গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে দু’টি কারখানার শ্রমিকরা রবিবার কর্মবিরতি, বিক্ষোভ, অবস্থান ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধ করেছে। এসময় তারা কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুরও করেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের কয়েকদফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার সেল ও সর্টগানের গুলি ছুঁড়েছে। এঘটনায় স্থানীয় পুলিশ ও এক মাদ্রাসার কয়েক ছাত্রসহ অন্ততঃ ১২জন আহত হয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে কর্তৃপক্ষ আগামী মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) পর্যন্ত কারখানা ছুটি এবং বুধবার শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের ঘোষণা দিয়েছে।
আন্দোলনরত শ্রমিক, এলাকাবাসি ও পুলিশ জানায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ এলাকার ইউনিয়ন গার্মেন্টস্ ও ইউনিয়ন নিট ওয়্যার নামের কারখানার শ্রমিকরা বেশ কিছুদিন ধরে তাদের দু’মাসের বকেয়া বেতনসহ পাওনা ভাতাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়ে আসছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তারিখ নির্ধারণ করে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের ঘোষণা দিলেও তা পরিশোধ করেনি। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রবিবার সকালে কাজে যোগ দিতে এসে শ্রমিকরা কারখানা এলাকায় জড়ো হয়। এসময় তারা বকেয়া বেতনসহ তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ, কর্মবিরতি ও কারখানার সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর সেলিম রেজা জানান, এতে কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। পরে তারা কারখানা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী এমসি বাজার-শিশু পল্লী সড়কে অবস্থান নিয়ে ওই সড়ক অবরোধ করে কয়েকটি রিক্সা ভাংচুর করে। এসময় কিছু উত্তেজিত শ্রমিক লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দিকে রওনা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে আন্দোলনরত শ্রমিকদের বাধা দিলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এতে শ্রমিক ও পুলিশের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। শ্রমিকদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে পুলিশের এক কন্সটেবল আহত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ফাঁকা ৫/৬ রাউন্ড সর্টগানের গুলি ও ৩/৪ রাউন্ড টিয়ার সেল ছুঁড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দুপুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে কর্তৃপক্ষ আগামী মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) পর্যন্ত কারখানা ছুটি এবং বুধবার শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের ঘোষণা দিয়েছে। এ কারখানায় সহ¯্রাধিক শ্রমিক রয়েছে।
কারখানার সুইং অপারেটর লুৎফুন্নাহার ও আবু তাহের জানায়, গত ঈদুল ফিতরের সময়েও বেতন বোনাস পরিশোধের দাবীতে শ্রমিকরা আন্দোলন করে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ঈদের দু’দিন আগে বেতন পরিশোধ করা হলেও শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেয়া নি। শ্রমিকরা ঈদুল ফিতরের পর কাজে যোগ দেয়। কিন্তু প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও শ্রমিকদের বকেয় বেতন ভাতাদি পরিশোধ করছে না কর্তৃপক্ষ। এমন অবস্থায় শ্রমিকরা বাড়ি ভাড়া ও দোকান বাকী পরিশোধ করতে পারছি না।
এব্যাপারে কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) বজলুল রশিদ বলেন, শিপমেন্ট ও ব্যাংকিং জটিলতার কারনে কারখানাটি আর্থিক সংকটে পড়েছে। আর এ কারণে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করা হয় নি। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানায় ভাংচুর করেছে। আগামী ১৬আগস্ট শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধ করা হবে এবং ১৫ আগস্ট পর্যন্ত কারখানা ছুটি ঘোষণা করে নোটিশ টানানো হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় ওয়াজেদ আলী ইসলামিয়া কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মনিরুল ইসলাম গাজীপুরী বলেন, পুলিশের কাঁদানে গ্যাসে তার মাদ্রাসার ছাত্র সিদরাতুল (১১), হাবিবুর (৬), ইলিয়াস (৮), জায়েদুল (১২), আজিজুল (৬) আহত হয়। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।