দেশের বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ ২৫টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে বন্যা দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।রাজধানীর চারদিকে ৫টি নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার থেকে ১৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের ২০ জেলায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত দুই দিনে বন্যায় শিশুসহ ২৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। পাঁচ জেলায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উত্তরের পাঁচ জায়গায় ট্রেন চলছে না। নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পানি ঢুকে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলের ২৩টি স্থানে বাঁধ ভেঙে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ১৮টি জায়গায় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।

আগামী তিন দিন দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর পাঁচ থেকে সাত দিনের মাথায় বন্যার পানিতে ডুবতে পারে রাজধানীর নিম্নাঞ্চল। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সোমবার এই পূর্বাভাস দিয়েছে। তারা বলছে, সাধারণত ব্রহ্মপুত্র-গঙ্গা ও যমুনা অববাহিকার পানি একযোগে বাড়লে বড় বন্যা হয়। এ বছর ওই তিন অববাহিকা ছাড়াও তিস্তা নদীর পানিও বাড়ছে।সোমবার সরকারি হিসাবেও গতকাল পর্যন্ত বন্যায় ২০ জন মারা গেছে বলে উল্লেখ করেছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী। রাজধানীর মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, চলমান বন্যা পরিস্থিতি ৮৮-এর চেয়ে মারাত্মক হলেও তা মোকাবিলা করার সামর্থ্য সরকারের আছে।

এদিকে ভারতের আবহাওয়াবিষয়ক রাষ্ট্রীয় সংস্থা আইএমডির চলতি সপ্তাহের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশটির পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, অরুণাচল, সিকিম রাজ্যে টানা ভারী বৃষ্টি হবে। ইতিমধ্যে ওই রাজ্যগুলোর বিস্তৃত এলাকা তলিয়ে গেছে। রাজ্যগুলো দিয়ে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও গঙ্গা নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারতের ওই সব রাজ্যে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে তা বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে বলে বাংলাদেশের বন্যা ও নদী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় নয়টি বাঁধ ভেঙে গেছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ি, রাজারহাটের কালুয়া ও ফুলবাড়ীর গোড়কম-ল এলাকায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের রাজবল্লভ এলাকায় তিস্তা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ৬০ ফুট অংশ ভেঙে গেছে। ফলে স্থানীয় আলমের বাজারের ৫০০ দোকানের মধ্যে ৪০০ দোকান ভেসে গেছে।

নওগাঁর মান্দা উপজেলায় গতকাল আত্রাই নদের আটটি স্থানে বাঁধ ভেঙে আটটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নওগাঁ শহর রক্ষা বাঁধ উপচে এবং পৌরসভার অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গাইবান্ধায় পানির চাপে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অসংখ্য স্থান ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বালুর বস্তা ফেলে এসব স্থানে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। বাঁধ থেকে সরে যেতে গতকাল মাইকিং করে জেলা প্রশাসন। বাঁধ সুরক্ষায় সহযোগিতা করতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। বগুড়ার ধুনট উপজেলায় চন্দনবাইশা এলাকার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুকিতে রয়েছে।

গাইবান্ধায় ¯্রােতে সুন্দরগঞ্জ-পঞ্চনন্দ সড়কের পঞ্চনন্দ এলাকায় ১০০ মিটার অংশ ভেঙে যাওয়ায় ওই এলাকার সঙ্গে উপজেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাঁধের রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় গতকাল সকাল থেকে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সঙ্গে মান্দার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জয়পুরহাটে জয়পুরহাট-বগুড়া সড়কের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকা ও কোমর গ্রাম সড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি বইছে।
সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের অন্তত সাতটি স্থান প্লাবিত হওয়ায় সুনামগঞ্জ শহরের সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের দুটি স্থানে গতকালও পানি ছিল। কুড়িগ্রামের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় জেলার সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।দিনাজপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোখলেসার রহমান বলেন, দিনাজপুরের বিভিন্ন স্থানে রেললাইন ডুবে যাওয়ায় দিনাজপুরের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ। লালমনিরহাট রেল বিভাগীয় সূত্র জানায়, বন্যার পানিতে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটের ভোটমারী থেকে বুড়িমারী, কুড়িগ্রামের রমনা বাজার থেকে কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়, লালমনিরহাট রেলস্টেশন থেকে তিস্তা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরের দক্ষিণ অংশে দেয়াল ভেঙে গতকাল বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। তবে রানওয়েতে এখনো পানি না ওঠায় বিমান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এ ছাড়া সৈয়দপুরে আড়াই হাজার এবং দিনাজপুরে কয়েক হাজারপরিবার পানিবন্দী। জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার দেড় শতাধিক বাড়ি টাঙ্গন নদের পানিতে ডুবে আছে।

