দ্বিতীয় দফায় গৃহস্থালি গ্যাসের দাম বৃদ্ধিকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। রোববার বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।অর্থাৎ এখন থেকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রাহকের কাছ থেকে এক চুলার জন্য সাড়ে সাতশ টাকা ও দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা নেওয়া হবে। পয়লা আগস্ট থেকে নির্ধারিত এই দাম বহাল রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের এই আদেশ পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি আকারে জনগণকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি)।গত ২৮ ফেব্র“য়ারি এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে বিইআরসি। গত ৩০ মে সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের দেওয়া আদেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে ৫ জুন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় ওই দিন বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি নিয়ে চেম্বার বিচারপতির দেওয়া এই স্থগিতাদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ। এ ছাড়া গ্যাসের দাম বৃদ্ধি প্রশ্নে হাইকোর্টের দেওয়া রুল ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।

এর আগে গত ২৩ ফেব্র“য়ারি বিইআরসি দুই ধাপে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এই গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রথম দফায় ১ মার্চ ও দ্বিতীয় দফায় ১ জুন থেকে দাম বাড়ার কথা। বিইআরসির আদেশ অনুযায়ী মার্চ থেকে আবাসিক গ্রাহকদের এক চুলার জন্য ৭৫০ (আগে ৬০০) ও দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা (আগে ৬৫০) বিল দেওয়ার কথা বলা হয়। আর জুন থেকে এক চুলার জন্য ৯০০ ও দুই চুলার জন্য ৯৫০ টাকা বিল দেওয়ার কথা। ওই গণবিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ক্যাবের কনজুমার কমপ্লেইন হ্যান্ডলিং ন্যাশনাল কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন রিট করেন।ফলে আগস্ট মাস থেকে গৃহস্থলি কাজে ব্যাবহার হওয়া গ্যাসের দাম আগের দামেই ফিরে যাবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

এর আগে আদালতে বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর তিতাস গ্যাসের পক্ষে শুনানিতে করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইশরাত জাহান। এছাড়াও রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী ও আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।রায়ের পর আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, গত ১ জুন থেকে দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধি অবৈধ করে রায় দিয়েছেন আদালত। ফলে ১ আগস্ট থেকে গ্যাসের মূল্য আগের দামেই ফিরে যাবে। তবে এটা শুধু ঘরোয়া কাজে ব্যাবহারের জন্যই। এছাড়া গত দুই মাস জুন এবং জুলাইয়ে অতিরিক্ত মূল্য যেহেতু আদায় করা হয়ে গিয়েছে তাই এই টাকা আদালত কনডন ( মাফ) করে দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে বিইআরসি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেন বিইআরসি’র চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম। পরে এ দাম বাড়ানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কনজুমার কমপ্লেইন হ্যান্ডলিং ন্যাশনাল কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৮ ফেব্র“য়ারি চলতি বছরের ১ জুন থেকে দ্বিতীয় দফা গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ছয়মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে বিইআরসি’র আপিলে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে রুল শুনানির নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সে অনুসারে হাইকোর্টে রুল শুনানি শেষ হয়েছে। বিইআরসি’র ঘোষণা অনুযায়ী, গত মার্চ থেকে প্রতি চুলা গ্যাসের দাম বেড়ে হয় ৭৫০ টাকা, যা জুনে বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯০০ টাকায়। আর মার্চ থেকে দুই চুলা গ্যাসের দাম হয় ৮০০ টাকা, যা জুনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫০ টাকায়। অন্যদিকে মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটার সিএনজি গ্যাসের দাম বেড়ে হয় ৩৮ টাকা, যা জুনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকায়। মার্চ থেকে গ্যাসের বাণিজ্যিক ইউনিটপ্রতি খরচ বেড়ে হয় ১৪ দশমিক ২০ টাকা, জুন থেকে এ ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৪০ টাকায়।হাইকোর্টে সাইফুল ইসলাম বলেছিলেন, বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন- ২০০৩’ এর ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কমিশন নির্ধারিত ট্যারিফ কোনও অর্থবছরে একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না, যদি না জ্বালানি মূল্যসহ অন্য কোনও পরিবর্তন ঘটে’। কিন্তু সরকার ২৩ ফেব্র“য়ারি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ১ মার্চ ও ২ জুন থেকে দুই দফায় গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে।