শুধু মুখের কথা ছাড়া বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের কার্য্কর কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়া। দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে রোববার এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন এ অভিযোগ করেন।দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন আহ্বান জানান।তিনি বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় কোনো জরুরি ত্রাণ তৎপরতা নেই। বন্যা দুর্গত মানুষকে নিরাপদে উঁচু জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এখনও দেখা যাচ্ছে না।সরকারের লিপ সার্ভিস ছাড়া এই ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলায় বাস্তব কোন সার্ভিস নেই।

এর মধ্যে রোববারই বন্যা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষাপটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত দেশের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে সরকার। চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য ১৫ জুলাই যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া। এর মধ্যে লন্ডনের একটি হাসপাতালে তার চোখের অস্ত্রোপচারও হয়েছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করা বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় উঠেছেন তিনি।তিনি বলেন, দেশের বন্যা পরিস্থিতি এখন মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে তিস্তাসহ উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি নদীর দুই তীরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ফসল, বসতবাড়ি, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও মানুষের জীবন-জীবিকা সম্পূর্ণ বিপর্য্স্ত হয়ে পড়েছে। বন্যা উপদ্রুত মানুষজন ঘর-বাড়ী-জোত-জমি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে তিস্তা, ধরলা, পূণর্ভবা, ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের বেশ কয়েকটি নদী ফুলে ফেঁপে উঠে ভয়াবহ বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন লন্ডন সফরে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে নদীগুলো ফুলে ফেঁপে ওঠায় দেশের বন্যা পরিস্থিতি এখন মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। এর উপর তিস্তার উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের গেটগুলো খুলে দেওয়ার ফলে তিস্তা নদীর পানি এখন বিপদসীমার সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে তিস্তাসহ উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি নদীর দুই তীরের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল, বসতবাটি, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং মানুষের জীবন-জীবিকা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়,হু হু করে বয়ে আসা বন্যার পানিতে পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাটের নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোই শুধু নয়, জেলা শহরগুলোও তলিয়ে যাচ্ছে। শহরের পাকা রাস্তাতেও কোমর পানি ডিঙিয়ে মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে। বন্যা উপদ্রুত মানুষ ঘর-বাড়ি-জোত-জমি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।খালেদা জিয়া বলেন, বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের কার্যকর কোনও উদ্যোগ নেই। নেই কোনও জরুরি ত্রাণ তৎপরতা। বন্যাদুর্গত মানুষকে নিরাপদে উঁচু জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হলেও কার্যকর কোনও ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। রংপুর বিভাগের অনেক এলাকার অসহায় মানুষ বন্যার তা-বে সর্বস্ব খুইয়ে হাহাকার করছে।তিনি আরও বলেন, অতিসম্প্রতি হাওরে বন্যা ও পাহাড় ধসে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি হওয়ার পরও পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় আশ্রয়হীন, ক্ষুধার্ত মানুষকে সহায়তা দিতে সরকার তাৎক্ষণিক প্রস্তুতি গ্রহণে কোনও মনোযোগ দেয়নি। যে কারণে বর্তমান বন্যার তা-বে উপদ্রুত মানুষ এক চরম সংকটের মধ্যে নিপতিত হয়েছে।

বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিরোধী দলের প্রতি প্রতিশোধ স্পৃহাই যদি সরকারের মূল চালিকাশক্তি হয়, তাহলে সেই সরকার কখনোই প্রাকৃতিক দুর্যোগ সামাল দিয়ে অসহায় জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করতে পারে না।