কুড়িগ্রামে সরকারি হিসাবেই প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী। সিরাজগঞ্জ সদর, শাহজাদপুর, চৌহালী, কাজীপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ৮০ শতাংশ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, যমুনা নদীর তীরবর্তী বাঁধের ভেতরের সহ¯্রাধিক বাড়িঘর চার-পাঁচ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শতাধিক গ্রামের মানুষ। নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও পূর্বধলা উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে আটটিই প্লাবিত হয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।রংপুরের ছয় উপজেলার ৩০ ইউনিয়নের দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দী। লালমনিরহাটে ১ লাখ ২ হাজার ৭৫০টি পরিবার বন্যাকবলিত। নওগাঁর মান্দা উপজেলায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পঞ্চগড়ে পাঁচ উপজেলায় সরকারি হিসাবেই ৪৫ হাজার ৩০৫টি পরিবার বন্যাকবলিত। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী।

জামালপুর : জামালপুর জেলার সার্বিক বন্যার পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটেছে। জেলার ৭টি উপজেলায় প্রায় ৪ লক্ষাধীক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এ দিকে জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের দুরমুঠ রেল ষ্ট্রেশন থেকে শুরু ইসলামপুর বুরুঙ্গী বিল এলাকায় বন্যার পানিতে লাইন পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে গত সোমবার দিবাগত রাত ৯টার পর থেকে সকল প্রকার ট্রেন যাতাযায় বন্ধ রয়েছে। বর্মমানে ঢাকা-জামালপুর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল অব্যাহত রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইসলামপুর রেল স্টেশন মাষ্টার আমিনুল ইসলাম। তিনি আরো জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জামালপুর থেকে দেওয়ানগঞ্জের পর্যন্ত সকল প্রকার ট্রেন চলাচল বন্ধু থাকবে। গতকাল ১৫আগষ্ট বিকাল ৪ টা নাগাদ গত ২৪ঘন্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ২০৮৩ সেঃ মিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ১৩৩ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী নবকুমার চৌধুরী এবং পানি মাপক গেজ পাঠক আব্দুল মান্নান। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারা জেলায় বন্যায় জলমগ্ন হয়ে পড়ায় ১১২ট সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়,১৯ উচ্চ বিদ্যালয় মাধ্যমিক মাদ্রাসা এবং কলেজসহ সর্বমোট ১৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ ঘোষনা করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান। ইসলামপুর উপজেলা সবচেয়ে বেশী বন্যা কবলিত হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।জেলার দেওয়ানগঞ্জ,ইসলামপুর,মেলান্দহ,মাদারগঞ্জ,সরিষাবাড়ি,সিংহভাগ এলাকা বন্যার পাতিতে তলিয়ে গেছে।জামালপুর উপজেলার দুই ইউনিয়ন এবং বকসিগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে প্রায় দুইলক্ষাধীক মানুষ পানি বন্দি হয়ে উঁচু বাঁধে খোলাকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত ইসলামপুর উপজেলা। ইসলামপুর উপজেলার সদরের সাথে ৮টি ইউনিয়নে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা চুকাইবাড়ী, চিকাজানী, বাহাদুনাবাদ,চর আমখাওয়া ইউনিয়ন,ইসলামপুর উপজেলার পার্থর্শী কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর সদর, পলবান্দা, ইসলামপুর পৌরসভা, গোয়ালের চর,গাইবান্দা, চরগোয়ালীনী ও চরপুটিমারী ইউনিয়ন। মেলান্দহ উপজেলার, মাহমুদপুর, শ্যামপুর, মেলান্দহ পৌরসভা, নাংলা, আদ্রা,ফুলকোচা, ঝাউগড়া, ও ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন। মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারীতলা জোড়খালী, বালিজুড়ি ও চর পাকেরদহ ইউনিয়ন। সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা, আওনা, পোগলদিঘা, সাত পোয়া ও কামরাবাদ ইউনিয়ন। বকশিগঞ্জ উপজেলার সাদুরপাড়া, মেরুরচর, বগারচর, ইউনিয়ন, জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষীরচর,তুলশিরচর ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রায় ৪ লক্ষাধীক মানুষসহ গৃহপালিত পশু মহিষ,গরু, ছাগল হাঁস, মরগি পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় বন্যা কবলিত মানুষ গুলো উচু বাঁধে,বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমি ফসল, রোপা আমন ধান, বীজতলা, আখ,পাট,কাঁচা শাখ-সবজি,তরিতরকারী,বন্যার পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হচ্ছে। এদিকে বন্যা দুর্গত এলাকায় মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি গো খাদ্যে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এব্যাপারে ইসলামপুরের স্থানীয় এমপি আলহাজ ফরিদুল হক খান দুলাল জরুরী ভিক্তিতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীসহ খাদ্য ও ত্রান মন্ত্রী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ফরিদপুর:ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গী গ্রামে পদ্মা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও নয়টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পদ্মার করাল গ্রাস থেকে ঘর রক্ষার জন্য দিশেহার হয়ে পড়েছে অসহায় মানুষ।সোমবার দুপুর ১২টা থেকে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই গ্রামের নয়টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।গতকাল বেলা দুইটার দিকে হঠাৎ করেই নদীর প্রচ- ¯্রােত বালিয়াডাঙ্গী গ্রামে আছড়ে পড়তে শুরু করে। এতে ঘরবাড়ি, বিদ্যুতের দুটি খুঁটিসহ অর্ধশতাধিক গাছ নদীতে ভেসে গেছে। ভিটেহারা দিশেহারা মানুষ আশ্রয় নিয়েছে রাস্তার ওপর।চরভদ্রাসন উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজাদ খান জানান, গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই ভাঙনে এখন পর্যন্ত ৩০টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙনের আশঙ্কায় ৫৩টি পরিবার ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। বালিয়াডাঙ্গী গ্রাম এলাকায় এক মিটার এলাকাব্যাপী এ ভাঙন শুরু হয়েছে।ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, চরভদ্রাসনের ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। পানি বাড়ার কারণে ভাঙন বাড়ছে। এ ভাঙন আরও চার-পাঁচ দিন চলতে পারে।চরভদ্রাসনের হাজিগঞ্জ থেকে এমপিডাঙ্গী পর্যন্ত ৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার অংশে ভাঙন রোধে স্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান সুলতান মাহমুদ। এ জন্য ৩২৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এটি অনুমোদন হলে ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

