ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বৃষ্টির পানির স্রোতে তিস্তা ব্যারাজ রক্ষার বাই পাস সড়কটি ভেঙ্গে যায়। বিধস্থ হয় রেললাইন। পানির প্রবল স্রোতে ভেসে যায় হাজার হাজার পুকুর ও প্রজেক্টের মাছ, মানুষের ঘরবাড়ি, বসতভিটা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী। তলিয়ে যায় হাজার হাজার হেক্টর জমির আবাদি ফসল।
এতে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। পানির প্রবল স্রোতে হাতীবান্ধায় রেললাইনের ৫০ ফিট যায়গা ভেসে গেছে। ফলে ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। একই উপজেলার পারুলিয়া হাট সংলগ্ন লালমনিরহাট – বুড়িমারী মহাসড়কটি ঝুকির মধ্যে রয়েছে। যে কোন মহুর্তে এটি পানির প্রবল স্রোতে ভেসে যেতে পারে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, সিংঙ্গীমারী নদীর। এদিকে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
রোববার সকালে তিস্তা নদী পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের সব (৪৪টি) গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তিস্তা ব্যারাজ রক্ষার বাই পাস সড়কটি ভেঙ্গে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা দিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করছেন।
হাতীবান্ধা উপজেলার বন্যার্ত পরিবার গুলো ঘরবাড়ি ছেড়ে বাধেঁর রাস্তায় ও মহা সড়কে আশ্রায় নিয়েছেন। গত দুই দিনের পানি বন্দি পরিবার গুলো খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন।
জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলা পাটগ্রাম উপজেলা ও পৌর শহরে ধরলার পানি প্রবেশ করেন মহা সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাউড়া ইউনিয়নের সানিয়াজান নদীর পানি প্রবেশ করে নতুন একটি গুচ্ছ গ্রাম বিলিনের প্রায় পথে। লোকজন ঘরবাড়ি ছাড়িয়ে রাস্তায় আশ্রায় নিয়েছেন।
তিস্তার পানি প্রবেশ করে সদর উপজেলার তিস্তা রেলষ্টেশন সংলগ্ন ও জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার কয়েক জায়গায় রেল লাইনে উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় লাইনের নিচে বিশাল আকার গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
এদিকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের পারুলিয়া নামক স্থানে পাকা রাস্তা উপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবেশ করছেন। হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের সাথে খানের বাড়ি যাওয়ার একমাত্র পাকা রাস্তা ভেঙ্গে যোগাযোন বিচ্ছন্ন রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। পাশাপাশি তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বিশেষ সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্ভাবাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে রোববার সকাল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
লালমনিরহাটে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান ও সিংঙ্গীমারী নদীর পানিও বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলা ও দুটি পৌরসভাসহ জেলার ৪৫ টি ইউনিয়নের প্রায় ২ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বন্যার পানি লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের পাশাপাশি দহগ্রাম সড়কের কয়েক ফুট উপর দিয়েও প্রবাহিত হচ্ছে।এরই মধ্যে পাটগ্রামের পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডসহ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী দহগ্রাম, বাউড়া, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, ফকিরপাড়া, গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ী, সিঙ্গীমারী, পাটিকাপাড়া, সিন্দুর্না, কালীগঞ্জের ভোটমারী, আদিতমারীর মহিষখোচা, দুর্গাপুর, পলাশী, লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর, মোঘলহাট কুলাঘাট ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের নদী বিধৌত এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিস্তার উজানে ভারতে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় তিস্তা পারে বসবাসরতদের সরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আহমেদ বলেন, উপজেলার আটটি ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ চেয়ে আবারও জেলা প্রশাসকের দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।