উজান থেকে নেমে আসা পানিতে তিস্তার পানি বিপদসীমার উপরে উঠে এখনই প্লাবিত লালমনিরহাটের একটি গ্রাম; এর মধ্যে ওই অঞ্চলে চলতি মাসে ভারিবর্ষণের আভাস রয়েছে।তিস্তার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা-কুশিয়ারায়ও পানি বাড়তে থাকায় স্বাভাবিক বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।জুলাই মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসের বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, মাসের প্রথমার্ধ্বে সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অববাহিকায় ভারি বর্ষণ হতে পারে।মৌসুমী বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু কিছু স্থানে স্বাভাবিক বন্যার শঙ্কার কথা জানান তিনি।ইতোমধ্যে ভারি বর্ষণের পাশাপাশি উজানের ঢলও আসতে শুরু করেছে। কয়েকদিনে সিলেট, মৌলভীবাজার, লালমনিরহাট ও শরীয়তপুরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত এলাকায় পানিবন্দি হয়েছে অনেক পরিবার। বন্যার সঙ্গে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। দেশের নদীগুলোর ৯০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে রোববার ৫টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫টি পয়েন্টে পানি বেড়েছে, কমেছে ৩২টি পয়েন্টে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা-কুশিয়ারার পানি বাড়ছে।আরও পাঁচদিন পানি বাড়তে থাকবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি এলাকায় বিপদসীমার উপরে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে উত্তরের কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দেবে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। এ মাসে ১৬-২২ দিন বৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।সোমবারের পূর্বাভাসের বিষয়ে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণও হতে পারে।ভারি বর্ষণে স্বাভাবিক বন্যা হলেও এখন বন্যার তীব্রতা বাড়ার শঙ্কা করছেন না বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ।তিনি বলেন, উজানে পানি বাড়তে থাকলে আমাদের এখানকার পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। মাসের শেষার্ধের আবহাওয়ার উপরই নির্ভর করবে সবকিছু।
তিনি জানান, গত বছর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের পর তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে দুই দফা ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢল নামে। তাতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল।২০১৬ সালের জুলাইয়ে উজান থেকে নামা ঢল ও বৃষ্টির পানিতে দেশের ১৬টি জেলার ৫৯টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়।প্রতিবছর জুলাই-আগস্ট মাসে ভারিবর্ষণের সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে গড়ে ২০-২৫ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। এ সময়ে স্বাভাবিক মৌসুমী বন্যা এমনই হয়।তবে মধ্য অগাস্ট পর্যন্ত দেশে ও উজানে ধারাবাহিক বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে খারাপের দিকে যায় বন্যা পরিস্থিতি। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র একসঙ্গে ফুঁসে উঠলেই ভয়াবহ রূপ নেওয়ার শঙ্কা থাকে।২০০৭ সালে বাংলাদেশের ৪০ শতাংশের বেশি এলাকা প্লাবিত হয়েছিল।
২০১৩ সালে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতে মাত্র ১০ শতাংশ এলাকা পÍাবিত হয়। ২০১৫ সালেও প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা বন্যা কবলিত হয় বলে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য। গত কয়েক দশকে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে, তখন ৬৮ শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গিয়েছিল। ১৯৮৮ সালের বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল ৬১ শতাংশ এলাকা।
চট্টগ্রাম: টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম নগরের নিম্নাঞ্চলে। এতে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। ছবিটি আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের প্রবর্তক মোড় এলাকা থেকে তোলা। ছবি: জুয়েল শীলভারী বৃষ্টিতে আবার ডুবল চট্টগ্রাম নগর। জলাবদ্ধতার কারণে পানিতে ডুবে মারা গেছেন শীলাব্রত বড়ুয়া (৬২) নামের সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা।রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে শীলাব্রত নগরের মোহাম্মদ আলী রোডের বড় নালায় পড়ে নিখোঁজ হন। সোমবার সকালে বাকলিয়া থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।রাত থেকে থেমে থেমেই চট্টগ্রামে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন এলাকা দফায় দফায় পানিতে ডুবে যায়। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর।পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তরের হিসাবে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় ৬৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৃষ্টি চলছিল।পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তরের কর্তব্যরত আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় বৃষ্টি চলছে। একই কারণে আগামী দুই-এক দিন ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া পাহাড়ধসের সতর্কবার্তাও রয়েছে।বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব কুমার চৌধুরী জানান, বৃষ্টিতে রাতে নগরের মোহাম্মদ আলী সড়কের রয়েল গার্ডেন নামের একটি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে শীলাব্রত বড়ুয়া বড় নালায় পড়ে যান। এ সময় পানির ¯্রােত তাঁকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম নগরের নিম্নাঞ্চলে। এতে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। ছবিটি আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের প্রবর্তক মোড় এলাকা থেকে তোলা। ছবি: জুয়েল শীলশীলাব্রতের ছেলে শান্ত বড়ুয়া জানান, রয়েল গার্ডেনে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বাবা শীলাব্রত। রাত একটায় বিয়ে শেষ করে যখন বের হচ্ছিলেন, তখন প্রচ- বৃষ্টি ছিল। এ সময় সড়কে পানি জমে যায়। তখন তিনি রয়েল গার্ডেনের সামনে দিয়ে যাওয়া বড় নালায় পড়ে যান।শীলাব্রতের বাড়ি হাটহাজারীর মির্জাপুর এলাকায়। তিনি কাউখালী উপজেলার প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ছিলেন।এদিকে বৃষ্টিতে নগরের ষোলোশহর, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, প্রবর্তক মোড়, ছোটপুল, সিডিএ আবাসিক এলাকা, চকবাজার, কাপাসগোলা, বাকলিয়া, হালিশহর, আগ্রাবাদ, আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা সকাল থেকে ডুবে রয়েছে।জিইসি থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল সকাল ১০টা থেকে বন্ধ হয়ে যায়। আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয় সকাল আটটা থেকে। এ ছাড়া প্রবর্তক মোড় বহদ্দারহাট মোড় ও চান্দগাঁও এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।নগরের ষোলোশহর মোড়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসা একটি বাস আটকা পড়ে। বাসের চালক আনোয়ার হোসেন আজ দুপুর ১২টায় বলেন, সকাল সাতটায় এই মোড়ে আটকা পড়েছি। জিইসি থেকে এদিকে এসে এক কিলোমিটার এলাকায় যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এসপি অফিসের সামনে পানির কারণে আর যেতে পারিনি। মুরাদপুর দিয়েও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় পড়ে।যানবাহনস্বল্পতা এবং জলাবদ্ধতার কারণে পথচারীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। ষোলোশহর এসপি কার্যালয়ের সামনে কোমরসমান পানি ডিঙিয়ে মানুষ পার হচ্ছিলেন ভ্যানে চড়ে। প্রতিজনের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।মো. আবদুল্লাহ নামের এক ভ্যানচালক বলেন, ‘সকাল থেকে দুজনে মিলে হাজার খানেক টাকা ভাড়া মেরেছি।’
রাঙামাটি:রাঙামাটিতে আবার পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৩ জুনের বিপর্যয়কর পাহাড়ধসের ঘটনার ২০ দিনের মাথায় আজ সোমবার আবার এই ঘটনা ঘটল। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের মানিকছড়ির দেপ্পোছড়ি এলাকায় একটি পাহাড়ের অংশবিশেষ ধসে পড়ে। এতে প্রায় এক ঘন্টা ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকে।পরে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ রাস্তা পরিষ্কার করে যান চলাচলের ব্যবস্থা করেছে বলে রাঙামাটি সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।গত রোববার রাত থেকে রাঙামাটিতে একটানা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত চলেছে। আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত একবারের জন্যও বৃষ্টিপাত সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে।আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানার পর জেলা প্রশাসন রোববার সন্ধ্যার পর থেকে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করে। এরপর প্রায় সারা রাতই বৃষ্টি হয়েছে যা একটানা এখনো অব্যাহত আছে।এই ধরণের বৃষ্টিতে সবার মধ্যেই নতুন করে পাহাড়ধসের আতংক সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে নতুন করে কিছু আতঙ্কিত মানুষ আসছে বলে জেলা প্রশাসনের সূত্র জানিয়েছে। গতকাল সকালে শহরের প্রান্তবর্তী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে জানা গেছে, সেখানে নতুন করে দুটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যেই দেপ্পোছড়িতে ধসের ঘটনা ঘটল।গত ১৩ জুন নজিরবিহীন পাহাড়ধসে একমাত্র রাঙামাটিতেই ১২০ জন মানুষ মারা যান। আহত হয়েছিলেন অন্তত ৮৮ জন, যাঁদের অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।
সিলেট :ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সাত উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়েছে। কয়েকটি নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যার কারণে জেলার ১৭৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৬১টি প্রাথমিক ও ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।সিলেট জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার জানান, কুশিয়ারা অববাহিকায় ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ওসমানীনগর উপজেলার বন্যার পানি কিছুটা বেড়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলায় অপরিবর্তিত থাকলেও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল।পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। সুরমার পানিও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।তিনি জানান, নদীর পানি তীর উপচে প্রবেশ করায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ছয় উপজেলার সুরমা ও কুশিয়ারা অববাহিকায় নদীর তীরের দুই শতাধিক গ্রামের নিম্বাঞ্চল পানির নীচে আছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি এলাকা।ঘরবাড়ি, দোকান পাট ডুবেছে। তলিয়ে গেছে প্রায় তিন হাজার হেক্টর আউশ জমির ফসল।জেলা প্রশাসক জানান, বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠছেন। জেলায় নয়টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৮৯টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের অভিযোগ, অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। ত্রাণের আশায় পথ চেয়ে থাকলেও দেখা মিলছে না কারও।