বগুড়া :বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছেÑ যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। ঝুঁকির মুখে বাঁধের বেশ কিছু পয়েন্ট পরায় সেগুলোতে বালির বস্তা দিয়ে ধস ঠেকানোর চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।এদিকে, প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

জয়পুরহাট :জয়পুরহাটের ৫১ টি গ্রামে পানি ঢুকে ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ এলাকাও পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে ৪ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ও শাক সবজি।নীলফামারী :নীলফামারীর সৈয়দপুরে বন্যার পানিপ্রবাহ কিছুটা কমলেও এখনো পৌরশহর ও পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এক লাখেরও বেশি মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। পানিতে ডুবে মারা গেছে দুই কিশোরসহ ৩ জন।জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫ মেট্রিক টন চাল ও ৮০ হাজার টাকা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

কুড়িগ্রাম :কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। চার লাখেরও বেশি বন্যাকবলিত মানুষের দুদর্শার শেষ নেই। ঘরবাড়ি ছেড়ে বানভাসিরা আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। বিজিবির পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।গাইবান্ধা :গাইবান্ধার পলাশবাড়ি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় করতোয়া নদীর পানি বেড়ে বাঁধের দুটি পয়েন্ট ধসে গেছে।

ময়মনসিংহ :ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় নতুন করে কোন এলাকা প্লাবিত হয়নি। বন্যাদুর্গত এলাকার ৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করছেন পানিবন্দি মানুষ। পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেটেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।এছাড়াও সুরমা নদীর সবকটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। পানিতে তলিয়ে গেছে নদীর দুই তীরের ঘরবাড়ি, দোকানপাঠ।মৌলভীবাজার :মৌলভীবাজারের হাকালুকি ও কাওয়াদীঘি হাওরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্রায় মাস ধরে পানিবন্দি থাকায় দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না হাওরবাসির।