বরগুনা সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমনের বরিশালে নাজেহাল হওয়ার ঘটনায় সারা দেশে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে ‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার’ কারণে দুই জেলা প্রশাসককে সরিয়ে দিয়েছে সরকার। বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান এবং বরগুনার জেলা প্রশাসক বশিরুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর নুরুজ্জামান আহমেদের একান্ত সচিব (পিএস) হাবিবুর রহমানকে বরিশাল এবং পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোখলেসুর রহমানকে বরগুনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি জানায়, এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারির প্রক্রিয়া চলছে।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ব্যবহৃত পঞ্চম শ্রেণির এক শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ ওঠে বরগুনার ইউএনও গাজী তারিক সালমনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত ৭ জুন তার বিরুদ্ধে বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মানহানির মামলা দায়ের করেন বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। ওইদিন মামলা আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারির আদেশ দেন।গত ১৯ জুলাই গাজী তারিক সালমন আদালতে হাজির হলে প্রথমে তার জামিন নামঞ্জুর করে গারদে পাঠান বিচারক। পরে তাকে জামিন দেন আদালত।

এদিকে, শিশুর আঁকা জাতির জনকের ছবি ব্যবহার করে কার্ড ছাপানোর কারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজেহাল হওয়ায় ভীষণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে অ্যাডভোকেট ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা শাখার ধর্মষিয়ক সম্পাদকের পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এরপর গত রবিবার তিনি মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন।এ ঘটনায় ইউএনও গাজী তারিক সালমনকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আজ (সোমবার) বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো.সাইফুজ্জামান এবং বরগুনার জেলা প্রশাসক বশিরুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান সোমবার বলেন,বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান এবং বরগুনার জেলা প্রশাসক বশিরুল আলমকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফেরত আনা হয়েছে। তাদের জায়গায় নতুন দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।সমাজ্যকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর পিএস এর দায়িত্ব পালন করে আসা হাবিবুর রহমানকে জেলা প্রশাসক করে পাঠানো হয়েছে বরিশলে। আর বরগুনার জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়েছেন পাবনা জেলা পরিষদের সিইও মোখলেসুর রহমান।

দুই ডিসিকে প্রত্যাহারের কারণ জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক খান বলেন, তারা যে দায়িত্বে ছিলেন, তা পুরোপুরি পালন করতে পারেননি, প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিতে পারেননি।

তারিক সালমন বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকাকালে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে ছাপিয়েছিলেন’ অভিযোগ করে গত ৭ জুন মামলা করেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজু।ওই মামলায় সমন জারির প্রেক্ষাপটে ১৯ জুলাই তারিক সালমন আদালতে হাজির হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মো. আলী হোসাইন। একই বিচারক দুই ঘণ্টা পর ইউএনও তারিকের জামিন মঞ্জুর করেন।তারিক সালমন বলছেন, আগৈলঝাড়া উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিবস ও জাতীয় শিশুদিবস-২০১৭ উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই শিশুর আঁকা দুটি ছবি ব্যবহার করে স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রটি তৈরি করা হয়েছিল।আদালত প্রাঙ্গনে ইউএনও তারিককে পুলিশ ধরে নেওয়ার ছবি প্রকাশ হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিস্মিত হয়েছেন জানিয়ে তার উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম গণমাধ্যমকে বলেন, ওই ছবিতে বিকৃত করার মতো কিছু তারা দেখেননি বরং এটি একটি ‘সুন্দর কাজ’।এই সমালোচনা আর ক্ষোভের মধ্যে শুক্রবার ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। তারিক সালমনকে নাজেহালের দিন বরিশালের আদালতে দায়িত্বরত পুলিশের ছয় সদস্যকে শনিবার সরিয়ে দেওয়া হয়।এই প্রেক্ষাপটে রোববার মামলা প্রত্যাহার করে নিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওবায়েদ উল্লাহ সাজু বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবিটি যে শিশুর আঁকা- তা তার জানা ছিল না।এদিকে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ ওঠার পর বরিশালের জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকেও তারিক সালমনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল। পরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছিল।এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সোমবার সাংবাদিকদের জানান, ইউএনওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মত কিছু তারা পাননি। এ কারণে বিষয়টির নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে।তারিক সালমনের বিরুদ্ধে মামলা ও তার পরের ঘটনাপ্রবাহে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা- তা খতিয়ে দেখতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি করেছে বলেও জানান তিনি।