দীর্ঘ প্রায় ২৮ মাস পর গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান রবিবার নগর ভবনে নিজ দফতরে মেয়রের চেয়ারে বসেছেন। গাজীপুর আদালতে হাজিরা শেষে অধ্যাপক এমএ মান্নান রবিবার দুপুর ১টার দিকে জেলা শহর জয়দেবপুরস্থিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে গিয়ে নিজ দফতরের চেয়ারে আসন গ্রহণ করেন।
এর আগে অধ্যাপক এমএ মান্নান নগর ভবনের কার্যালয়ে আসবেন এমন খবরে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং বিএনপিপন্থী কাউন্সিলরগণ নগর ভবনের সামনে এসে উপস্থিত হন। বেলা একটার দিকে নগর ভবনের প্রধান ফটকের সামনে কালো মাইক্রোবাস থেকে তিনি নামেন। এসময় দলীয় নেতাকর্মী, কাউন্সিলরগণ এবং সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারিরা ফুল ছিটিয়ে তাকে স্বাগত জানান। পরে তিনি নিজ দফতরে যান এবং চেয়ারে বসে কিছু সময় কাটান।
নিজ দফতরে অবস্থানকালে অধ্যাপক এমএ মান্নান এক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের জানান, সর্বোচ্চ আদালতে আদেশে পর মেয়রের দায়িত্ব পালনে আমার আর কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। বারবার মামলা দিয়ে আমাকে হয়রাণী করা হয়েছে। দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে আজকে এখানে বসতে পেরেছি। পুনরায় গাজীপুর মহানগরের মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। তিনি আরো জানান, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে যে সব কাজ অগ্রধিকার ভিত্তিতে করা দরকার সে কাজগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে করা হবে।
এব্যাপারে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ জানান, আমাকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে ওই আদেশ প্রত্যাহার কিংবা দায়িত্ব হস্তান্তর সংক্রান্ত কোন আদেশ মন্ত্রণালয় থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত আমার হাতে পৌছে নি। নিয়মানুযায়ী আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নতুন আদেশ জারী হওয়ার কথা। এরপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে যে আদেশ আমায় দেয়া হবে, আমি সে আদেশ পালন করবো।
এদিকে দীর্ঘ ২৮ মাস পরে অধ্যাপক এমএ মান্নান নগর ভবনে আসছেন এমন খবর আগের দিন থেকে প্রচার হলেও রবিবার নগর ভবন এলাকায় গাজীপুর জেলা বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় কোন নেতাকে দেখা যায়নি। দলের মাঝারি সারির কিছু নেতাকে উপস্থিত হয়ে অধ্যাপক এমএ মান্নানের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেশী ছিল।
প্রসঙ্গত, যাত্রীবাহীবাসে পেট্রোলবোমা হামলার মামলায় গত ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) মেয়র ও বিএনপি নেতা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএস’র বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২২ মামলায় জামিনের পর হাইকোর্ট থেকে সর্বশেষ জামিন লাভ করে গত বছরের (২০১৬সাল) ২ মার্চ তিনি কারামুক্ত হন। ওই বছরের এপ্রিল মাসে তিনি মেয়র পদ ফিরে পান। এ অবস্থায় গত বছরের ১৫ এপ্রিল এমএ মান্নানকে ফের নাশকতার তিনটি মামলায় গ্রেফতার করে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই মাসে তাকে ফের বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ২৯টি মামলা দায়ের করা হলেও সব কটি মামলায় তিনি জামিন লাভ করেন এবং চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি কারাগার থেকে তিনি ফের জামিনে মুক্ত হন। সর্বশেষ গত ২১ মে অধ্যাপক এমএ মান্নানের বিরুদ্ধে দুদক ফের আরেকটি মামলা দায়ের করে। উচ্চ আদালত থেকে এ মামলায়ও তিনি জামিন লাভ করেন। ওই মামলাটি নিয়ে তার বিরুদ্ধে মোট মামলার সংখ্যা দাড়ায় ৩০টি। এসব মামলার অধিকাংশগুলোই নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে।
অধ্যাপক এমএ মান্নানের আইনজীবীগণ জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ ফিরে পেয়ে তার দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা চেয়ে গত ২৬ এপ্রিল স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন অধ্যাপক এমএ মান্নান। উচ্চ আদালতের সর্বশেষ আদেশের পর অধ্যাপক এমএ মান্নানের মেয়রের দায়িত্ব পালনে কোনো বাঁধা নেই। গত ১৫ জুন সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের সার্টিফাইড কপি হাতে পেয়ে অধ্যাপক এমএ মান্নান রবিবার নগর ভবনে নিজ কার্যালয়ে গিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসলেন।
নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানের অবর্তমানে ২০১৫ সালের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।