গাজীপুরের কালীগঞ্জে সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত সাবেক এমপি’র ছেলে হাবিবুর রহমান ফয়সাল মিয়া (৩২) হত্যাকান্ডের মূল নায়ক তৌহিদুল ইসলাম রিমনকে (২৭) অস্ত্রসহ গ্রেফকার করেছে র্যাব-১ এর সদস্যরা। এক নারীর সঙ্গে প্রেমের সখ্যতা গড়ে উঠায় ফয়সালকে হত্যা করা হয়েছে বলে গ্রেফতারকৃত যুবক র্যাবকে জানিয়েছে। গ্রেফতারকৃত রিমন কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদগাতী গ্রামের সাইদুল ইসলাম ওরফে মোসলেম উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। রবিবার দুপুরে র্যাব-১ এর স্পেশালাইজড কোম্পানী গাজীপুরের পোড়াবাড়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর মেজর মঞ্জুর মেহেদী ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার উত্তরগাঁও গ্রামের আলমগীরের চায়ের দোকানে অভিযান চালিয়ে মোঃ তৌহিদুল ইসলাম রিমনকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়। এসময় তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই দোকান থেকে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, দুই রাউন্ড তাজা গুলি, দুইটি দেশীয় রামদা এবং দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদকালে ফয়সাল হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার রিমন র্যাবকে জানায়, মামলার ৩নং আসামী মোঃ হুমায়ুনের ভাতিজির সঙ্গে সাবেক সাংসদের ছেলে ফয়সালের প্রেমের সখ্যতা গড়ে উঠায় ফয়সালকে খুন করা হয়েছে।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. সরোয়ার-বিন কাশেম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গত ৩০ জুলাই (রবিবার) রাতে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদগাতী গ্রামে বাড়ির পাশে একটি মুদি দোকানে প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য মোখলেছুর রহমান জিতু মিয়ার ছোট ছেলে হাবিবুর রহমান ফয়সাল মিয়াকে বুকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন মাসুমা সুলতানা মুক্তা বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা (নং ১) দায়ের করেন। মামলায় রিমনকে (২৭) প্রধান করে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৩/৪ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় রিমনের বাবাকেও আসামী করা হয়েছে। রিমনসহ মামলার অন্য আসামীরা হলো- কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদগাতী গ্রামের হানিফার ছেলে নওশাদ (২৫), একই গ্রামের আহসান উদ্দিনের ছেলে মো. হুমায়ুন (২৮) ও মুঞ্জুর হোসেন (৩৫), খঞ্জনা গ্রামের আব্দুর রহমান শেখের ছেলে আব্দুস সাত্তার শেখ (২৫) ও প্রধান আসামী রিমনের বাবা সাইদুল ইসলাম ওরফে মোসলেম উদ্দিন মাস্টার (৬২)। পুলিশ ঘটনার রাতেই মামলার ২নং আসামী নওশাদকে গ্রেফতার করলেও অন্যরা ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে।
র্যাব আরো জানায়, রিমন এলাকার একজন ত্রাস সৃষ্টিকারী অস্ত্রধারী চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও ধূর্ত সন্ত্রাসী। তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটায়। তার বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে এবং ইতোপূর্বে বিভিন্ন মামলায় তার সাজা হওয়ার সত্ত্বেও সে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর মঞ্জুর মেহেদী ইসলাম, র্যাব-১ এর স্পেশালাইজড কোম্পানী গাজীপুরের কোম্পানী কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, নিহতের বাবা প্রয়াত মোখলেছুর রহমান জিতু মিয়া সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়কালে কালীগঞ্জ (বর্তমান গাজীপুর-৫ সংসদীয় আসন) হতে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এবং ১৯৮৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি ১৯৭৩ সালে কালীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।