পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরে ছাত্রলীগের বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বুধবার (১২ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চত্বরে এই সংঘর্ষে দুই পুলিশসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় ২০টিরও বেশি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অর্ধশতাধিক টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ ও র্যা ব-৮ এর সদস্যরা প্রায় দেড় ঘন্টা চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।এই ঘটনায় পুরো শহরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। শহরের ইটেরপুল, কলেজগেট ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় এসব জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মাদারীপুরে আওয়ামী লীগের নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি গ্রুপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি গ্রুপে বিরোধ রয়েছে। গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মসূচিই পাল্টাপাল্টিভাবে পালন করছে। দীর্ঘদিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলা-সংঘর্ষ ও উত্তেজনাও চলে আসছে।গত ২ জুলাই নৌ-মন্ত্রী সমর্থিত সদর উপজেলার খোয়াজপুরে ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর লোকজনের সঙ্গে বাহাউদ্দিন নাছিম সমর্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসানের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১২ জন আহত হন। এরই প্রতিবাদ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর মাহমুদের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগ মঙ্গলবার কলেজগেটে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান অনিকের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বুধবার বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে ছাত্রলীগের অপরপক্ষ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি মিছিল নিয়ে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এক সময় উভয় পক্ষের সহ¯্রাধিক নেতা-কর্মী দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ সময় ১৫ জন আহত হয়। সংঘর্ষে আহত ডিবি পুলিশের এসআই স্বপন কুমারসহ ৮ জনকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, পুলিশের তৎপরতায় উভয় পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মাদারীপুরের শহরের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান অনিক বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) ছাত্রলীগের ওই পক্ষ কলেজ গেটে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। আজ আমরা ইটেরপুল থেকে মিছিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মানববন্ধন করি। অথচ তারা হামলা চালিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের আহত করেছে। আমরা সদর থানার ওসির অপসারণ দাবি করে মিছিল করায় পুলিশ ছররা গুলি ছুড়েছে। এই গুলিতে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক জনি চৌধুরী বুকে এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগনেতা পৌর কাউন্সিলর জাকির হাওলাদারের চোখে গুলি লেগেছে। তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ছররা গুলিতে বিদ্ধ হয়েছে যুবলীগের পৌর সংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেক্রেটারী জাকির মোল্লা, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন, উপ-সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সদস্য সাগর হাওলাদার, রিয়াদ হোসেন, আরিফসহ আরো কয়েকজন। পুনরায় হামলা হতে পারে এই আশঙ্কায় আহতদের মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা ছিল না। তাদের অবস্থা অনুযায়ী কালকিনি, বরিশাল, ফরিদপুর ও ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।অপরদিকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর মাহমুদ আবীর দাবি করেন, (বুধবার) জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাফা করিম আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিতে গেলে বিক্ষোভ মিছিলকারীদের কয়েকজন তাকে একা পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করতে গেলে হামলায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাশেদ তালুকদার খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সজীব সরদার, সহ-সম্পাদক তুষার হাওলাদার, সহ-সম্পাদক শোভন কুন্ডু, ছাত্রলীগ নেতা শাওন মাতুব্বর ও জাহিদ ভূইয়াসহ অনেকেই আহত হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া কুকরাইলে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শফিক খানের বাড়িতেও হামলা করা হয়।