যুক্তরাজ্যে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য টেকনিক্যাল ব্যারিয়ার অফ ট্রেড (টিবিটি) ও সেনেটারি এন্ড ফাইটো সেনেটারির (এসপিএস) মতো ট্রেড বেরিয়ার দূর করার আহবান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। জেনেভা সফররত বাণিজ্যমন্ত্রী বুধবার রাতে (এইড ফর ট্রেড গ্লোবাল রিভিউ-২০১৭ সভায় যোগদান শেষে যুক্তরাজ্যের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক স্টেট মিনিস্টার রোর্ড বাটিস-এর সাথে বৈঠককালে এই আহ্বান জানান।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, উন্নত বিশে^র কাছ থেকে স্বল্প উন্নত (এলডিসি) ভুক্ত দেশগুলোর জন্য ডিউটি ও কোটা ফ্রি এবং রুলস অফ অরিজিন শিথিল সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও উন্নয়নের অংশিদার। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানির স্থান। বাংলাদেশ এ মুহূর্তে ৩৪.৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রপ্তানি করছে, এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেষ্টমেন্টে (এফডিআই) দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। যা মোট এফডিআই-এর প্রায় ১৫.২৬ ভাগ।

ব্রেক্সিটের কারণে বাংলাদেশসহ এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যনীতির কোন পরিবর্তন হবে না, এমন ঘোষণার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, সেনেটারি এন্ড ফাইটো সেনেটারি (এসপিএস) এবং টেকনিকেল ব্যারিয়ার অফ ট্রেডের (টিবিটি) মতো প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা হলে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী পণ্যের রপ্তানি আরো বাড়বে। ব্রেক্সিট পরবর্তি বাণিজ্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে চুক্তি বা যৌথ ইকোনমিক কমিশন গঠন করলে যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি পাবে।তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এখন ৩৪.৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তৈরী পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে। যুক্তরাজ্যসহ বিশ^ ক্রেতাগোষ্ঠির সুপারিশ মোতাবেক তৈরী পোশাক কারখানাগুলো আধুনিক ও নিরাপদ গ্রীণ ফ্যাক্টরিতে পরিণত করা হয়েছে। বিল্ডিং ও ফায়ার সেফটি নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন নিরাপদ ও কর্মবান্ধব পরিবেশে শ্রমিকরা কাজ করছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিশে^র সাথে মিলিয়ে সময়োপযোগি শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ইপিজেড আইন সংশোধন করা হ”েছ। বিশে^র বড় বড় তৈরী পোশাকের গ্রীণ ফ্যাক্টরি এখন বাংলাদেশে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিশে^র কাছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ সফলভাবে এমডিজি অর্জন করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করবে। গত দশকে বাংলাদেশে জিডিপি ছিল গড়ে ৬ ভাগের বেশি, গত বছর অর্জিত হয়েছে ৭.১১ ভাগ। ফলে, বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের হার ২৪.৮ ভাগ এবং হত দরিদ্র মানুষের হার ১১.৯ ভাগে নেমে এসেছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১ হাজার ৬০২ মার্কিন ডলার এবং মানুষের গড় আয়ু ৭১ বছর।

এছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী বিশ^বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক রোবার্তো আজিভেডো, ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড এন্ড ডেভলপমেন্ট (ইউএনসিটিএডি)- এর সেক্রেটারি জেনারেল মুখিসা কিটুয়ি, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার (আইটিসি)’র নির্বাহী পরিচালক আরানচা গনজালেজ এবং ওয়াল্ড ব্যাংক গ্রুপের সিনিয়র ডিরেক্টর-এর সাথে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা কামনা করেন।