগতের অভিভাবক হারানোর শোক শাকিব খানের চেহারায় স্পষ্ট। এফডিসি থেকে রাজ্জাকের শেষ বিদায় যাত্রায় লাশবাহী গাড়িবহরের সঙ্গে শহীদ মিনারে আসেন দেশের বর্তমান চলচ্চিত্র জগতের এই তারকা।
এর মধ্যেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের মহীরুহকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাঁচ দশক ধরে চলচ্চিত্রে অবদান রেখেছেন রাজ্জাক। তিনি ছিলেন দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের অভিভাবক। এই মুহুর্তে তার শূন্যতা পূরণ করার কেউ নেই। সর্বস্তরের মানুষের কাছেই তিনি সমানভাবে জনপ্রিয়। আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি, তিনি এই বাংলার উত্তম কুমার।’
দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে উর্দুর আধিপত্যকে বিদায় দেয়া যুগের সূচনা করেছিলেন রাজ্জাক। চলচ্চিত্র শিল্পের এই প্রাণপুরুষকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছিলেন বর্ষীয়ান আওয়ামী নেতা এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সংস্কৃতি অঙ্গনে নায়করাজ ছিলেন নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। চলচ্চিত্রকে মানুষের অন্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া মানুষটির বিদায়ে শ্রদ্ধা জানান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
তিনি বলেন,‘ রাজ্জাক শুধু চলচ্চিত্র জগতের নীল আকাশের নীচে একাই পথ চলেননি অন্যদের পথচলা শিখিয়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্রে আবার নায়ক রাজের সেইসব সোনালি দিন ফেরানো গেলেই তাকে যথাযথ শ্রদ্ধা জানানো যাবে।’
রাজ্জাক-ববিতার স্বরলিপি সিনেমার ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’ গানটি লিখছিলেন সুরকার-গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সেই গানকে প্রাণ দেয়া নায়ককে শেষ বিদায় জানাতে এসে তিনি বলেন,‘দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গন দাঁড় করাতে রাজ্জাক সংগ্রাম করেছেন। তিনি নিজে সংগ্রাম করেছেন,করতে শিখিয়েছেন। নিজেদের ছবির একটি পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন।’
সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসসহ রাজনীতি-সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তি এবং সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে রাজ্জাকের মরদেহ জানাজার জন্য গুলশানে আজাদ মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়।