আগাম নির্বাচন ডেকে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর গ্রেনফেল টাওয়ার অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে যেতে দেরি করে জনগণের ক্ষোভ বাড়ানোয় দলের ভেতরেও চাপে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। নির্বাচনে তুলনামূলক খারাপ করার পর থেকে দলের একাংশ তাকে পদত্যাগের চাপ দিয়ে আসছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে বিবিসি; গ্রেনফেল টাওয়ার অগ্নিকা-ের পর যেন সেই আগুনে ঘি পড়েছে।চাপের মুখে তিন দিন দিন পর টেরিজা মে কেনসিংটনে গিয়ে গ্রিনফেল টাওয়ারের ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানে বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতিবাদের মুখে পড়তে হয় টেরিজাকে।প্রধানমন্ত্রীকে ‘খুনি’, ‘কাপুরুষ’ আখ্যায়িত করে স্লোগান ওঠে- ‘টেরিজা এবার বিদায় নাও’।
বিক্ষুব্ধ জনতার রোষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বাঁচিয়ে বের করে নেয় পুলিশ। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষও হয়।বিক্ষোভরত এক নারীকে কাঁদতে কাঁদতে বিবিসিকে বলেন, বৈঠকের বাইরে প্রধানমন্ত্রী আর কারও সঙ্গে কথা বলবেন না শোনার পরই তার এই প্রতিক্রিয়া হয়।ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে মে’র ওই বৈঠক এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। এরপরই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫ মিলিয়ন পাউন্ড অর্থ সাহায্য বরাদ্দ এবং পুড়ে যাওয়া বাড়িটি পুনরায় নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।যে সাহায্য আজ ঘোষণা করা হয়েছে তা ক্ষতিগ্রস্ত এবং তাদের প্রিয়জনদের তাৎক্ষণিক সহায়তার জন্য। তাদের জন্য আরও কিছু করা যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে, বলা হয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে।
প্রায় ৩০০ প্রতিবাদকারী শুক্রবার কেনসিংটন ও চেলসির টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ দেখায়; তারা অগ্নিকান্ডে আশ্রয়হীনদের তাৎক্ষণিক সাহায্যের দাবি তোলে।ডেইলি মেইল জানায়, সেইন্ট ক্লেমেন্ট চার্চের বাইরে ডজনের ওপর বিক্ষোভকারীরা টেরিজা মে যেখানে বৈঠক করছিলেন সেখানে ঢোকার চেষ্টা চালায়। পুলিশ এসময় তাদের বাধা দেয়।চার্চের ভেতরের সদর দরজার পাশাপাশি বাইরে থাকা গাড়িটিও চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে পুলিশ। কী করছেন উনি এখানে? তার উচিৎ নিজের বিলাসবহুল বাড়িতে ফিরে যাওয়া,” ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন ওই বিক্ষোভকারী।টেরিজা এর আগে শুক্রবার সকালে চেলসি অ্যান্ড ওয়েস্টমিনস্টার হাসপাতালে গিয়ে মে আহতদের পাশাপাশি সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ঘণ্টাখানেক সময় কাটান। তিনি এদিন হোয়াইট হলে সরকারি সিভিল কন্টিনজেন্সি কমিটির বৈঠকেও সভাপতিত্ব করেন।সন্ত্রাসী হামলা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এই কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।তিন দিন আগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কেবল দমকল বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন টেরিজা মে। সেদিন ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা না বলায় তার প্রতি রুষ্ট হন স্থানীয়রা।উল্টোদিকে লেবার নেতা জেরেমি করবিন এবং লন্ডনের মেয়র সাদিক খান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে থেকে তাদের মন জয় করে নেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।রানি এলিজাবেথও ঘটনাস্থলের কাছাকাছি একটি স্পোর্টস সেন্টারে গিয়ে গ্রেনফেল টাওয়ার অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত, স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয়দের সঙ্গে দেখা করেছেন।
সাধারণ জনগণকে পাশ কাটিয়ে কেবল উদ্ধারকাজে দায়িত্বরত সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার এ ঘটনাটোরি পার্টির অভ্যন্তরেও ছায়া ফেলেছে; ক্ষমতাসীন দলের অনেক সদস্য টেরিজা মেকে বিরোধী নেতা করবিনের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন।“আশ্চর্য, গত ৫-৬ সপ্তাহ ধরে মিসেস মে যে কী করছেন! একটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতেও তিনি তার মানবিকতার প্রকাশ ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে জরুরি দায়িত্বে নিয়োজিতদের সঙ্গে দেখা করেছেন, এটা যে ভালো কাজ তাতে কোনো সন্দেহ নেই; কিন্তু তার অবশ্যই করবিনের মতো স্থানীয়দের সঙ্গেও দেখা করা উচিত ছিল,” বলেন কনজারভেটিভ দলের সাবেক মন্ত্রী মাইকেল পোর্টিলো।অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনায় ব্যথিত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যা যা করণীয় সব করছেন। হাউজ অব কমন্সের নেতা আন্দ্রে লিডসাম এদেরই একজন। লিডসাম নিজেও শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে গিয়ে স্থানীয়দের রোষের মুখে পড়েন।তিনি বলেন, “সত্যিটা হচ্ছে, হাউজ অব কমন্সের প্রত্যেক সদস্য, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে তার অধঃস্তন সরকারের সব কর্মকর্তায় এ ঘটনায় ভয়াবহ ব্যথিত; আমরা সবাই মিলে সর্বোচ্চটাই করার চেষ্টা করছি।ওই ব্যক্তি বলেন, দক্ষিণ লন্ডনের ক্যাম্বারওয়েলের লাকানাল হাউজে সংঘটিত অগ্নিকান্ডের পর যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়িত হলে গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুনের ঘটনা ঘটত না।“কীভাবে সাদিক খান এবং করবিন ঘটনাস্থলে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারলেন, যখন পুলিশ পরিবেষ্টিত হয়েও মে ক্ষতিগ্রস্ত একজনের সঙ্গেও কিংবা তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ব্যর্থ হলেন,” ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন ওই ব্যক্তি। তবে রক্ষণশীল দলের কোনো কোনো নেতা টেরিজা মের পক্ষ নিয়ে বলছেন, যথাযথ নিরাপত্তার অভাবেই প্রধানমন্ত্রী অগ্নিকান্ডের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেননি। সাবেক আবাসন মন্ত্রী মার্ক প্রিস্ক বিবিসিকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাননি তার সূত্র ধরে গণমাধ্যমের পুরো চাপ শোকে কাতর পরিবারগুলোর উপর পড়ুক, যারা খুবই দুঃসহ দিন পার করছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এগুলো সবই ঘটনার দায় থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টা। রানি এলিজাবেথ যদি ক্ষতিগ্রস্তদের এলাকায় গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তাহলে মে পারবেন না কেন?