আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীতে বিএনপির প্রাথী নির্বাচনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চমক থাকবে বলে আশা করছে স্থানীয় নেতাকর্মীরা। রাজশাহীর ৬টি আসনে প্রার্থীতায় হিসাব নিকাশ পাল্টে যেতে পারে। প্রত্যেক আসনেই একাধিক প্রার্থী জোরে সোরে মাঠে নেমেছে এবং প্রত্যেকেই দলের হাইকমান্ডে জোর লবিং শুরু করেছেন। দলীয় প্রধানের তারুণে নির্ভর দল গঠন এবং সাবেক ছাত্রদল নেতাদের মুল্যায়নের সংকেত পাল্টে যেতে পারে সকল হিসেব নিকেশ। স্থানীয় নেতা কর্মীদের মতে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা এবং গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে দল মনোনয়ন দিবেন এবং সকল ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে সকল নেতৃকর্মী।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) এ আসনে সাবেক ৯১,৯৬,২০০১ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয় টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে ৯১ সালে প্রতিমন্ত্রী এবং ২০০১ সালে দল ক্ষমতায় থাকাকালীন পূর্ব মন্ত্রী হন ২০০১ সালে দল ক্ষমতায় থাকাকালীন পূর্ব মন্ত্রী হন ব্যারিষ্টার আমিনুল হক। আগামী নির্বাচনে তিনিই দলীয় মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত বলে নেতাকর্মীরা জানান।
রাজশাহী-২ (সদর) রাজশাহী সদর আসনকে ঘিরেই রাজশাহী বিএনপির রাজনীতি আবর্তিত। এ আসনে ৯১ সালে এমপি নির্বাচিত হোন প্রবীণ নেতা এাড. কবীর হোসেন এবং তিনি ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন, পরবর্তীতে ৯৬ সালে তিনি আবারও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কিন্তুু ২০০১ সালে কবীর হোসেনকে বাদ দিয়ে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে চমকে দেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। এাড. কবীর হোসেনকে রাজশাহী -৬ বাঘা চারঘাট আসনে দল মনোনয়ন দেন তিনি সেখানেও জয়ী হন। মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহী মেয়র এবং এমপির দায়িত্ব একসাথে পালন করেন এবং রাজশাহীর বিএনপিতে একক আধিপত্য বিস্তার করে কবীর হোসেন পন্হীদের একেবারেই কোণঠাসা করেদেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মিজানুর রহমান মিনু ওর্য়াকাস পাটি নেতা ফজলে হোসেন বাদশার কাছে অনেক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ধসনামে তার জনপ্রিয়তাই। বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে মিজানুর রহমান মিনুকে উপদেষ্টা মন্ডলিতে রাখা হয় এবং সর্বশেষ তাকে নগর বিএনপির সভাপতির পদ থেকেও বাদ দেওয়া হয়। এ আসনে এাড কবীর হোসেন অথবা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও রাকসুর সাবেক ভিপি রুহুল কবীর রিজভীকে প্রার্থী হিসাবে চাইছেন কবীর হোসেন ও বর্তমান রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পন্থীরা। রাজশাহী মহানগর বিএনপির ও মহানগর যুবদল কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতা কর্মীরা দুই তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন। রাজশাহী যুব দলের কমিটিতে শুধু মাত্র মিনু পন্থিরাই স্থান পেয়েছেন। যার ফলে বেশির ভাগ নেতা কর্মীরাই মিজানুর রহমান মিনুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের অভিমত মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহীর বিএনপিকে কুক্ষিগত করে রাখতে চাই। মিজানুর রহমান মিনু ভাইয়ের কারনেই রাজশাহীতে বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে অনেকটাই দুর্বল। দলীয় কর্মসূচীতে ৭০-৮০ জনের বেশী অফিসে সমাবেত হয় না। যার কারনে নেতা কর্মীরা আগামী নির্বাচনে রুহুল কবীর রিজভী আহম্মেদকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে সহজ হবে এবং হারানো রাজশাহী আসনটি পুনরুদ্ধারের সম্ভব হবে।
রাজশাহী-৩ (পবা মোহনপুর) ২০০৮ সালে সিমানা পুননিদ্ধারনে সৃষ্টি হওয়া এ আসনে গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেন বিএনপি নেতা এাড. কবীর হোসেন। পবা-মোহনপুর আসনকে ঘিরেই রাজশাহীর বিএনপি রাজনীতি ঘোলাটে পরীস্থীতীর সৃষ্টি হয়েছে। এ আসনে নিবাচনের জন্য প্রস্তুতী নিচ্ছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য এাড, মতিউর রহমান মন্টু। এছাড়াও এ আসনে নির্বাচন করতে চান কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সৈয়দ শাহিন শওকত। রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এাড.শফিকুল হক মিলনওএ আসনে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত্তি শুরু করেছেন। যার ফলে রাজশাহী জেলা ও মহানগরীর বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে । রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু বলেন দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশ নায়ক তারেক রহমান বিএনপির মনোনয়ন এর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন। আমাকে ম্যাডাম পবা মোহনপুরে কাজ করতে বলেছেন এবং রাজশাহী জেলা বিএনপির দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি সম্পূর্ণ আশাবাদী প্রাণপ্রিয় নেত্রী আমাকে রাজশাহী ৩ পবা মোহনপুরে মনোনয়ন দিবেন। আমি পবা-মোহনপুরের জনগণের সাথে আছি তাদের সমস্যা সমাধানে দিন রাত ইউনিয়নে ইউনিয়নে ছুটে চলেছি । ক্ষতিগ্রস্ত নেতা কর্মীদের পাশে আছি এবং থাকব দলকে সুসংগঠিত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। দল আমাকে মনোনিত করলে ইনশাআল্লাহ্ রাজশাহী-৩ পবা-মোহনপুর এই আসনে জয়ী হয়ে দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়া এই আসনটি উপহার দিবো।
