ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশ জলবায়ু মোকাবিলাসংক্রান্ত যেকোনো দেনদরবারে সব সময় সক্রিয়। বিদেশি সহায়তা আসার আগেই নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু তহবিল গঠন করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ইতিবাচক। এখন যে কাজগুলো করছে, তাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।সোমবার রাজধানীর মাইডাস ভবনে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন। টিআইবির উদ্যোগে করা জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে স্বতঃপ্রণোদিত অঙ্গীকার ও প্রতিপালন : দক্ষিণ এশীয় অভিজ্ঞতাভিত্তিক পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফল জানানোর জন্য এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বৈশ্বিকভাবে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্র ৬ শতাংশের কম গ্যাস নিঃসরণের দায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর। তবে, বৈশ্বিকভাবে এ গ্যাস নির্গমনের প্রবৃদ্ধির হার ১ শতাংশ হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় তার হার ১ শতাংশ। তাই সবার দায়িত্ব আছে, বিশেষ করে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য দায়টা সরকারকেই নিতে হবে। এর পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন ও জনগণকেও ভূমিকা পালন করতে হবে।ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ুসংক্রান্ত প্রকল্পসহ যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে মূল সমস্যা স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসনের ঘাটতি। জলবায়ু মোকাবিলাসংক্রান্ত প্রকল্পে বিদেশি অর্থায়ন হবে। তাই আগে থেকেই বলা যায়, প্রাক-উদ্বেগ জানিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতি ধারণা সূচকে ২০১৬-এর তালিকায় বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সূচক মান বা স্কোর যথাক্রমে ২৬, ৪০, ৩৬, ২৯, ৩২ ও ৩৬। সূচকটির গড় মান ৪৩-এর নিচের যেকোনো স্কোরপ্রাপ্ত দেশের সরকারি খাত অনেক বেশি মাত্রায় দুর্নীতিপ্রবণ।সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের পরিচালক অধ্যাপক এ কে এনামুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন সম্পর্কে জানানো হয়, জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক কাঠামো কনভেনশনের উদ্যোগে পরিচালিত ১৯৫টি রাষ্ট্রপক্ষের আলোচনায় কার্বন নিঃসরণ কমাতে দেশগুলোর কাছ থেকে অঙ্গীকার আহ্বান করা হয়। এ আহ্বানের পর দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা স্বেচ্ছায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৈশ্বিক আর্থিক সহায়তায় কার্বন নিঃসরণ কমাতে সম্মত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর করা সে অঙ্গীকার অনুযায়ী, সরকার ও গবেষক এবং বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজকে অংশীজন হিসেবে বিবেচনা করে তাদের মতামত নেওয়া হয় গবেষণায়। ওয়েব লিংকের মাধ্যমে দেশগুলোর অংশীজনদের কাছে ই-মেইলে প্রশ্ন পাঠিয়ে মতামত সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশে ৬৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রশ্ন পাঠানো হয়। চূড়ান্তভাবে দেশগুলোর কাছ থেকে ১৪০টি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। তার ফলাফল বিশ্লেষণ করেই এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশগুলোর সরকার যে বিষয়গুলোতে অঙ্গীকার করেছে, সে ব্যাপারে সরকার ও গবেষকেরা এনজিও ও বেসরকারি অংশীজনের তুলনায় কম সচেতন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, রেল ও নৌপথ ব্যবহার করে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে আনা যে সম্ভব, সে সম্পর্কে বেসরকারি খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অনেক কম ধারণা রাখেন। একইভাবে অফিস অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফ্যান পরিবর্তন করেও যে গ্যাস নিঃসরণ কমানো যায়, সে সম্পর্কেও ধারণা কম।বাংলাদেশে জরিপে অংশ নেওয়া অংশীজনের মতে, প্রশমন বিষয়ে প্রতিশ্রুতির বিপরীতে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে অংশীজনের সন্তুষ্টির মাত্রা অত্যন্ত কম। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও নেপালের অর্জন মাত্র ৫০ শতাংশ; তবে ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার অর্জন ৩০ শতাংশের নিচে।জরিপে অংশ নেওয়া অংশীজনেরা বাংলাদেশের জন্য কার্বন নিঃসরণ কমানোর সহজ ১০টি প্রধান কৌশলের কথা বলেছেন। কৌশলগুলোর মধ্যে তিনটিই হলো পরিবহনসংক্রান্ত।এগুলো হলো যানজট কমানো,নগর পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নগরে যান নিয়ন্ত্রণ কৌশল উন্নয়ন। অন্যান্য দেশেও যানজটের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ওপর করা গবেষণার সার্বিক পর্যবেক্ষণে দক্ষতার সঙ্গে কম খরচে অর্থনীতিতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর সহজ উপায় বের করার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। জ্বালানি খাতকে দক্ষ করার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। গবেষণায় দেশগুলোর যে ১৮টি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা পাওয়া গেছে, তার ১১টিই গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর জন্য প্রণোদনাবিষয়ক আর পাঁচটি বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর বিনিয়োগের প্রায় প্রতিটিতেই বেসরকারি খাতের ভূমিকা রয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির উপদেষ্টা অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, ক্লাইমেট ফিন্যান্স গভর্নেন্সের জ্যেষ্ঠ প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাকির হোসেন খান গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।