বন্যার কারণে কেক কাটার আনুষ্ঠানিকতা বাতিল করে শুধুমাত্র দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন করেছে বিএনপি।মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে দলটি। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন শাখা কার্যালয়ে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে বিএনপির নেতারা জানান।দলটির ভাষ্য অনুযায়ী, তাদের দলনেত্রী মঙ্গলবার ৭৩ বছরে পা রাখলেন। খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৬ সালে।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দোয়া মাহফিলের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৭৩তম জন্মদিন। একই সময়ে দেশের প্রবল আকারে বন্যা দেখা দিয়েছে, সারা দেশের অবস্থা খুবই খারাপ।এই অবস্থায় দেশনেত্রী নির্দেশে জন্মদিনের সকল ধরনের আনন্দ কর্মসূচি নিষেধ করে দিয়েছেন। আমরা এজন্য আজকের অনুষ্ঠানটা শুধুমাত্র দোয়া মাহফিল ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছি। দেশের এই অবস্থায় কোনো ধরনের আনন্দ অনুষ্ঠান করা যায় না, করা উচিৎও নয়।গত দুই যুগ ধরে ১৫ অগাস্ট আড়ম্বরে জন্মদিন উদযাপন করে আসা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত বছর বন্যা, গুলশান হামলা, গুম-খুনকে কারণ দেখিয়ে কেক কাটার কর্মসূচি বাতিল করেছিলেন।এবার দিনটিতে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে যুক্তরাজ্যে থাকা বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে রয়েছেন।বিএনপি নেত্রীর আরও কয়েকটি জন্ম তারিখের হদিস মেলায় বঙ্গবন্ধু হত্যার দিনে তার জন্মদিন উদযাপনের সমালোচনা রয়েছে। একাধিক জন্মদিনের হদিসের পাশাপাশি বিএনপি জন্মসাল নিয়েও দুই রকম তথ্য পাওয়া যায়।খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৬ সালে বলে তার নতুন করা পাসপোর্টে লেখা রয়েছে। বাংলাপিডিয়াসহ খালেদা জিয়ার জীবনীর উপর রচিত কয়েকটি গ্রন্থে তার জন্ম বছর ১৯৪৫ সাল দেখানো হয়েছে।খালেদার বাবা এস্কান্দার মজুমদারের বাড়ি ফেনী হলেও তিনি দিনাজপুরে ঠিকানা নিয়েছিলেন। খালেদার জন্মও সেখানে। তার মায়ের নাম তৈয়বা মজুমদার। সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ১৯৬০ সালে খালেদার বিয়ে হয়। পঁচাত্তরে পটপরিবর্তনের পর প্রথমে সামরিক আইন প্রশাসক এবং পরে রাষ্ট্রপতি হন জিয়া।১৯৮১ সালে ৩০ মে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় জিয়া নিহত হলে তার গড়া বিএনপিতে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন খালেদা। প্রথমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং তিন বছর পর চেয়ারপারসন হন তিনি।নব্বইয়ের দশকে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের নির্বাচনে হারের পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন।সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর এখন সংসদের বাইরে থাকলেও রাজনীতিতে তার গুরুত্ব কমতে দেখা যায়নি।গত ১৫ জুলাই যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়া বিএনপি নেত্রীর ডান চোখে গত ৮ অগাস্ট পূর্ব লন্ডনের মুরফিন্ড চক্ষু হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয় বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।এবার সেই জন্মদিন ঘিরে কেক কাটার আনুষ্ঠানিকতা না করলেও চেয়ারপারসনের সুস্থতা কামনায় বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলো দোয়া মাহফিল করতে পারে বলে জানিয়েছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার বিএনপির দোয়া মাহফিলে রিজভী জানান, তার নেত্রীর চোখের ব্যান্ডেজ এখনো খোলা হয়নি। দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে ব্যান্ডেজ খোলা হবে। চিকিৎসকদের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে সুস্থ আছেন তিনি।
চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকা এবং বন্যার্তদের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি এবার খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কেক কাটা অনুষ্ঠান করছে না বলে জানিয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি জানান, সারা দেশে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী এ কথা বলেন।১৯৯৬ সালের পর থেকে প্রতিবছর ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করা হয়। ১৫ আগস্টের প্রথম ক্ষণে নেতা-কর্মীদের নিয়ে কেকও কাটতেন খালেদা জিয়া। তাঁর এই জন্মদিন পালন করা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক আছে। তবে গতবছর এবং চলতি বছর অনুষ্ঠান করেননি খালেদা জিয়া।
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অলিম্পিক প্রতিযোগিতার ন্যায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের বৈঠক শুধু উদ্বেগের নয়, ন্যায়বিচারের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করার অশুভ অপচেষ্টারই অংশ। আওয়ামী লীগ যেভাবে জোর করে রায় পাল্টিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, তা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল। আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে ম্যানুফ্যাকচার্ড জনমত তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর আওয়ামী লীগের নেতারা যেভাবে বিচারপতিদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, আবার বৈঠক করছেন, এটাকে দেশবাসী স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করেন না। তাঁরা বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করতে নিজেদের ঘুম হারাম করে ফেলেছেন।রিজভী অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতারা বন্যাদুর্গতদের পাশে না দাঁড়িয়ে গণভবন-বঙ্গভবনে দৌড়ঝাঁপ করছেন। দায়সারা একটি প্রেস রিলিজ দিয়ে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নিজেদের দায়িত্ব শেষ করছেন। এতে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, মীর সরফত আলী সপু, এম এ মালেক, আবদুস সালাম আজাদ, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, কাজী আবুল বাশার, অ্যালবার্ট পি কস্টাসহ শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।