রাজশাহী-৪ বাগমারা ২০০৮ সালে এ আসনে বিএনপির পক্ষে নির্বাচন করেন অধ্যাপক্ষ আবদুর গফুর তিনি বর্তমানে রাজশাহী জেলা বিএনপির সহ সভাপ্রতি। রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপ্রতি এাড, তোফাজ্জল হোসেন তপু, বাগমারা আসনে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত্তি গ্রহন করছেন। এাড, তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন আমি বাগমারার সন্তান. ২০০৮ সালে এ আসনে প্রথমে ম্যাডাম আমাকে মনোনয়ন দেন এবং পরবর্তীতে পরিবর্তন করেন। আমি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে প্রার্থী পক্ষে কাজ করেছি বিএনপির মাননীয় চেয়্যারপ্যার্সন দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাকে রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি রাজশাহী জেলা বিএনপির প্রত্যেক ইউনিটকে সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করছি। আগামী নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিবে এই প্রত্যাশা করছি ।
রাজশাহী ৫ (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) এ আসনে ১৯৯৬ও২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হন রাজশাহী জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সভাপতি এ্যাড.নাদিম মোস্তফা । ২০০৮ সালে মামলার কারনে নির্বাচন করতে পারেন নি নাদিম মোস্তাফা।২০০৮ এ আসনে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী ছিলেন নজরুল ইসলাম মন্ডল তিনি আবারও প্রার্থী হবেন। নাদিম মোস্তফার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। এছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি কেন্দ্রীয় বিএনপি সদস্য আবু বক্কর সিদ্দীক এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন। রাজশাহী -৬ (চারঘাট-বাঘা) ৯১ সালে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান তিনি ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পান কিন্তুু আওয়ামিলীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। ২০০১ সালে এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান এ্যাড.কবীর হোসেন এবং নির্বাচিত হন। সাবেক এমপি আজিজুর রহমানের মৃত্যুতে এ আসনে দৌড়ঝাপ শুরু করেন চারঘাট উপজেলা চেয়্যারম্যান ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আবু সাঈদ চাদ এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান রাজশাহী জেলা বিএনপি যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জল । দেশব্যাপী সাবেক ছাত্রদলনেতাদের মূল্যায়নের ইঙ্গিতেই নিজেকে হাইকমান্ডের কাছে তুলে ধরতে দিনরাত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা আনোয়ার হোসেন উজ্জল । আনোয়ার হোসেন উজ্জল বলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমান ঘোষিত চলমাণ গনতন্ত্রিক আন্দোলনের সকল কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি অসংখ্য মামলার আসামী হয়েছি, বার বার কারাবরণ করতে হয়েছে । চারঘাট-বাঘা র মানুষের সুখে দুখে পাশে রয়েছি দীর্ঘ দিন যাবৎ। রাজপথ ছিলাম আছি থাকব। আগামীর রাষ্ট্রনেতা দেশনায়ক তারেক রহমান আমাকে ছাত্রদলের রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন পবিত্রতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি । তৃণমূল নেতা কর্মীদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে । দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে আমরা বদ্ধপরিকর। সুনীতি সুশাসন ও সুসরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আগামীতে শিক্ষিত নেতৃত্বের হাতেই ম্যাডাম এবং আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব দায়িত্ব দিবেন। আনোয়ার হোসেন উজ্জল ছাড়াও এ আসনে রাজশাহী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন এবং জেলা বিএনপি সহ-সভাপতি মানিক খান মনোনয়ন প্রত্যাশী । সাধারণ নেতা কর্মীরা মনে করেন দলের প্রতি ত্যাগ তিতিক্ষা ও যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিলে রাজশাহীর সবকয়টি আসনেই বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হবেন এবং বিএনপির হারানো দূর্গ পুনরুদ্ধার হবে । রাজশাহীর প্রত্যেক আসনেই একাধিক প্রার্থী থাকাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সকলেই দলীয় হাইকমান্ডের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে রাজশাহীতে বিএনপির দলীয় প্রার্থীতায় চমক থাকবে বলে আশা করছে তৃণমূল নেতা কর্মীরা ।