প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সরকার হিসেবে আমরা দায়িত্ব যেমন পালন করি, বিরোধী দলে যখন ছিলাম, তখনো যখন বন্যা হয়েছে, খরা হয়েছে, দুর্যোগ হয়েছে, আমরা ছুটে এসেছি। যতক্ষণ আমি আছি, ততক্ষণ আপনাদের জন্য নিবেদিতপ্রাণ।
রোববার দিনাজপুর জিলা স্কুলে বেলা ১১টায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।১৫ মিনিটের বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আজ আপনাদের দেখতে এসেছি। কারণ, দিনাজপুরসহ সারা দেশের ২১টি জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এ বন্যার পানি উত্তর দিক থেকে নেমে যাচ্ছে। আর দক্ষিণের নতুন নতুন জায়গা প্লাবিত হচ্ছে। এই দুর্যোগের কথা জানতে পেরে আমি এখানে আপনাদের পাশে ছুটে এসেছি। চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় দফার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর করে দেওয়া থেকে শুরু করে নতুন ফসল না ওঠা পর্যন্ত খাদ্য, কৃষকদের ঋণ ও বীজ এবং শিক্ষার্থীদের নতুন বইও দেবে সরকার।শনিবার পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলমান বন্যায় এ পর্যন্ত দেশের ৩০ জেলার ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার ৬২০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এবারের বন্যায় ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৫৮৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারা দেশে ৯৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। দেশে খাদ্যের মজুদ ‘পর্যাপ্ত’ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, গত আট বছরে কোনো মঙ্গা হয়নি। ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে উত্তরাঞ্চলের এক সময়ের মঙ্গা দূর করেছিলাম। আমরা সব মানুষের জন্য খাদ্য-বাসস্থানের ব্যবস্থা করব।
আগামী তিন মাস যতক্ষণ পর্যন্ত আবার ফসল না উঠবে, ততক্ষণ পর্যন্ত খাদ্য সাহায্য অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে, সেই ঘরবাড়ি যাতে দ্রুতই তৈরি করা যায়, তার জন্য টিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। পাশাপাশি ঘর তৈরি করা অথবা মেরামত করার ব্যবস্থা ইনশা আল্লাহ আমরা করে দেব। যেসব ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করতে পারেনি বা বই-খাতা নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের মাঝে পুনরায় যাতে বই বিতরণ করা যায়, সে ব্যবস্থা আমরা নেব। বৃষ্টির পানি নেমে গেলে রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হবে। আমাদের কৃষক ভাইয়েরা যাদের খেতের ফসল নষ্ট হয়েছে, তারা যাতে পুনরায় কৃষি ঋণ পেতে পারে, বীজ ও বীজতলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে যা যা করণীয়, তা তা করব।
উত্তরবঙ্গ থেকে আওয়ামী লীগের মঙ্গা দূর করার দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, উত্তরবঙ্গে ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার ছিল। হাহাকার লেগেই থাকত। প্রতিনিয়ত মঙ্গা। আওয়ামী লীগ ৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, এই উত্তরবঙ্গে কোনো মঙ্গা হবে না।প্রত্যেক মানুষ যেন খাদ্য পায়, কাজ পায়, তার ব্যবস্থা আমরা করব। আমরা মন্দা দূর করেছিলাম। দুর্ভাগ্য, আমরা ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে আবার দেশে মঙ্গা দেখা দেয়। ২০০৯-এ সরকার গঠনের পর আমরা যে ব্যবস্থা নিয়েছি, তাতে গত আট বছরে এ অঞ্চলে আর মঙ্গা হয়নি। এবারও বন্যা হয়েছে। অনেকের আশঙ্কা, এ বন্যায় মানুষ হয়তো কষ্ট পাবে। বন্যা দেখার সাথে সাথে আমরা বিদেশ থেকে খাদ্য কেনা শুরু করেছি। যথেষ্ট মজুত আমাদের আছে। যেসব এলাকায় খাদ্যশস্য নষ্ট হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে, প্রতিটি মানুষ যাতে ক্ষুধার অন্ন পায়, ইনশা আল্লাহ সে ব্যবস্থা আমরা করব।
প্রত্যেকের কাছে রিলিফ পৌঁছানোর ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ৫০ লাখ পরিবারকে আমরা ১০ টাকায় চাল দেব। বন্যা মোকাবিলায় সেনাবাহিনী, প্রশাসন, বিজিবি, পুলিশসহ প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে টিম তৈরি করে নেতৃবৃন্দের দায়িত্ব দিয়ে সুষ্ঠুভাবে রিলিফ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বারবার আসবেই, দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে। মানুষের জানমালের ক্ষতি যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা করাই আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য। আমরা সেভাবে সকল কর্মপরিকল্পনা নিচ্ছি।যাদের ঘর নেই, বাড়ি নেই, যারা নদীভাঙনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের জমি দেওয়ার আশ্বাস দেন শেখ হাসিনা। জেলা প্রশাসক মীর খায়ারুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এবং দিনাজপুর-২ আসনের সাংসদ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল হক, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল হাসান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে ১৫ জনের হাতে ত্রাণ তুলে দেন।এরপর তিনি বিরল উপজেলার ফরাক্কাবাদ ইউনিয়নের তেঘরা হাইস্কুল মাঠে ত্রাণ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে ত্রাণ বিতরণ করেন।