ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে তীর্থযাত্রীদের ওপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই তৈয়বাকে দায়ী করা হচ্ছে। কাশ্মির পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির ওয়েবসাইটে এই কথা জানানো হয়েছে। এদিকে সিএনএন-এর নিউজ এইটিন নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে দাবি করেছে, লস্কর-ই তৈয়বা কাশ্মিরের স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল মুজাহিদীন-এর সঙ্গে যৌথভাবে এই হামলা চালিয়েছে। হামলায় অন্তত ৭ জন তীর্থযাত্রী নিহত হয়েছে। নিহতদের ৬ জনই নারী। আহত হয়েছেন তিন পুলিশসহ অন্তত ১৯ জন। এর মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অনন্তনাগ জেলায় অমরনাথের তীর্থযাত্রীদের উপর জঙ্গিরা হামলা চালায় বলে জানিয়েছে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই এবং টাইমস অব ইন্ডিয়া। নিহতরা সবাই গুজরাটের বাসিন্দা। গত রাতের ওই জঙ্গি হামলার পরদিন আজ মঙ্গলবার সকালেই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল-সহ সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির উচ্চপদস্থ কর্তারা। পাশাপাশি এ দিন সকালেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন জম্মু কাশ্মীরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হংসরাজ আহির এবং সিআিপিএফ-এর জেনারেল ডিরেক্টর আরআর ভাটনগর।পুলিশ ও সিআরপি সূত্রে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, সোমবার সন্ধে সোয়া আটটা নাগাদ জনা তিনেক জঙ্গি মোটরবাইকে চেপে বিভিন্ন জায়গায় পরপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়। প্রথমে তারা অনন্তনাগের খান্নাবলে বাহিনীর চেকপোস্টের উপরে গুলি চালিয়ে বাতেঙ্গু এলাকার দিকে যায়। সে সময় বাতেঙ্গুতে শ্রীনগর-জম্মু সড়কের উপরে অমরনাথ যাত্রীদের একটি গাড়ি যাচ্ছিল। পুর্ণ্যার্থীদের বাসটি তিনদিক দিয়ে ঘিরে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় জঙ্গিরা। দাবি অনুযায়ী, অন্ধকারের সুযোগে দ্রুত গা ঢাকা দেয় তারা।
ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হামলাস্থল ঘিরে ফেলে তল্লাশি শুরু করেছে বাহিনী। বাড়ি বাড়ি ঢুকে তল্লাশি শুরুর কথা জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। হামলা সত্ত্বেও অমরনাথ যাত্রীরা ফের তাদের যাত্রা শুরু করে আজ সকাল থেকে। কাশ্মির পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মুনির খানের দাবি, প্রতিশোধ নিতেই এই হামলার ঘটনাটি ঘটিয়েছে লস্কর জঙ্গিরা। তাকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ‘দিন কয়েক আগেই লস্কর জঙ্গিদের একটি ঘাঁটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া হামলার পর উত্তরপ্রদেশ থেকে সন্দীপ কুমার শর্মাকে গ্রেফতার করার পরও গোয়েন্দাসংস্থার হাতে অনন্তনাগের জং্গি হামলা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য আসে।এদিকে পুলিশ সূত্রে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর নিউজ এইটিন বলছে, ‘যৌথভাবে হামলাটি পরিচালনা করেছে লস্কর-ই-তৈয়বা আর হিজবুল মুজাহিদীন। খবর অনুযায়ী তিনজন মিলে এই হামলা চালিয়েছে। এদের একজন পাকিস্তানি জঙ্গি আবু ইসমাইল মোটর সাইকেলে করে এসে পূণ্যার্থীদের ওপর দুই ম্যাগজিন গুলি চালান।’ হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ উল্লেখ করে ক্ষোভ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, এই কাপুরুষ হামলাকারীদের কাছে নতি স্বীকার করবে না ভারত। সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, এটা কাশ্মিরিদের উপর একটি আঘাত। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কাশ্মিরিদের সোচ্চার হতে হবে।
বুরহান ওয়ানি’র মৃত্যুবার্ষিকীতে উপত্যকাজুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো। গণবিক্ষোভ ঠেকাতে কঠোর সর্তকতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শনিবার রাজ্যে কারফিউ জারি করে স্থানীয় প্রশাসন, রাজপথে মোতায়েন করা হয় হাজার হাজার সেনাসদস্য। তবে এমন পরিস্থিতিতেও কারফিউ উপক্ষা করে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী তরুণরা। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবর্ষণ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের মধ্যেই তারা রাজপথে নামেন। বুরহানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে কাশ্মির জুড়ে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬ জন প্রাণ হারান। সহিংসতার আশঙ্কায় কাশ্মিরে জারি করা কারফিউ রবিবার তুলে নেওয়া হয়।