যারা বলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা একজনের নেতৃত্বে হয়নি, তাদের ইয়াহিয়া খানের বক্তব্য পড়তে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যারা বলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা একজনের নেতৃত্বে হয়নি, তাদের পাকিস্তানের তৎকালীন শাসক ইয়াহিয়া খানের বক্তব্য পড়ার পরামর্শ দেবো। তাদের কেউ কেউ বলতে চেষ্টা করেন একজনের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়নি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু একজনকে তো নেতৃত্ব দিতে হয়। একজনের তো নেতৃত্ব থাকে। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ গঠন করতে সারাদেশ চারণের মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন। অসহযোগ ঘোষণা দিয়েছেন। মুক্তিকামী মানুষকে সাহস দিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন। ইয়াহিয়া খান তার ভাষণে একজনকে দোষারোপ করেন। অন্যজনের কথা কী আর বলেন তার ভাষণে। ইয়াহিয়া খানের ভাষণ পড়েননি, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই। ইয়াহিয়া খান তো এক ব্যক্তিকে ফাঁসির রায় দিয়ে গেছেন, কই আর কাউকে তো দেয়নি। সব কথা বলার সময় হয়নি, সময় আসবে।
বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এখনও কিছু লোক আছে দেশকে পিছিয়ে নেওয়ার চেষ্টায়। দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। জনগণের উন্নত, সুন্দর ও সম্ভাবনাময় জীবন গড়ে তুলতে চলেছিÑএটা যেন কেউ ব্যাহত করতে না পারে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার তদন্ত করতে ১৯৮০ সালে ব্রিটিশ এমপিদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের তদন্ত করতে আসতে দেয়নি জেনারেল জিয়া। আমার প্রশ্ন হলো- জিয়া যদি নির্দোষ হতো, নিশ্চয়ই তদন্ত করতে আসতে দিতো। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করে। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল খুনি মোশতাক। তার দোসর ছিল জিয়া। মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে জিয়াকে সেনাপ্রধান করে।শেখ হাসিনা বলেন, কেউ খুনিদের দিয়ে রাজনৈতিক সংগঠনও করেছে। খুনিদের নিয়ে বারবার খেলা দেখেছি। খুনি রশিদ, ফারুক ও হুদাকে দিয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন প্রগতিশীল নামে একটি সংগঠন করে। ইত্তেফাকে বসে এই রাজনৈতিক সংগঠন হয়। জেনারেল এরশাদ খুনি রশিদ ও ফারুককে দিয়ে ফ্রিডম পার্টি করে। খালেদা জিয়া খুনি রশিদ ও ফারুককে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসিয়েছিল। খুনিদের ক্ষমতার সাথী বানিয়েছিল। অপরাধীকে কেন ঘৃণা করবে না। খুনিদের ক্ষমতায় বসাতে বারবার ষড়যন্ত্র হবে। খুনিদের নিয়ে বারবার খেলা হবে।আওয়ামী সভাপতি বলেন, আজ কোনও হত্যাকান্ড হলে সবাই সোচ্চার হয়। কই, কেউ তো ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড নিয়ে একবারও প্রতিবাদ করেননি। এখন আমার কাছে যারা হত্যাকা-ের বিচার চায়Ñতখন মনে হয় আমাদের তো বিচার চাওয়ার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, কী অপরাধ করেছিল আমার মা, ভাই ও তাদের স্ত্রীরা। আমরা দুই বোন কত কষ্টে বেঁচে আছি স্বজন হারিয়ে সেটা কেবল যারা স্বজন হারিয়েছেন তারাই বুঝবেন। অন্য কাউকে বোঝাতে পারবো এই কষ্ট, এই ব্যাথা। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, সাংবাদিক আবেদ খান প্রমুখ।