ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, চিকুনগুনিয়া নামে যে কিছু আছে, এটাই জানা ছিল না। মে মাসের প্রথম দিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি আমার নজরে আসে।এরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আমার কথা হয় এবং ২১ মে বিষয়টি বোঝার জন্য একটি সেমিনারের আয়োজন করি। এর আগে চিকুনগুনিয়া নামে যে কোনও শব্দ আছে, তাই জানতাম না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গেও সেদিনই কথা হয় এবং তখন থেকে এ রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানি ও তখন থেকেই আমাদের কাজ শুরু হয়।মঙ্গলবার স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এ ‘চিকুনগুনিয়া: সচেতনতা শীর্ষক আলোচনা’ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ল্যাবএইড ও স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আয়োজিত এ সভায় সাঈদ খোকন দাবি করেন, দক্ষিণ সিটি করপোরশনে চিকুনগুনিয়া উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে, আর এটা আমি তথ্যপ্রমাণ দিয়েই বলতে পারবো। এসময় সভায় উপস্থিত অধিকাংশই তার এ দাবির সঙ্গে একমত নন বলে জানান।
মেয়র বলেন, আমাদের বুঝতে হবে, চিকুনগুনিয়ার জীবাণু বহনকারী এডিস মশা স্বচ্ছ পানিতে জন্মায়, অন্যদিকে কিউলেক্স মশা জন্মায় জলাবদ্ধ জায়গায়। এক্ষেত্রে জলাবদ্ধতা অবশ্যই বড় এক সমস্যা। আমাদের পক্ষে বাড়ির ভেতরে গিয়ে ফগিং করা সম্ভব হয় না। তবে কোনও নাগরিক যদি আমাদের অ্যালাউ করেন, সিটি করপোরেশন বাসায় বাসায় গিয়ে মশা নিধনের কাজ করবে।চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের জনবল সংকট আছে, এটা সত্যি। তবে ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধনের কাজ চলছে। নিজেকে ডিফাইন করার জন্য বলছি না, আমি চাই, আমার নাগরিকদের মধ্যে যে ভয়-আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, সেটা দূর হোক, কেটে যাক। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। মেয়র হিসেবেই আমার দায়িত্ব, নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের মনের সংশয় দূর করা, তাদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনা।
তিনি আরও বলেন, চিকুনগুনিয়া বড় সমস্যা, এটা সত্যি। ব্যাথায় অনেকে ভুগছে, এটাও সত্যি। আমরা তাদের সাহায্য করার জন্য হোম ওয়ার্ক করছি, এ ব্যাপারে এখনও কোনও ঘোষণা দেইনি। তবে এখন বলছি, কোনও নাগরিক যদি আমাদের টিমকে কল করে, তাহলে তার বাসায় আমাদের ফিজিওথেরাপিস্ট চলে যাবে, আমরা সেই প্রিপারেশন নিচ্ছি। চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীদের ব্যথা নিরাময়ের জন্য ‘অনকলে’ আমাদের ফিজিওথেরাপিস্টরা বাসায় যাবে, সেই সার্ভিস দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।সাঈদ খোকন বলেন, আমাদের প্রায় সাড়ে তিনশ’র মতো কর্মী রয়েছে, সমপরিমাণ স্প্রে মেশিন রয়েছে। তবে তা যে প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত, এটা বলার কোনও সুযোগ নেই। স্প্রে মেশিন, ফগার মেশিন আরও সংগ্রহ করা হবে এবং তার জন্য বাজেট রাখা হয়েছে। চিকুনগুনিয়ার এবারের অভিজ্ঞতা আগামীতেও কাজে লাগবে বলে জানান তিনি।চিকুনগুনিয়া মহামারি রূপ নিয়েছে কি না, আলোচকদের এ প্রশ্নে ল্যাবএইড হাসপাতালের ব্যস্থ’াপনা পরিচালক ডা. এএম শামীম বলেন, যদি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১৫ জন আক্রান্ত হয় এবং সে অবস্থা টানা দুই সপ্তাহ চলে, তবে তাকে মহামারি বলা যায়।
এ আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সমীরণ কুমার সাহা, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী নওশাদ উন নবী, ডায়াবেটিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খাজা নাজিমুদ্দিন, ডা. মরিয়ম ফারুকী স্বাতী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস।