রাশিয়ার বিমান হামলায় কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত ২৮ মে সিরিয়ায় রাকা শহরের দক্ষিণাংশে রাশিয়া ওই বিমান হামলা চালায়। এই হামলায় ৩ শ’ ৩০ জন আইএস সদস্য নিহত হওয়ার খবর জানালেও বাগদাদির নিহত হওয়ার ব্যাপারে রাশিয়া এখনও সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারছে না বলে জানিয়েছে বিবিসি। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সিরিয়ায় রাশিয়ার একটি বিমান হামলায় বাগদাদি নিহত হয়েছেন এমন ধারণার ভিত্তিতে তদন্তকাজ চলছে।
মন্ত্রণালয় থেকে আরও জানানো হয়, জঙ্গি দলটির কথিত রাজধানী রাকায় আইএস’র সামরিক পর্ষদ বৈঠকে মিলিত হলে এই হামলা চালানো হয়। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা স্পুটনিক-এ প্রকাশিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, রাকার সেই বৈঠকটিতে ৩০ জন আইএস কমান্ডার এবং ৩০০ জনের মতো জঙ্গি উপস্থিত ছিলো।
“প্রাপ্ত তথ্য বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা যায়, আইএস নেতা ইব্রাহিম আবু-বকর আল-বাগদাদি, যিনি সেই হামলায় নিহত হন, বৈঠকটিতে উপস্থিত ছিলেন।”
এর আগেও বেশ কয়েকবার বাগদাদিকে হত্যার খবর প্রচার করা হয়েছিলো। আল কায়েদার একটি দলছুট অংশকে নিয়ে ২০০২ সালের দিকে ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক (আইএসআই) গড়ে তোলেন বাগদাদি। তার নেতৃত্বেই অল্প কিছুদিনের মধ্যে ক্ষমতাশালী সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয় আইএসআই।
২০১৪ সালের ২৯ জুন সিরিয়ার আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকা এবং ইরাকের মধ্যাঞ্চলীয় বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন বাগদাদি, যার খলিফা তিনি নিজে। সিরিয়ার রাকা শহরকে ঘোষণা করা হয় সেই খিলাফতের রাজধানী।
এর মধ্য দিয়ে গঠিত হয় ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ত বা আইএসআইএল, যা সংক্ষেপে আইএস নামে পরিচিতি পায়। অবশ্য নিজেদের তারা বলে দায়েশ।
বেশকিছু সময় ধরেই বাগদাদির অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। যদিও ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইরাকের মসুলে বাগদাদি ছিলেন বলে ধারণা। তখন মসুল দখলমুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট অভিযান শুরু করে।
পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইরাকি নাগরিক বাগদাদির প্রকৃত নাম ইব্রাহিম আল-সামারাই। তাকে ধরিয়ে দিতে গতবছর আড়াই কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র।
কথিত আইএস প্রতিষ্ঠার ঘোষণার দেওয়ার পর শুধুমাত্র ২০১৪ সালের জুনেই জনসম্মুখে এসেছিলেন বাগদাদি। তখন একটি ভিডিওতে বক্তব্য দিতে দেখা যায় তাকে। মসুল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
এরপর থেকে জঙ্গি দলটি তাদের দখলকৃত ভূখন্ডের উল্লেখযোগ্য অংশ হারিয়েছে। রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন বাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিমান হামলাতেও চাপের মুখে কথিত আইএস।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন গত মার্চে দাবি করেছিলেন, বাগদাদির ‘প্রায় সকল’ ডেপুটি’দেরই হত্যা করা হয়েছে। বাগদাদিকেও একই ভাগ্য বরণ করে নিতে হবে, এটা শুধু কিছু সময়ের ব্যাপার মাত্র।