ঝিনাইদহের ডাঃ কে আহম্মদ পৌর কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনে বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গনশুনানীতে অভিযোগের পাহাড় দেখে দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম বলেন, সরকারী সব অফিস আজ দুর্নীতে নিমজ্জিত। তাদের বিরুদ্ধে মানুষের এতো অভিযোগ তাই প্রমান করে। তিনি হুসিয়ার উচ্চারণ করে বলেন, জনগণ রুখে দাড়ালে দুনীর্তিবাজরা পালানোর পথ পাবে না। তিনি বলেন, দুদক দুনীর্তিবাজদের দমনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে। অনুষ্ঠানে তিনি সরকারী একাধিক কর্মকর্তাকে সতর্ক করে দেন। তিনি এমন প্রনবন্ত গনশুনানীর জন্য স্থানীয় সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান। গনশুনানীতে সবচে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ জমা হয় সড়ক ও সেতু মন্ত্রানালয়ের অধীন সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেন কাজ না করে অথবা নি¤œমানের কাজ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হচ্ছে। ফলে অল্প দিনেই পিচের রাস্তাগুলো উঠে যাচ্ছে। তবে জবাব দেওয়ার জন্য ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খান অনুষ্ঠানে আসেন নি।
জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে তাকে চিঠি দেওয়া হলেও তিনি অফিসেই বসে ছিলেন। অনুষ্ঠানে রেজিষ্ট্রি অফিস, পুলিশ, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল, ওষুধ প্রশাসন, ভুমি অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, বিআরটিএ, খাদ্য নিয়ন্ত্রক, শিক্ষা প্রকৌশল, এলজিইডি, সমাজসেবা, কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, প্রধান ডাকঘর, পিআইও, ইউপি চেয়ারম্যান, কৃষি সম্প্রসারন, পরিবার পরিকল্পনা, জেলা শিক্ষা অফিস, প্রাথমিক শিক্ষা, গনপুর্ত, ওজোপাডিকো, পানি উন্নয়নবোর্ড, পাসপোর্ট অফিস ও ঝিনাইদহ পৌরসভার বিরুদ্ধে নামে বে-নামে অভিযোগ করেন। এ সব অফিসের পক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জবাব দেন। “এবার আওয়াজ তুলুন, স্বোচ্চার হোন” এ শ্লো¬াগানকে প্রতিপাদ্য করে জেলা প্রশাসন ও জেলা দুর্নিতী প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে দিনব্যাপী এই গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের দুর্নিতী দমন কমিশনের কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অভিযোগ শোনেন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দুদক পরিচালক মনিরুজ্জামান, ডিডি জাহিদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আছাদুজ্জামান, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক আবু ইউসুফ মোহাম্মদ রেজাউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খোদেজা খাতুন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাহাবউদ্দিন আহমেদ, ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাবেক উপাধ্যক্ষ এন এম শাহজালাল, আমিনুর রহমান টুকু, হাফিজুর রহমান, খোন্দকার মিজান ও জয়া রানী চন্দসহ জেলার সকল সরকারী অফিসের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ জাকির হোসেন। গণশুনানীতে শাতাধীক অভিযোগ জমা হলেও ৬৬টি আবেদন আমলে নিয়ে শুনানী করা হয়।
শুনানীতে অনেক সরকারী অফিসের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। মানুষের সেবা দেওয়ার নামে ঘুষ বানিজ্য ও হয়রানীর বিষয়টি তুলে ধরে ভুক্তভোগীরা। দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়ে বলেন, আপনার সঠিক পথে চলুন, মানুষের সেবা দিন। তা না হলে আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ দুদক কর্মীরা মাঠেই রয়েছে। ফাঁদ পেতে আপনাদের ধরা হবে। আর একবার ধরা পড়লে আপনাদের চাকরী জীবনের সব অর্জন ধুলোয় মিশে যাবে। তাছাড়া পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিকেশন) বাদে ঝিনাইদহের প্রায় সব সরকারী প্রতিষ্ঠিানের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আছে। অুনষ্ঠানে পুলিশ ভেরিফিকেশন, চাকরী প্রদান, থানায় অভিযোগ, ও জিডি এন্ট্রির নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগের জবাবে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাহাবউদ্দিন আহমেদ অভিযোগকারীদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, এ সব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।