বালাগঞ্জের দেওয়ান বাজার এলাকার মন্তাজ আলী বলেন, “বানবাসী মানুষের পাশে কেউ নেই। বাড়ি-ঘর বন্যায় ডুবে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ বা সাহায্য পাইনি।বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দাল মিয়া বলেন, “বন্যায় যত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে অনুপাতে ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই কেউ পাচ্ছে আবার কেউ পাচ্ছে না।জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, দুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত ১৩৭ মেট্রিকটন চাল ও প্রায় তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। দুর্গত মানুষদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।ফেঞ্চুগঞ্জের চীণ।ঢ প্রসাদ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া হাবিবা আক্তার বলেন, পানি ঢুকে বাড়ি-ঘর ধসে পড়েছে। কোনো আশ্রয় না থাকায় বাচ্চাদের নিয়ে এ স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। ঘরে খাবার নেই। কী করব, কোথায় যাব বুঝতে পারছি না।শরীয়তপুর: পদ্মার ভাঙ্গনে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।এই দুই উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের তিন শতাধিক ঘর-বাড়ি, জমি, মসজিদ মাদ্রাসা, স্কুল, সেতু কালভার্ট ও পাকা রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ঝুঁকির মুখে রয়েছে হাজার হাজার একর জমি, শত শত ঘরবাড়ি, মসজিদ মাদ্রাসা ও রাস্তাঘাট। ভাঙনে ভিটে-মাটি ও সহায়-সম্বল হারিয়ে শত শত মানুষ উঁচু জমিতে বা রাস্তার পাশে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে দূরে কোথাও চলে গেছে আশ্রয়ের জন্য।সরেজমিনে দেখা গেছে, কেবল নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর এলাকর আট কিলোমিটার এলাকায় পদ্মার বাঁধ রয়েছে। বাকি এলাকা এখনও অরক্ষিত। জাজিরা উপজেলার কু-েরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন বেপারী বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ষার শুরুতেই পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
গত ১০ দিনে নড়িয়ার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি, শেহের আলী মাদবরকান্দি, চেরাগ আলী মাদবর কান্দি ও জাজিরা উপজেলার কু-েরচর ইউনিয়নের কলমিরচর বেপারী কান্দি, ইয়াকুব বেপারী কান্দি, আইন উদ্দিন বেপারী কান্দি, মমিন খালাসী কান্দি, মাদবর কান্দি, ইউসুফ বেপারী কান্দি, বিলাসপুর ইউনিয়নের কাজিয়ারচরসহ তিনটি ইউনিয়নের তিন শতাধিক ঘর বাড়ি, জমিজমা, মসজিদ মাদ্রাসা পাকারাস্তা, বড় বড় সেতু ও স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।এছাড়া কালু বেপারী কান্দি স্কুল ও কলেজ, কাইয়ুম খার বাজার, ইয়াকুব মাদবর কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানান সালাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রতি বছরই এই জেলার অংশ মানচিত্র থেকে একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ভাঙন রোধে স্থায়ী বেড়িবাধ নির্মাণের, এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনদেরকে পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।কিন্তু ভাঙন থেমে গেলে তাদের প্রতিশ্রুতি আর ঠিক থাকে না বলে অভিযোগ এই জনপ্রতিনিধির।
সরেজমিনে নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামে দেখা গেছে, ভাঙন কবলিত মানুষ সহায় সম্বল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়ের জন্য ছুটোছুটি করছে। রাতের বেলায় পানির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তারা। কোন সময় তাদের সবকিছু ভাসিয়ে নেওয়ার অতঙ্কে রয়েছেন তারা।ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জাবেদ ঢালী বলেন, পদ্মা নদী থেকে আমার বাড়ি ছিল প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। পদ্মা নদীর ভাঙনে এবার আমার বাড়িও ভাঙতে শুরু করেছে। গত ১০ দিনে আমার বাড়িঘর পদ্মায় প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। এখন কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব ভেবে পাচ্ছি না।কাজিয়ারচরের তোতা মিয়া বলেন, এখন আমরা কই যাইমু কী খামু কেমনে বাঁচুম কইতে পারি না। আমাগো সরকার সাহায্য করে আর কী দিবে? আমরা আল্লাহর সাহায্য চাই, আল্লাহ ছাড়া এ ভাঙন কেউ থামাতে পারবে না।
কুন্ডেরচর এলাকার খোকন বেপারী বলেন, প্রতি বছর বর্ষা এলে জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার পদ্মাবেষ্ঠিত কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবার নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যায়। সরকার বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেঁড়িবাধ করে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করবে।এবার বর্ষার শুরুতেই ভঙন দেখা দিয়েছে। অনেক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। কেউ এসে আমাদের খবর নেয়নি।এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমীন বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এলাকায় না থাকার কারণে ভাঙনের খবর পেতে দেরি হয়েছে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহেলা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, ভাঙনের ব্যাপারে এখনও কোনো তথ্য আমি পাইনি। খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।