জামারপুর , বগুড়া, সিলেট, মৌলভীবাজার ও কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। তবে এসব জেলায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগ। পর্যাপ্ত ত্রাণ নেই, খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষের হাতে কোনো কাজও নেই। খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে দিন পার করছেন তারা।এদিকে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাসহ দেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, করতোয়াসহ এ অঞ্চলের সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। নদীতীরবর্তী নিন্মাঞ্চলের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাড়িঘর ফেলে আশ্রয় কেন্দ্র বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ছুটছেন তারা। বন্যার্তদের অভিযোগ, তারা পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না। পাশাপাশি গবাদিপশুর খাবার জোগাতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন। অনেকে কমমূল্যে তাদের গরু-ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বরাদ্দ কম থাকায় তারা সবার মাঝে ত্রাণ পৌঁছাতে পারছেন না।এদিকে, দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘন্টায় দেশে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।আবহাওয়া অধিদপ্তর সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে একথা জানিয়েছে।আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামের উত্তর-পূর্ব দিক হয়ে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় বিরাজ করছে।
বগুড়া :বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীতে পানি ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার (৮ জুলাই) সকাল পর্যন্ত পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ৬টি ইউনিয়নে পানি ঢুকে পড়ায় অন্তত ১৮ গ্রামের তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যা কবলিত মানুষজন বিশুদ্ধ পানির অভাব ও পয়ঃনিষ্কাশনের সমস্যা নিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।এদিকে ইতোমধ্যে জলাবদ্ধ ৩৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্গতদের জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বরাদ্দ করা চাল বিতরণ শুরু হয়েছে।সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। এতে কুতুবপুর, কামালপুর, চন্দনবাইশা, কর্ণিবাড়ি, কাজলা ও চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নে পানি ঢুকছে। বিভিন্ন গ্রামের অন্তত তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকে সহায়-সম্বল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। ৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা ও একটি উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যা দুর্গতরা বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে রয়েছেন।
এদিকে বগুড়ার ডিসি নুরে আলম সিদ্দিকী দুর্গত এলাকার জন্য ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, শনিবার সকাল থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান বন্যা দুর্গত চন্দনবাইশা, কামালপুর ও কুতুবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ১ হাজার পরিবারের মধ্যে ২০ কেজি করে প্রায় ২০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেছেন। এছাড়া রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ১৪৪ পরিবারের মধ্যে ৫ হাজার টাকা করে বিতরণ করেছে।অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী ধুনট উপজেলার যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারি প্রকৌশলী হারুনার রশিদ জানান, শনিবার সকালে নদীতে পানি বিপদ সীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। স্থানীয়রা জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের রাধানগর, শহরাবাড়ি, শিমুলবাড়ি বৈখাশী, ভুতবাড়ি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে শিমুলবাড়ি, কৈয়াগাড়ি ও শহরবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করা হয়েছে।
সিলেট :পানি কমতে শুরু করায় সিলেটের আট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির দিকে। ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে পানি কমে পরিস্থিতির এ উন্নতি হয়েছে।বন্যার পানি কমলেও দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না দুর্গত মানুষদের। ঘরে খাবার নেই, বাইরে কাজ নেই। পানিবন্দি জীবন বিষয়ে তুলেছে ১৮ হাজার পরিবারের প্রায় দেড় লাখ মানুষের। বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ৪ হাজার ৪৯১টি ঘরবাড়ি। তাছাড়া দুর্গতের অনেকেই পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ত্রাণ পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান। বেশি বন্যা কবলিত তিন উপজেলার ১১ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬২৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। পানি কমায় অনেকে বাড়ি চলে গেছেন বলে জানা যায়।সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর পানি গত চার দিন ধরে কমছে। শনিবার ৫ টি পয়েন্টে পানি কমেছে ৬-১০ সেন্টিমিটিার। তবে এখনো বিপদসীমার ওপরে রয়েছে নদীর পানি। ভারী বৃষ্টি না হলে আর নতুন করে পাহাড়ি ঢল না নামলে বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।এদিকে পানি কমতে শুরু করায় নানা পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে দুর্গত এলাকায়।বন্যায় স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় কাজ চলছে জানিয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় চিকিৎসা সেবায় কাজ করছে ৭৮টি মেডিকেল টিম। পানিবাহিত অসুখ মোকাবেলায় মজুদ রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্যাদুর্গত এলাকায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে মানুষ। দুর্গতরা ত্রাণের আশায় থাকলে ত্রাণ তৎপরতা অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তভোগীরা।
বিয়ানীবাজারের আব্দুল জব্বার জানান, ১৫ দিন ধরে আশ্রয় কেন্দ্রে আছি। কিন্তু সরকারি সাহায্য পেয়েছি মাত্র ছয় কেজি চাল।ওসমানী নগরের সাদীপুরের নুরবানু বিবি বলেন, সাত জনের সংসার। মাত্র একদিন ৫ কোজি চাল সাহায্য পেয়েছি। দুই দিনেই চাল শেষ। এখন একবেলা খাচ্ছিতো আরেক বেলা উপোস করছি।তবে, জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় সিলেটের ৮টি উপজেলার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫৫ জন লোক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।দুর্গতদের সাহায্যে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ওসমানীনগর, কোম্পানীগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা, জকিগঞ্জ উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের ৪৬৬ গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে।তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৩১৩ টন চাল ও ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা ৮টি উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি প্রবেশ করছে নতুন নতুন এলাকায়। পানিতে তলিয়ে গেছে চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর ও সদর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের নদ-নদী তীরবর্তী চর ও দ্বীপ চরের দেড় শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। এসব এলাকার গ্রামীণ কাঁচা সড়ক তলিয়ে যাওয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। নি¤œাঞ্চলের মানুষজন গত ৩দিন ধরে পানিবন্দী থাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকটে পড়েছে অনেকেই। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিতরা। বন্যা কবলিত এলাকা গুলোতে এখনও কোন সরকারী বেসরকারী ত্রান তৎপরতা শুরু হয়নি।ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চর যাত্রাপুর ইউনিয়নের নজির হোসেন বলেন, গত তিন দিন ধরে পানিতে পড়ে আছি। বাড়িতে এক কোমর পানি। কোন রকমে চৌকির নীচে ইট দিয়ে উচু করে দিন পার করছি। এ অবস্থায় রান্নাবারাও ঠিক মতো করতে পারছি না। মজুদ খাবারও ঘরে নেই।
একই এলাকার শাহেরা খাতুন বলেন, ঘরে পানি উঠায় ছোট ছোট বাচ্চা ও হাস মুরগী নিয়ে বিপদে আছি। বাইরে বের হতে পারছি না। পানি অভাব, খাবারের অভাবে আছি। চিলমারী উপজেলার চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গওছল হক মন্ডল জানান, আমার ইউনিয়নের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ পানিবন্দী জীবন যাপন করছে। সেই সাথে কড়াই বরিশাল, মনতলা, শাখাহাতি এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করছে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের লিস্ট তৈরি করে পাঠালেও এখনও কোন ত্রান পাওয়া যায়নি।এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, জেলার নদ-নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল গুলোতে পানি প্রবেশ করলেও বন্যা পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য মেডিকেল টিমসহ আমাদের সব রকমের প্রস্তুতি নেয়া আছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘন্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
জামালপুর: জামালপুর জেলার সার্বিক বন্যার পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটেছে। দেওয়ানগঞ্জ,ইসলামপুর,মেলান্দহ,মাদারগঞ্জ উপজেলায় নতুন করে প্লাবিত হয়ে মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে ইসলামপুর উপজেলা ২০টি দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ১টি এবং মেলান্দহ উপজেলায় ১টি মোট ২২টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জলমগ্ন হয়ে পড়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম।এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় যমুনার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টি মিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৩৫সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার পানি বৃদ্ধির ফলে মেলান্দহ উপজেলার মুহমুদপুর ডাইবেশন পাকা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। হাজার হাজার হেক্টর ফসলী জমি কাঁচা তরিতরকারী বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার মানুষসহ গৃহপালিত গোবাদী পশু,গরু, ছাগল হাঁস, মরগি পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত মানুষ উচু বাঁধে আশ্রয় নিতেছে। বিশেষ করে ইসলামপুরের কুলকান্দি ইউপির যমুনার দুর্ঘম দ্বীপচর হরিণধরা,জিগাতলা বেলগাছার ইউপির চরবেড়কুশা,বরুল, মুন্নিয়া, সিন্দুরতলি, সাপধরী ইউনিয়নের চরচেঙ্গানিয়া, প্রজাপতি, চরশিশুয়া ও চর বিশরশির চিনাডুলী ইউপির শিংভাঙ্গা,গিলাবাড়ি,আজমাবাদ,কদমতলী এলাকায় মানুষের খাদ্য বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চিনাড়–লি ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম। এদিকে মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি গো খাদ্যে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এব্যাপারে জামালপুর-২ ইসলামপুর আসনের স্থানীয় এমপি আলহাজ ফরিদুল হক খান দুলাল বলেন অন্যান্য বৎসরের তোলনায় এ বছর এখন পর্যন্ত বন্যা সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে। তারপরও মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও ত্রান ও পুর্নবাসন মন্ত্রীর কাছে দুর্গতদের সাহার্য্য সহযোগিতার জন্য হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ দিকে জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহাম্মেদ কবীর জানান এ পর্যন্ত দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকায় দূর্গত মানুষের সাহার্য্যরে জন্য ১০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১০হাজার করে টাকা মোট দুই উপজেলার ২ মেঃটন চাল এবং নগদ ২০হাজার টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন বলে বলে জানান।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও তিন ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলার মোট ১০ ইউনিয়নের ৪০ গ্রামের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। বন্ধ হয়ে গেছে ২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। অনেক এলকায় গত তিনদিনেও ত্রাণ যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদ সীমার ৩৩ সিন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
পানি বাড়ার সাথে সাথে ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলার অন্তত ৮টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের অনেক রাস্তা। থৈ থৈ পানিতে গৃহপালিত গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। গত কয়েক দিনের বন্যায় ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া, চিনাডুলী, বেলগাছা, পাথর্শী ও কুলকান্দি এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ি ও চিকাজানী, মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর ও মাদারগহ্জ উপজেলার বালিজুরী ও জোড়খালী ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ট্রায় ৪০ গ্রামের বিস্তৃর্ণ এলাকার প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ। তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট।বন্যার পানি প্রবেশ করায় ইসলামপুর উপজেলার ২০টি, দেওয়ানগঞ্জে ১টি, মেলান্দহে ১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মুখলেছুর রহমান জানান, মাধ্যমিক পর্যায়ে ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আরও বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এদিকে পানি বাড়ার সাথে সাথে যমুনার শাখা নদী মেলান্দহের সাদিপাটিতে মাদারদহ নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের ভাঙনে অন্তত ১০টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।তবে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, মাদারদহ ছাড়া যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদে এখন পর্যন্ত কোনো ভাঙ্গ দেখা দেয়নি।গত তিনদিন যাবৎ ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জে বন্যা শুরু হলেও সরকারিভাবে বানভাসি মানুষের মাঝে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ ও ইউপি চেয়ারম্যানরা।তবে জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপলোর বন্যাত্তোদের ২০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, টাঙ্গাইলের অংশে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোপালপুর উপজেলার ললিন পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে। এতে ভুঞাপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ও গোপালপুর উপজেলার একটি ইউনিয়নের কিছু মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৗশলী শাহজাহান সিরাজ বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এবং কয়েকদিনের বৃষ্টিতে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। এতে করে গতকাল থেকেই জেলার ললিন পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া এ অংশে পানি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।