উইলিয়াম শেক্সপিয়র রচিত ‘হ্যামলেট’ বিশ্ববাসীর অতি পরিচিত এবং অতি আদৃত একটি বিয়োগান্ত নাটক। গত চার’শ বছর ধরে এই নাটকটি বিশ্বের অগণিত দেশে বিরতিহীনভাবে মঞ্চে অভিনীত হয়ে আসছে। উইলিয়াম শেক্সপিয়র স্মরণে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বছরব্যপী অনুষ্ঠানমালার অন্যতম আয়োজন সৈয়দ শামসুল হক অনুদীত ‘হ্যামলেট’ প্রযোজনা। প্রযোজনাটি প্রথম মঞ্চায়ন হয় গত ১৬ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে। আগামী ১৪ জুলাই’১৭ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬.৩০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ‘হ্যামলেট’ প্রযোজনার তৃতীয় মঞ্চায়ন। প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন বিশিষ্ট নাট্য নির্দেশক জনাব আতাউর রহমান।

উইলিয়াম শেক্সপিয়রের-হ্যামলেট
অনুবাদ: সৈয়দ শামসুল হক, নির্দেশনা: আতাউর রহমান, প্রযোজনা উপদেষ্টা: লিয়াকত আলী লাকী। অভিনয়: হ্যামলেট: মাস্্উদ সুমন / শফিকুল ইসলাম (শাফিক), ক্লডিয়াস: শামীম সাগর / শরীফ সিরাজ, গার্টরুড : সংগীতা চৌধুরী / মেরিনা মিতু, পলোনিয়াস : আমিনুর রহমান মুকুল/ শাহারিয়ার খান, লেয়ার্তেস: শফিকুল ইসলাম (শাফিক)/ যোজন মাহমুদ, হোরেশিও: মো: সোহেল রানা / সাঈদ রহমান, ওফেলিয়া: কান্তা জামান / মেহেজাবীন মুমু, প্রেতাতœা: শরীফ সিরাজ / শামীম সাগর, যাজক: বাপ্পি আমীন, বৃদ্ধা: তৃপ্তি রাণী মন্ডল, গোরখাদক : শামীম শেখ / ফোকরুজ্জামান চৌধূরী, অমাত্য: সাঈদ রহমান, শরীফ সিরাজ , মেরিনা মিতু, যাত্রাদলের রাজা: মো: সাইফুল ইসলাম মন্ডল / আজগর রাব্বী, যাত্রাদলের রাণী: মেরিনা মিতু / শ্রেয়শ্রী সরকার, প্রহরী: কুমার প্রাঙ্গণ, তপন কুমার, আল-আমীন সোহাগ, সাইফুল ইসলাম,আহসান হবীব বিপু, আতাউর রহমান, দাসী: ফারজানা কামাল মিম , স্বর্ণালী রায় পুতুল, যাত্রাদল: মেহেজবীন মুমু, বাপ্পি আমীন, কুমার প্রাঙ্গন, মীম, শ্রেয়শ্রী সরকার, আহসান হাবীব বিপু, আজগর রাব্বী, আতাউর রহমান, যাত্রা দর্শক: শামীম শেখ, আল আমীন সোহাগ, সাইফ, অসি পরিচালক: শরীফ সিরাজ / আজগর রাব্বী,পরিচারক : তপন কুমার, আহসান হাবীব বিপু, নৃত্যদল : মেহজাবীন মুমু, বাপ্পি আমীন, কুমার প্রাঙ্গণ, ফারজানা কামাল মিম, শ্রেয়শ্রী সরকার,আহসান, হাবীব বিপু, স্বর্ণালী রায় পুতুল, মেরিনা মিতু, সাইফ তপন, আজগর রাব্বী, শামীম শেখ, আল আমীন সোহাগ

নাট্য কাহিনী হ্যামলেট: উইলিয়াম শেকসপীয়রের বিয়োগান্তর নাটক ‘হ্যামলেট’ রচিত হয় ১৫১৯ ও ১৬০২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যকালীন সময়ে। এই নাটকটি শেকসপীয়রের সবচেয়ে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় নাটক হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত।

নাট্যকাহিনীর সূচনা হয় ডেকমার্কের রাজা হ্যামলেটের মৃত্যু ঘটনাকে কেন্দ্র করে, যিনি ছিলেন তরুণ যুবরাজ হ্যামলেটের জনক। রাজার মৃত্যুর পর তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্লডিয়াস, যুবরাজ হ্যামলেটের পিতৃব্য সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং তাঁর অগ্রজের স্ত্রী ও যুবরাজ হ্যামলেটের জননী গারট্রুডের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। জনককে হারানোর ব্যাখ্যা, জননীর সাথে পিতৃব্যের পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হওয়া এবং সর্বোপরি পিতৃব্যের সিংহাসনে আসীন হওয়া, যুবরাজ হ্যামলেটের জীবনে মর্মমূলে নাড়া দেয়; যুবরাজ প্রায় শোকে-দুঃখে পাগল প্রায় হয়ে পড়েন। তিনি কিছুতেই এই দুর্বিষহ অন্যায় ঘটনা প্রবাহ মেনে নিতে পারেন না। হ্যামলেটের পিতার প্রেতাত্মা জীবনের এই দুঃসহ লগ্নে তাঁর সামনে আবির্ভূত হয়ে তাঁকে জানিয়ে দেন যে, যদিও প্রচারিত হয়েছে তিনি সর্প দংশনে নিহত হয়েছেন; আসল সত্য হল তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্লডিয়াস কানে বিষ ঢেলে তাঁকে হত্যা করেছে। ঘটনা প্রবাহে আরো কিছু গ্রন্থি যুক্ত হয়। মন্ত্রী পলোনিয়াস হ্যামলেটের জননী রাণী গারট্রুডের ঘরে মাতা-পুত্রের কথোপকথন শোনার জন্যে আড়ি পাততে গিয়ে যুবরাজ হ্যামলেটের তরবারির আঘাতে নিহত হয়। হ্যামলেট তাকে রাজা ক্লডিয়াস ভেবে ভ্রম বশত হত্যা করে। পলোনিয়াসের কন্যা এবং যুবরাজ হ্যামলেটের প্রেমিকা ওফেলিয়া পিতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মনোবেদনায় ভেঙে পড়ে এবং জলে ডুবে আত্মহত্যা করে জীবনের জ্বালা মেটায়। পিতা ও ভগ্নির মৃত্যুতে মন্ত্রীপুত্র লেয়ার্তেস প্রায় পাগল হয়ে যান। রাজা ক্লডিয়াস ষড়যন্ত্র করে হ্যামলেট ও লেয়ার্তেসের মধ্যে তরবারির দ্বৈত ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। লেয়ার্তেসের তরবারির মাথায় বিষ মাখানো ছিল। সে বিষাক্ত তরবারির আঘাতে লেয়ারর্তেস হ্যামলেটের উর্দ্ধ বাহু রক্তাক্ত করে, হ্যামলেট লেয়ার্তেসেরই বিষাক্ত তরবারি দিয়ে তাকে প্রত্যাঘাত করে। রাণী গারট্রুড তৃষ্ণার্ত হয়ে বিষাক্ত পানীয় পান করে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন, যা হ্যামলেটের পান করার কথা ছিল। পাত্রে বিষ মেশানোটাও ছিল রাজা ক্লডিয়াসের ষড়যন্ত্র। রাজার সব ষড়যন্ত্র যখন প্রকাশ হয়ে পড়ে, বিশেষ করে মৃত্যু পথযাত্রী লেয়ার্তেসের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে, তখন যুবরাজ হ্যামলেট রাজা ক্লডিয়াসকে তরবারি দিয়ে আঘাত করে এবং বিষ মেশানো পানীয় পান করতে বাধ্য করে এবং তিনি প্রাণত্যাগ করেন। এইভাবে চার চারটি জীবনের অবসান ঘটে তরবারির ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে। হ্যামলেটের সার্বক্ষণিক অনুগামী প্রিয় বন্ধু হোরেশিও থেকে যায় পরবর্তী প্রজন্মকে এই বেদনা বিধুর কাহিনী শোনাবার জন্যে।