হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামে পঞ্চায়েতের বিরোধের জের ধরে অপহরণ করে চার শিশুকে হত্যার ঘটনায় তিনজনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুজনের সাত বছর করে কারাদন্ড ও তিনজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। বুধবার সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।ফাঁসির দন্ড পাওয়া আসামিরা হলেন রুবেল মিয়া, আরজু মিয়া ও উস্তার মিয়া।পাশাপাশি দশ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আর রুবেলের ভাই জুয়েল মিয়া ও শাহেদকে সাত বছরের কারাদ-ের পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক।

হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার জুয়েল-রুবেলের বাবা আব্দুল আলী বাগাল এবং পলাতক আসামি বাবুল মিয়া ও বিল্লালকে আদালত খালাস দিয়েছে।এই রায়ে বাদী-বিবাদী কোনো পক্ষই সন্তুষ্ট হয়নি।মামলা পরিচালনাকারী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি কিশোর কুমার কর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।গত বছরের ১২ ফেব্র“য়ারি বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আবদাল মিয়া তালুকদারের ছেলে মনির মিয়া (৭), ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), আবদুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আবদুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১০)।মনির সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে, তার দুই চাচাতো ভাই শুভ ও তাজেল একই স্কুলে দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। আর তাদের প্রতিবেশী ইসমাইল ছিল সুন্দ্রাটিকি মাদ্রাসার ছাত্র।

নিখোঁজের পাঁচ দিন পর গ্রামের উত্তরে ইছাবিল থেকে চারজনের বালুচাপা দেওয়া লাশ উদ্ধার হলে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বাহুবল থানায় নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মনির মিয়ার বাবা আবদাল মিয়া।গত বছরে ১২ ফেব্র“য়ারি বিকালে বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আবদাল মিয়া তালুকদারের ছেলে মনির মিয়া (৭), ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১০)।মনির সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে, তার দুই চাচাত ভাই শুভ ও তাজেল একই স্কুলে দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। আর তাদের প্রতিবেশী ইসমাইল ছিল সুন্দ্রাটিকি মাদ্রাসার ছাত্র।নিখোঁজের পাঁচ দিন পর ইছাবিল থেকে তাদের বালিচাপা লাশ উদ্ধার হলে দেশজুড়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বাহুবল থানায় নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মনির মিয়ার বাবা আবদাল মিয়া।২০১৬ বছরের ২৯ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির তৎকালীন ওসি মোক্তাদির হোসেন নয়জনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দেন। সেখানে বলা হয়, সুন্দ্রাটিকি গ্রামের দুই পঞ্চায়েত আবদাল মিয়া তালুকদার ও আব্দুল আলী বাগালের মধ্যে পারিবারিক বিরোধের জেরে ওই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়।আসামিদের মধ্যে বাচ্চু মিয়া র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর মামলার বিচারকাজ শুরুর পর ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।এরপর গত ১৫ মার্চ মামলাটি সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে আরও সাতজনের সাক্ষ্য শেষে রায় দেওয়া হল।রায়ে সন্তুষ্ট হয়নি বাদী-বিবাদী কোনো পক্ষই।বাদীপক্ষের আইনজীবী বিশেষ পিপি কিশোর কুমার কর বলেন, মামলার রায়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। এ রকম একটা নির্মম ঘটনায় আমরা আশা করেছিলাম সব আসামির মৃত্যুদন্ড হবে।অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আসামিপক্ষও।আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. শফিউল আলম বলেন, এ রায় আইনেই দৃষ্টিতে ন্যায় বিচারের পরিপন্থী।আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে তিনি জানান। এটি সিলেট বিভাগের সবচেয়ে চ্যাঞ্চল্যকর ঘটনা। পরিকল্পনা করে নিষ্পাপ চার শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা পরিকল্পনায় আসামিদের সবাই জড়িত ছিলেন। সবার শাস্তি হওয়া উচিত ছিল।

তিনি সাক্ষীদের বরাতে বলেন, পঞ্চায়েতের দ্বন্দ্ব নিরসনে মামলার প্রধান আসামি আব্দুল আলী বাগালকে আপস করার কথা বলা হলে বাগাল নিজেই বলেছিলেন, আগে অনেক পাপ করেছি। আর একটি পাপ করেই তওবা করে নেব। কোনো আপস করব না। তার এ কথাই প্রমাণ করে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলে পর্যালোচনার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।মামলার প্রধান আসামি আব্দুল আলী বাগাল খালাস পাওয়ায় অসস্তোষ প্রকাশ করেছেনে।এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. শফিউল আলমও এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।তিনি বলেন, এ রায় আইনের দৃষ্টিতে ন্যায় বিচারের পরিপন্থি। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।আসামিদের মধ্যে রুবেল মিয়া, আরজু মিয়া ও পলাতক উস্তার মিয়াকে মৃত্যুদন্ডসহ ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।আর শাহেদ ও রুবেলের ভাই জুয়েল মিয়াকে সাত বছরের কারাদ-সহ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক। অনাদায়ে তাদের আরো ছয় মাস সাজা খাটতে হবে।হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের চার শিশু হত্যা মামলার প্রধান আসামি খালাস পেয়েছেন শুনে মূর্ছা গেছেন নিহত তিন শিশুর মা। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।বুধবার দুপুরে রায়ের খবর শুনে প্রথমে নিহত ইসমাইলের মা মিনারা বেগম মূর্ছা যান। তাঁকে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরপর নিহত তাজেলের মা মিনারা খাতুন ও মনিরের মা সুলেমা বেগমও মূর্ছা যান। তাদেরও ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে হাসপাতাল থেকে মামলার বাদী আবদাল মিয়ার ছোট ভাই শাহজাহান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৮ জুলাই মামলার যুক্তি-তর্কের দিন আমরা আদালতে গিয়েছিলাম। ওই দিন আসামিরা হুমকি-ধমকি দিয়েছিলেন। এ কারণে আজ রায় শুনতে আদালতে যাইনি। যা হওয়ার তো হবেই, তাই আমরা কেউ যাইনি আদালতে।সুন্দ্রাটিকি গ্রামে পঞ্চায়েতের বিরোধের জের ধরে অপহরণ করে চার শিশুকে হত্যার ঘটনায় আজ তিনজনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুজনের সাত বছর করে কারাদন্ড ও তিনজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন।