দেশের পার্বত্য জেলাগুলোতে পাহাড় ধসের বিপর্যয়ের সময় বিদেশ সফরে থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছে বিএনপি। পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুইডেন সফরের সমালোচনা করে শুক্রবার সকালে রাজধানীতে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১৫৫ জন লোক মারা গেছেন। আর্মির লোকজনও মারা গেছেন। এখনো অনেক নিখোঁজ রয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের নেত্রী এখন প্লেজার ট্রিপে আছেন, আনন্দভ্রমণে আছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, তাঁর দেশের মানুষের প্রতি কোনো মমতা নেই। তিনি বলেন, তিনি নাকি দেশের মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। দেশের মানুষ জীবন দিচ্ছে, তিনি ভ্রমণ করছেন। এটায় কী প্রমাণিত হয়? তিনি কি দেশের মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত?এ সময় রিজভী ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত সরকারের সময়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দেশে যে অবস্থা বিরাজমান, মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশে অবিলম্বে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়নি। কেউ ওই নির্বাচনের স্বীকৃতি দেয়নি, একমাত্র আমাদের প্রতিবেশী দিয়েছে। কিন্তু এবার তাদের সুরও বদল হয়েছে। তারা বুঝেছে, তারা ভুল করেছে, ঠিক করেনি। সে জন্য এবার বিএনপি যদি না যায়, ২০ দল যদি না যায়, এ দেশের কোনো নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগ একলা নির্বাচন করতে পারবে না।তিনি বলেন, হায় প্রধানমন্ত্রী! কী বিচিত্র এই দেশ। আপনি আনন্দ ভ্রমণে আজকে ইউরোপে অবস্থান করছেন। আর আপনার পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটির লোক, পাহাড় বিধবস্ত হয়ে যারা বেঁচে আছেন তারা হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
হাসপাতালে বিদ্যুৎ নাই, আলো নাই, আজকে তারা ধুকে ধুকে মরছে। আর আপনি সেখানে (সুইডেন) অবস্থান করছেন।বর্তমান সরকারকে মানবতাবিরোধী সরকার আখ্যায়িত করে তিনি বলেন,“এই সরকার দুর্বিনীত সরকার, গণবিরোধী সরকার, মানববিরোধী সরকার। মানবতাবিরোধী সরকার থাকলেই কেবলমাত্র এটা সম্ভব হয়। আজকে দেশের মধ্যে এত বড় বিপর্যয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারতেন না।পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক মৃত্যুর ঘটনার সময়ে প্রধানমন্ত্রী পূর্ব নির্ধারিত সফরে গিয়ে বর্তমানে সুইডেন রয়েছেন। এই সফর বাতিল না করার সমালোচনায় বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক ইফতার অনুষ্ঠানে রিজভীর দলনেত্রী খালেদা জিয়াও একে ‘আনন্দ ভ্রমণ’ বলে আখ্যায়িত করেন।এর জবাবে শুক্রবার সকালে কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে ‘অন্ধ আক্রোশের কুরুচিপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ’ বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের।জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির কারাবন্দি ভাইস চেয়ারম্যান রবকতউল্লাহ বুলুর মুক্তির দাবিতে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে ‘বরকতউল্লাহ বুলু মুক্তি পরিষদ’।
এতে আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, আগামী নির্বাচন হতে হবে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। যে নির্বাচনে মধ্য রাতের মধ্যে ব্যালট বাক্স পূর্ণ হয়ে যায় সেই নির্বাচন হবে না। যে নির্বাচনে ব্যালট পেপার ধানক্ষেতে পাওয়া যায়, সেই নির্বাচন হবে না।অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সহায়ক সরকারের অধীনেই হবে। তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) যদি মনে করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো তারা নির্বাচন করে সুখস্বপ্নে অবারিত ক্ষমতা ভোগ করবে, আর সেই সুযোগ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ বাংলার মাটিতে পাবে না।দলের ভাইস চেয়ারম্যান কারাবন্দি নেতা বরকতউল্লাহ বুলুর অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান তিনি।বুলু মুক্তি পরিষদের সভাপতি মাসুদ রানার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরমান হোসেন আরমান এবং বিএনপির আমিনুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।