চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখান থেকে সারা দেশে চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজগুলো করা হবে।রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) আয়োজিত সভায় এই নিয়ন্ত্রণকক্ষ প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত হয়। আজ সোমবার থেকে এর কাজ শুরু হবে।গত তিন মাসে ৬৪৩ জন ব্যক্তির রক্ত ও লালার নমুনা পরীক্ষা করেছে আইইডিসিআর। এর মধ্যে ৫১৩ জন চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হয়েছে সংস্থাটি। দেশে একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানেই চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করার প্রযুক্তি আছে। সাধারণ মানুষ এটা জানে না বলে এখানে নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ কম বলে কর্মকর্তারা মনে করেন।এ বছর কী পরিমাণ মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে, তার কোনো অনুমিত পরিসংখ্যান আইইডিসিআরে নেই। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষায় যত জনের চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা তার বেশি। অনুমিত সংখ্যা জানার জন্য আমরা জরিপ শুরু করেছি। আশা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যে জরিপের তথ্য আমরা জানাতে পারব।’
সভা শেষে প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে সারা দেশে চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হবে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজগুলো করা হবে। চিকুনগুনিয়া চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ এখান থেকে দেওয়া হবে। মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনকে সহায়তা ও গণমাধ্যমকে হালনাগাদ তথ্য দেওয়ার কাজও এই নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে দেওয়া হবে।চিকুনগুনিয়া ভাইরাস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এর কোনো টিকা নেই। তাই প্রতিরোধই উত্তম পন্থা। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে ডেঙ্গুর মতোই আকস্মিক জ্বর, সঙ্গে ত্বকে ফুসকুড়ি বা দানা হয়। পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন গিরায় প্রচ- ব্যথা হয়। ডেঙ্গু হলেও শরীর ব্যথা করে, তবে খুব তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হয় না।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব স্থায়ী হবে। এ বছর ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও আগামী বছরগুলোতে দেশের অন্য জেলায় তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মহানগরে চিকুনগুনিয়ার প্রভাব থাকবে। ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ, লালমানিরহাট ও ঠাকুরগাঁওয়ে তিনজনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। তিনজনই ঢাকা থেকে ওসব অঞ্চলে গিয়েছিলেন। তবে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য সঠিক ছিল না। তিনি আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে বহু মানুষ ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় গেছে। সে ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকি আছে।আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গুর ব্যাপারেও সতর্ক থাকার কথা বলেছেন। এই বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। একই এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ছড়ায়। চিকুনগুনিয়াতে না হলেও ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যায়। চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষা না করালে ক্ষতি নেই। চিকিৎসক লক্ষণ দেখেই চিকিৎসা করাতে পারেন। কিন্তু এখন জ্বর হলেই ডেঙ্গুর পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া নিরাপদ।