প্রবাসীদের অর্থ দেশে পাঠাতে ব্যাংক থেকে যে মাশুল নেওয়া হয়, তা আগামী মাসের মধ্যে কমিয়ে আনার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল আবদুল মুহিত।শনিবার সকালে সিলেট নগরীর নাইওরপুল এলাকায় নবনির্মিত ফোয়ারা উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মুহিত বলেন, রেমিটেন্স কমার দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত বিদেশে প্রবাসীদের সেটেল হওয়ার হার বাড়ছে, তাই অনেকে দেশে টাকা কম পাঠাচ্ছেন।আর প্রবাসীদের একটা অভিযোগ হচ্ছে টাকা পাঠানোর ফি বেশি, এজন্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে আগামী মাসের মধ্যে ফি কমানো হতে পারে।তবে মাশুল কত কমানো হবে সে ব্যাপারে কিছু বলেননি তিনি।
রেমিটেন্সের ওপর ব্যাংকগুলো যে মাশুল নেয়, তা নতুন অর্থবছর থেকে আর থাকবে বলে গত মে মাসে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি।গত ১৩ মে অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইআরএফের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী রেমিটেন্স বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রসঙ্গে বলেন, এটাকে বাড়ানোর জন্য গতকাল প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখন থেকে রেমিটেন্সের উপর চার্জ আর করবেন না। আই থিংক উই উইল ডু ইট। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনায় আমরা এটা করব। তাদের (প্রবাসীদের) আর টাকা পাঠানোর জন্য পয়সা দিতে হবে না।প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে বড় ধরনের পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ২০১৬-১৭ অর্থবছর।গত অর্থবছরে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ (১২.৭৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম।বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম রেমিটেন্স এসেছে গত অর্থবছরে।২০১১-১২ অর্থবছরে এক হাজার ২৮৪ কোটি ৩০ লাখ (১২.৮৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।এর পরের চার বছরে (২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬) যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার, ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন, ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন এবং ১৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল।অর্থমন্ত্রী অর্থপাচার নিয়েও কথা বলেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার বেশি হওয়ার পেছনে নিজেদেরও কিছুটা দায় রয়েছে।
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা টাকার পরিমাণ এক বছরে ২০ শতাংশ বেড়েছে।সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৬’ বলছে, দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ ২০১৫ সালের ৫৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ হয়েছে।অর্থাৎ, বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে ৫৫০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ বাংলাদেশিরা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা করেছেন। এর মধ্যে ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালে জমার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।এরপর বিএনপিসহ বিভিন্ন পক্ষ অর্থপাচারের বিষয়টি সামনে টেনে আনে। বিএনপি চেয়ারপারসন সুই ব্যাংকগুলোয় টাকা রাখা বাংলাদেশিদের পরিচয় প্রকাশেরও দাবি করেছেন।এক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, সারা দুনিয়াতে অর্থ পাচার হচ্ছে। তবে রেইট অব গ্রোথ (অর্থপাচারের) আমাদের দেশে বেশি হচ্ছে। এজন্য আমরাই কিছুটা দায়ী।”
কারণ হিসেবে মুহিত বলেন, “আমরা সরকারিভাবে ল্যান্ড ভ্যালু খুব কম রেখেছি। একটি বাড়ি বিক্রি থেকে কেউ এক কোটি টাকা পেলে সরকারি হিসেবে সেটা হয় ৩০ লাখ টাকা, বাকি অর্থ ব্ল্যাক মানি হয়ে যাওয়ায় বিদেশে পাঠিয়ে দেয়।অর্থপাচার রোধে কি কি ব্যবস্থা নেয়া যায় সে বিষয়ে ভাবা হচ্ছে বলে জানান তিনি।এসময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব,সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ,মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন প্রমুখ।