ইংল্যান্ডের ওভালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অস্টম আসরের ফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। সেমিফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা একাদশই বহাল রেখেছে ভারত। আর স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা সেমির একাদশ থেকে একটি পরিবর্তন এনেছে পাকিস্তান। বাঁ-হাতি পেসার রুম্মান রাইসের জায়গায় একাদশে এসেছেন আরেক বাঁ-হাতি পেসার মোহাম্মদ আমির।  চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জয়ের লড়াই চলে এসেছে শেষপর্যায়ে। আজ ভারত-পাকিস্তানের ফাইনাল শেষেই জানা যাবে কার হাতে উঠছে কাঙ্ক্ষিত শিরোপা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে শুরুতে টস হেরে গেলেও ব্যাট করতে নেমে দারুণভাবে শুরু করেছেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার ফখর জামান ও আজহার আলী। এই প্রতিবেদন লেখার ১৩ ওভার শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে পাকিস্তানের সংগ্রহ ৭৪ রান। ফখর জামান ৩০ ও আজহার আলী ৩৪ রানে অপরাজিত রয়েছেন।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই অবশ্য বড়সড় ধাক্কা খেতে বসেছিল পাকিস্তান। জাসপ্রিত বুমরাহর করা চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন ফখর জামান। এর পরই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তবে রিপ্লেতে দেখা যায়, বুমরাহর করা বলটি লাইনের বেশ বাইরে ছিল। ফলে একটি জীবন পেয়ে যান ফখর। সেই সুযোগটা ভালোমতোই কাজে লাগাচ্ছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

আজ ফাইনালে টসভাগ্যটা গেছে বিরাট কোহলির পক্ষে। টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। সেমিফাইনালের দল নিয়েই ফাইনালেও খেলছে ভারত। যার অর্থ, অশ্বিন খেলছেন ভারতের হয়ে। ফাইনালে একটি পরিবর্তন নিয়ে খেলছে পাকিস্তান। মোহাম্মদ আমিরকে ফিরিয়েছে দলটি।

২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের কথা কারোরই ভোলার কথা নয়। মুহূর্তে মুহূর্তে রং পাল্টানো ম্যাচটা সবারই হৃদস্পন্দন অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছিল। ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট লড়াই মানেই ধ্রুপদি ব্যাটিং ও অনন্যসাধারণ বোলিং দক্ষতার প্রদর্শনী। আজও তেমনই কিছু দেখার প্রত্যাশায় রয়েছে ক্রিকেটবিশ্ব। লন্ডনের কেনিংটন ওভালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে মাঠে নামছে ফেভারিট ভারত ও আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হয়েছে ম্যাচটি।

অল এশিয়ান ফাইনালের শিরোপা যেই জিতকু না কেন, লড়াইটা যে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের সঙ্গে পাকিস্তানের পেস অ্যাটাকের হবে, সেটা হয়তো না বললেও চলে। পরিসংখ্যানই বলছে এমন কথা। এবারের আসরে দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। এই তিন ব্যাটসম্যান মিলে সংগ্রহ করেছেন ৮৭৪ রান, যা পাকিস্তানের পুরো টুর্নামেন্টে মোট রানের চেয়েও বেশি। চার ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৭৯.২৯ গড়ে ৩১৭ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছেন শিখর ধাওয়ান। সেমিফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৩ রানে বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ধাওয়ানের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন রোহিত শর্মা। চার ম্যাচে ১০১.৩৩ গড়ে রোহিত শর্মার রান ৩০৪। চার ম্যাচে কোহলির রান সংখ্যা ২৫৩। এখন পর্যন্ত কেবল এক ম্যাচে ভারত অধিনায়ককে আউট করতে পেরেছেন প্রতিপক্ষের বোলাররা।

বল হাতে বরাবরের মতো আলো ছড়িয়েছেন পাকিস্তানের বোলাররা। টুর্নামেন্টে মোট ৩১টি উইকেট শিকার করেছেন দেশটির বোলাররা, যার মধ্যে ১৭টি উইকেটই নিয়েছেন হাসান আলী ও জুনায়েদ খান। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বেধড়ক মার খাওয়ার পর বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন পাকিস্তানের বোলাররা। শেষ তিন ম্যাচে পাকিস্তানের বোলিং গড় ২৩.৭৮! এই তিন ম্যাচে মাত্র ৪.৪৬ গড়ে ২৮ উইকেট নিয়েছেন পাকিস্তানের বোলাররা।

ফাইনালের আগে ‘ফাইনাল’ শব্দটাই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন বিরাট কোহলি। জানালেন, আর দশটা ম্যাচের মতো ফাইনালেও জয়ের জন্য খেলবে তাঁর দল। ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে কোহলি বলেন, ‘আর অন্য ম্যাচের মতো এটিও একটি ম্যাচ। বেশি ভাবার কিছু নেই। অন্যদিনের মতো আজও অনুশীলন করেছি আমরা। খুব বেশি চাপ নিচ্ছি না। ফলাফল নিয়ে কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না। এই ম্যাচের পরও অনেক ম্যাচ খেলতে হবে আমাদের।’

ফাইনালের চাপ নিতে নারাজ পাক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদও। তিনি বলেন, ‘ভালো খেলে ফাইনালে এসেছি আমরা। এটা ফাইনাল ম্যাচ হলেও অন্য নকআউট ম্যাচগুলোর মতোই। বেশি চাপ নিলে পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়বে। তাই কোনোরকমের চাপ নিচ্ছি না।’

ভারত একদাশ : বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি (উইকেটরক্ষক), কেদার যাদব, হার্ডিক পান্ডে, রবীন্দ্র জাদেজা, রবীচন্দ্রন অশ্বিন, ভুবনেশ্বর কুমার ও জসপ্রিত বুমরাহ।
পাকিস্তান একাদশ : সরফরাজ আহমেদ (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), আজহার আলী, ফকর জামান, বাবর আজম, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, ইমাদ ওয়াসিম, শাহদাব খান, হাসান আলী, জুনায়েদ খান ও মোহাম্মদ আমির।